বিএনপি নির্বাচনে এলে তফসিল পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনে ৪৪টা দল নিবন্ধিত আছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা–না করার এখতিয়ার সবার আছে। যদি কেউ নির্বাচনে আসে বা নির্বাচনের সময় নিয়ে কারো কথা থাকে তবে সেক্ষেত্রে আমরা বিবেচনা করবো। সেই বিবেচনা করার মত যথেষ্ট সময় আমাদের আছে। তবে আমরা এখনও কোনো দল বা কারো কাছ থেকে কোনো আবেদন পাইনি। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম জেলা রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্যসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
আগের জাতীয় নির্বাচনগুলোর মত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতা দিতে সেনা মোতায়েনের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। ইসি আনিছুর বলেন, আগের সব জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সামরিক বাহিনী মোতায়েন ছিল। এবারও একই ধারায় সামরিক বাহিনী মোতায়েনের জন্য প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচনী আচরণবিধি যাতে ভঙ্গ না হয়, সে জন্য আট শতাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নামছেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা এবার ফুলটাইম কাজ করবেন। তারা যেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে গিয়েছিলাম। তার সম্মতিও পাওয়া গেছে। বিএনপি নির্বাচনে না গেলে নির্বাচনের সৌন্দর্যহানি হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আনিছুর রহমান বলেন, কেউ যদি না আসে, আমি কি জোর করে আনতে পারব? আমরা তাদের চারবার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এ মাসের ৪ তারিখেও নিবন্ধিত সব দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। ২৬টি দল এসেছিল, ১৮টি আসেনি। না এলে তো জোর করে আনার সুযোগ নেই।
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, আমি কোনো সময় দেখিনি রাতে ভোট হয়েছে। ভোট দিনে হয় এবং দিনের ভোট দিনেই অনুষ্ঠিত হবে। আমরা এক বছর ৯ মাস দায়িত্বে আছি। ভোট দিনে হয়েছে, দিনেই হবে। ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য রিটার্নিং অফিসার, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের যথাযথ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, ভোটারদের আনা কিংবা উপস্থিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নয়। এটা যারা নির্বাচন করবেন সেই প্রার্থী, নেতাকর্মী ও সমর্থকদের করতে হবে। ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর শঙ্কা প্রকাশ নিয়ে কমিশনের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে এখনো কেউ শঙ্কা প্রকাশ করেনি। এরই মধ্যে ছোট–বড় বিভিন্ন দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। এতে মনে হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে অনেকেই মাঠে থাকবেন। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এই নির্বাচন শুধু আমাদের চোখ দিয়ে নয় বিশ্ববাসীও দেখছে। কাজেই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার কোনো বিকল্প নাই।
আনিছুর রহমান বলেন, আমরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচনী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসেছি। আমাদের নির্দেশনায় বলেছি, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে হবে। কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া যাবে না। কোনো পক্ষপাতমূলক আচরণ করা যাবে না। কোনো শিথিলতা দেখানো যাবে না। এখানে যে বা যারা দায়িত্ব পালন করবেন, যথাযথভাবে করতে হবে। যদি কারও কোনো দায়িত্ব পালনে পক্ষপাতমূলক আচরণ থাকে অর্থাৎ নিরপেক্ষমূলক আচরণ না করায় নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়, এর জন্য যে দায়ী থাকবেন তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপির নির্বাচনে বাধাদান প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসি আনিছুর রহমান বলেন, নির্বাচন বানচাল করা বা অন্যকে নির্বাচন করতে না দেওয়ার অধিকার আইন কাউকে দেয়নি কমিশন। এরকম কেউ করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ নির্বাচন না করার অধিকার তাদের একক কিংবা দলীয় সিদ্ধান্ত। তাই বলে কাউকে বাধা দেওয়া যাবে না। ভোটের পরিবেশ সৃষ্টিতে যা যা দরকার সেদিকে আমরা নজর দিচ্ছি।
সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না মন্তব্য করে আনিছুর রহমান নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, কমিশন বরাবরই বলে আসছে, আমরা সুষ্ঠু অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চাই। এজন্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে যা যা দরকার সবই করা হবে। তাই কোনো ধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণ করা যাবে না। সবাইকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যদি কারো পক্ষপাতমূলক আচরণে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাহলে তিনিই দায়ী থাকবেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রামের রেঞ্জ ডিআইজি নূরে আলম মিনা, বিজিবির রিজিওনাল কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজিদুর রহমান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী, চট্টগ্রাম জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ এনামুল হক ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।