বাস করতে হবে মিলেমিশে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে

আজিজা রূপা | সোমবার , ১ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

মন ভাঙা আর মসজিদ ভাঙা সমান। তেমন মন্দির ভাঙাও সমান। এখন আসুন মন কখন ভাঙে? উত্তর : আপনার অন্তরের অন্তস্থলে বিনা কারণে আঘাত করলে, আপনার ভালোবাসাকে বিনা কারণে আঘাত করলে, আপনার প্রিয় বস্তু, জিনিস কিংবা মানুষটিকে আঘাত দিলে, আপনার সৃষ্টিকে আঘাত করলে, ভেঙ্গে দিলে। একবার স্বতন্ত্র ভাবে শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবুনতো আপনার তৈরি করা কোনো জিনিসকে যদি কেউ ভেঙেচুরে তছনছ করে দিয়ে যায়। আপনার কেমন লাগবে? অবশ্যই তাকে আপনি লানত দিবেন। মারাত্মকভাবে ক্ষেপে গিয়ে অবশ্যই তাকে আপনি মনের সর্বোচ্চ গভীর থেকে গালি দিবেন এমনকি আপনি তার জন্য সবচেয়ে কঠিন শাস্তিটা বরাদ্দ করবেন। ঠিক তেমনি সৃৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্টির সবচেয়ে বেশি মানুষকে ভালোবাসেন। এই মানুষ যখন অমানুষের আঘাতে জর্জরিত হয় তখন সেই সৃষ্টিকর্তাই সর্বোচ্চ নারাজ হোন। একটা বিশ্বাস সর্বত্র বিরাজমান। আর তা আমরা বিভিন্নভাবে বিভিন্নরূপে করে থাকি। আল্লাহ বলে স্মরণ করি কিংবা ঈশ্বর বলে। আমরা ভুলে যাই বিচারক একজন। যে যার জায়গা থেকে তার বিশ্বাসের প্রকাশ ঘটাক না। ভুলত্রুটি হলে তিনিইতো আছেন বিচার করার। তিনি যদি তাঁর বিচারের ভার না নিতেন, সমাধানের ভার না নিতেন তাহলে এত নবীরাসূল পৃথিবীতে আসতো না। এত দেবদেবী আসতো না। এত অলৌকিক ঘটনা ঘটতো না। তাহলে আমদের কেন বিচারক হয়ে অন্যকে তার বিশ্বাসের জায়গায় থেকে চাপ প্রয়োগে সরিয়ে আনার এত প্রবণতা। কেন অন্যের বিশ্বাসকে মিথ্যা প্রমাণ করার এত আকুলতা। আমাদেরতো সেই দায়িত্ব তিনি দেননি। আমাদের বলেছেন মানবধর্ম বজায় রেখে, হিংসা, হানাহানি, মারামারি, আক্রোশ না করে মিলেমিশে চলে শান্তি বজায় রাখতে।
ইসলামকে নিয়ে বেশি স্টাডি করতে হবে না। বিদায় হজের ভাষণটা পড়ে নিলেই বুঝবেন। ধর্ম প্রচারের দায়িত্ব হযরত মুহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত। এরপর কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভালোবাসা, সৌহার্দ্যতা, সমপ্রীতি মনে রেখে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই একজন মুসলিমের কাজ। আপনি মানুষকেই ভালোবাসতে পারলেন না। সৃষ্টিকর্তাকে কিভাবে ভালোবাসবেন! পৃথিবীটা বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। সেই বিশ্বাসের ভিত সৃষ্টিকর্তা এক এক ধর্মাবলম্বীদের এক এক ভাবে প্রমাণ করে দিয়েছেন। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই ভালোবাসে সৃষ্টি কর্তাকে। যার যার বিশ্বাস তার একান্ত নিজের। প্রত্যেকের উদ্দেশ্য স্রষ্টাকে খোঁজা। স্রষ্টাকে নির্ভৃতে নিজের কষ্টের কথা বলা। এটা যার যার একান্ত ব্যাপার। স্রষ্টাকে খুঁজতে গিয়ে তো অন্য ধর্মাবলম্বীরা একজোট হয়ে কোনো মুসলিমকে আঘাত করছে না কিংবা মুসলিমদের প্রেসার ক্রিয়েট করছে না তাদের ধর্মে যোগ দিতে। হয়ত কোনো একজন একটা ভুল করেই ফেলেছে। আমরাতো এখনও জানি না যে করেছে সে আসলে কোন ধর্মের? হয়ত সে আমাদের দেশের শান্তি নষ্ট করতে এই কাজ করেছে। এটাতো দেখার জন্য সরকার রয়েছে। প্রশাসন রয়েছে। তাহলে আমরা কেন এত অরাজকতা সৃষ্টি করছি! কেন ভুলে যান হাশরের ময়দানে যার যার জবাবদিহিতা তাকে করতে হবে। তাই আপনার ধর্মটাই শুধু আপনি বুঝেন না। আপনি পালন করেন। সে সময় নবীরাসূলদের পাঠানো হয়েছিল মূলত উগ্রবাদিতা বন্ধ করার জন্য। মারামারি হানাহানি বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। এখনতো অন্য ধর্মাবলম্বীরা একজোট হয়ে উগ্রতা করছে না। তাহলে আমরা কেন অশান্তি সৃষ্টি করবো! একবার ভাবুনতো আজ এই সংখ্যালঘু হিন্দু বাংলাদেশে আমরা যদি তাদের আঘাতের পর আঘাত করি, তাহলে হয়ত আমার আপানার বা অন্য কারো আত্মীয় বা স্বজন হয়ত অন্য কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু প্রধান বা অন্য কোনো ধর্মপ্রধান দেশে বাস করছে- সেওতো এসব ঘটনার আক্রোশের শিকার হতে পারে। তাই দয়া করে প্রতিহিংসা ত্যাগ করে, ভুল ক্ষমা করে দিয়ে সমপ্রতি বজায় রাখুন।”আল্লাহ নিশ্চয়ই ক্ষমাদানকরীকে পছন্দ করেন”। দেশ ও সমাজ এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রত্যেকে যে যার জায়গা থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করুন। মনে রাখবেন সব ধর্মের বড় ধর্ম মানব ধর্ম। জীবে দয়া করুন। তাহলেই স্রষ্টা, আল্লাহ খুশি থাকবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপথশিশুদের দিকে একটু নজর দেয়া চাই
পরবর্তী নিবন্ধসরল প্রশ্ন