এক সময় কলেজে যেতাম পড়তে, আর এখন যাই পড়াতে। বাবার স্বপ্ন ছিল কলেজে শিক্ষকতা করি। আমিও তেমনটা লালন করতাম। কিন্তু বাবার স্বপ্ন বাস্তবতা রূপ পেলেও তিনি দেখে যেতে পারলেন না। আমার বাবা গ্রামে বাস করলেও মানসিকতায় ছিলেন আধুনিক। তাঁর ধ্যান-ধারণায় ছিল- মেয়েরা হবে স্বাধীনচেতা, সম্মানজনক পেশায় থেকে হবে স্বাবলম্বী। সেজন্য বাবার নয় সন্তান আজ স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তবে আমার আজকের এই অবস্থানের জন্য বড় ভাইয়ের (ওমরগণি এমইএস কলেজের অধ্যক্ষ আ ন ম সরওয়ার আলম) অবদান কম নয়। বাবার স্বপ্নের পথ মসৃণ হয়েছে তাঁরই নির্দেশনায়। কখনও কোথাও বেড়াতে গেলে বাবার কথা মনে পড়ে যায়। কে মুঠোফোনে এখন জিজ্ঞেস করবে-‘তোমরা ঠিকমতো পৌঁছেছ তো?’ কেউ তো আর বলবে না-‘জানালার বাইরে হাত রাখিস না। সবসময় খরচের বাইরে কিছু টাকা আরেকখানে রাখবে, বিপদে কাজে লাগবে।’ ২০১০ সালের ২৬ ডিসেম্বর বাবা ইন্তেকাল করেন। সেদিন স্বামীসহ কক্সবাজার থেকে ফিরছিলাম। সেদিনও বাবা অসুস্থ অবস্থায় মাকে নির্দেশ দিলেন-‘ওরা কদ্দূর এসেছে জিজ্ঞেস করো।’ এ যেন সন্তান আর পিতার বন্ধন। বাসায় ফেরার ঘন্টাখানেকের মধ্যে বাবা মায়ার বন্ধন ছেড়ে চলে গেলেন ওপারে। মৃত্যুদূত মনে হয় সেভাবেই এল-তাঁর সন্তানেরা যেন আশেপাশে থাকে। বাবা ভালো থেকো, তোমার স্বপ্নকে যেন আরো বহুদূর নিয়ে যেতে পারি।