থাইল্যান্ডের রাজা মাহা ভাজিরালংকর্নের রাজতন্ত্রকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজধানী ব্যাংককে মিছিল করেছে হাজার হাজার প্রতিবাদকারী। গতকাল রোববার রাস্তায় নেমে আসা প্রতিবাদকারীরা রাজার ক্ষমতা খর্বকরাসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়ে শ্লোগান দেয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, থাইল্যান্ডের রাজপ্রাসাদ ও সামরিক কর্তৃত্বাধীন প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুই মাস ধরে চলা বিক্ষোভ, সমাবেশের পর প্রতিবাদকারীরা আরও সাহসী হয়ে উঠেছে। রাজতন্ত্রের সমালোচনার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করছে তারা, থাইল্যান্ডের আইন অনুযায়ী যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই প্রতিবাদের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে থাই রাজপ্রাসাদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এই মূহুর্তে রাজা ভাজিরালংকর্ন দেশে নেই। খবর বিডিনিউজের। বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় শত শত নিরস্ত্র পুলিশ তাদের গতিরোধ করে। রয়্যাল গার্ড পুলিশ তাদের দাবিগুলো সদরদপ্তরে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে, এটি জানিয়ে প্রতিবাদের নেতারা ‘বিজয়’ ঘোষণা করেন। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ কোনো মন্তব্য করেনি। উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে অন্যতম নেতা পারিত ‘পেঙ্গুইন’ চিওয়ারাক বলেন, দুই দিনে আমাদের সবচেয়ে বড় বিজয় এটিই যে আমাদের মতো সাধারণ মানুষও যে রাজার কাছে চিঠি পাঠাতে পারে সেটি দেখানো গেছে।
প্রতিবাদী নেতাদের মধ্যে অন্যতম আরেকজন জানিয়েছেন, রাজা ভাজিরালংকর্নের কাছে দেওয়ার জন্য অনেকগুলো দাবি সম্বলিত একটি চিঠি রয়্যাল গার্ড পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন তারা। পানুসাইয়া সিথিজিরাওয়াত্তানাকুল সাংবাদিকদের জানান, চিঠিটি পুলিশ সদরদপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রতিবাদকারীদের দাবির মধ্যে রাজতন্ত্রের ক্ষমতা খর্ব করাসহ সাবেক জান্তা প্রধান প্রায়ুথ চান ওচাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণের পাশাপাশি নতুন সংবিধান ও নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। শনিবার ব্যাংককের একটি পার্কে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ সমাবেশে হাজার হাজার প্রতিবাদকারী এসব দাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে শ্লোগান দেয়। তারা রাতভর এই পার্কে অবস্থান করে ভোরে সূর্য ওঠার পর রাজধানীর গ্রান্ড প্যালেসের কাছে সানাম লুয়ং (রয়্যাল ফিল্ড) এলাকায় একটি ফলক স্থাপন করে।
এই ফলকে লেখা হয়েছে, ‘এই স্থানে জনতা তাদের মনোভাব ব্যক্ত করেছে, এই দেশটি জনগণের এবং এটি রাজার সম্পত্তি নয় যেমনটি বলে তারা আমাদের প্রতারিত করছে।’ পুলিশ কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করেনি। সরকারের মুখপাত্র আনুচা বুরাপাচাইশ্রি জানিয়েছেন, পুলিশ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে সহিংস কোনো পদক্ষেপ নিবে না এবং বেআইনি বক্তব্যের বিষয়ে কোনো মামলা করবে কিনা তা পুলিশই ঠিক করবে। ‘সামন্ততন্ত্র নিপাত যাক, জনগণ দীর্ঘজীবী হোক,’ সমাবেশ ও মিছিলে এমন শ্লোগান দিয়েছেন প্রতিবাদকারীরা।
রোববার প্রতিবাদকারীরা যে ফলক স্থাপন করেছে তেমন ধরনের একটা ফলক কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই ২০১৭ সালে রাজকীয় প্রাসাদের সামনে থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। ভাজিরালংকর্ন সিংহাসনের বসার পরই কাজটি করা হয়। ১৯৩২ সালে একচ্ছত্র রাজতন্ত্রের অবসানের স্মরণে ওই ফলকটি স্থাপন করা হয়েছিল, সেটি সরিয়ে রাজতন্ত্রপন্থি শ্লোগান সম্বলিত আরেকটি ফলক সেখানে স্থাপন করা হয়। আগামী বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টের সামনে আরেকটি প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।