দ্রব্যমূল্য ওঠানামার পেছনে বাজারে ‘একটি সিন্ডিকেট’ কাজ করে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সেই চক্র ভাঙতে সরকার ‘কাজ করছে’। বাজারে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখনই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর এমন মন্তব্য এল।
শুক্রবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একজন প্রশ্ন করেছিলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে ওই চক্রের কাছে সরকার হেরে যাচ্ছে কি না। উত্তরে কাদের বলেন, দেখুন একটা সিন্ডিকেট সবসময় কাজ করে। সিন্ডিকেটের কাছে হেরে যাওয়া, কথাটা ঠিক নয়। সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে কাজ করছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতির দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আপনি প্রতিবেশী সব দেশের দিকে তাকান, এই করোনা পরিস্থিতিতে বাজারমূল্য কোথাও আমদানি-রপ্তানিতে আগের পর্যায়ে নেই। এখানে উৎপাদনেরও একটা ব্যাপার আছে।
তিনি বলেন, পেঁয়াজ যদি আমাদের দেশে ঘাটতি থাকে, সেটা আমরা কাছের দেশ ভারত থেকে আনি। আমাদের সরকারের চেষ্টার ফলে ভারতীয় পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও ওঠানামা করবে। এখন বর্ষা, এসময়ে একটু দ্রব্যমূল্য বাড়ে, আবারও এগুলো ঠিক হয়ে আসে। খবর বিডিনিউজের।
দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, একটা কথা বলা হয়, এতদিন সব সাংগঠনিক কার্যক্রম নাকি বন্ধ ছিল। এ কথা ঠিক নয়। সাত মাস ধরেই আমাদের রাজনৈতিক সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিল। বন্যা মোকাবিলা, ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবিলায় আমাদের নেতাকর্মীরা সারাদেশে সক্রিয় ছিল। আওয়ামী লীগ কোথাও অনুপস্থিত ছিল না।
তিনি বলেন, আমাদের সহযোগী সংগঠনগুলো কৃষকদের ধান কেটে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। এগুলো তো আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের বাইরে নয়। এগুলো আমরা আমাদের দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে করেছি। আপনি শুধু এইটুকু বলতে পারেন যে, করোনাকালে আমাদের কমিটি গঠন প্রক্রিয়াটা বন্ধ ছিল।
সরকার কোনো অপরাধীকে ছাড় দিচ্ছে না মন্তব্য করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, এই যে ধর্ষণবিরোধী, নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন, সামাজিক আন্দোলন, সেখানেও আমাদের পার্টি আছে। ধর্ষণ-নারী নির্যাতনের সঙ্গে যারাই জড়িত, কোনো অপরাধীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড় দেননি। কোনো প্রকার আপস করা হয়নি।
তিনি বলেন, ব্রিটেনের মতো দেশে ৫৫ হাজার নারী ধর্ষিত, নির্যাতিত হয়েছে। এবং করোনার জন্য সারাবিশ্বে পারিবারিক সহিংসতা বেড়ে গেছে। নারীরা বেশি শিকার হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ ব্যতিক্রম নয়। আমাদের দেশের হিসাবে এক বছরে এক হাজার ধর্ষণ-নির্যাতনের কথা আপনি আনতে পারেন। কিন্তু ব্রিটেনের মত দেশে এই যে ৫৫ হাজার নারী নির্যাতিত হয়েছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকারের পদত্যাগের দাবি কেউ করেনি।
বিএনপির আন্দোলনের আহ্বান নিয়ে কটাক্ষ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা বারবার প্রত্যাখাত হয়ে বারবার বিফ্রিং করে আন্দোলনের ডাক দিচ্ছেন। পরীক্ষার পরে আন্দোলন, রোজার ঈদের পরে আন্দোলন, কখনো কোরবানির পরে আন্দোলন; কত রোজা গেল, ঈদ কত গেল, কত পরীক্ষা চলে গেল, এই বছর না ওই বছর, আন্দোলন করে বিএনপি। আজকে বিএনপি মহাসচিবের কাছে জানতে চাই, সাংবাদিকদেরও বলতে চাই, আপনারা কি বিশ্বাস করেন, যে বিএনপির আন্দোলনের হাঁকডাকে আষাঢ়ে তর্জন-গর্জেই সার?
তিনি বলেন, বেগম জিয়াকে মুক্ত করার জন্য এই বিএনপি ঢাকা মহানগরীতে একটা বড় বিক্ষোভ সমাবেশ করতে পারেনি। শেখ হাসিনার মানবিকতা, উদারতায় বেগম জিয়ার বয়সজনিত বিষয়টি চিন্তা করে কারাদণ্ডাদেশ স্থগিত করা হয়েছে। এটি বিএনপির আন্দোলনের ফসল নয়, এটা শেখ হাসিনার মানবিকতা এবং উদারতার দৃষ্টান্ত। এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।