প্রতিনিয়ত ধরা পড়ছে মাদক কারবারিরা। তবু থেমে নেই নিত্য নতুন মাদকের আমদানি। চট্টগ্রামের পাশাপাশি চলছে সারা দেশে। ২০১৮ সালে সরকার ইয়াবাসহ সকল মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এ সময় মাদক পাচার কিছুটা কমে আসে। কিন্তু কিছুদিন পরে বাজারে দেখা যাচ্ছে পুরনো মাদকের পাশাপাশি নতুন মাদকের দৌরাত্ম্য। মাদক কারবারিদের এসব চক্র এখন লেনদেন করছে মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইনে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, কিছুই তাদের নজরদারির বাইরে নেই। যারা নতুন মাদক নিয়ে আসার চেষ্টা করেছে, তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চীন ও থাইল্যান্ডের কড়া অবস্থানের কারণে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা সরবরাহ বন্ধ হয়েছে দেশ দুটিতে। এরপর থেকে মিয়ানমারের মাদক কারবারিদের বড় বাজার হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ইয়াবার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত অবস্থানের কারণে দীর্ঘদিন হলো কারবারিরা সুবিধা করতে পারছিল না। এজন্য তারা চেষ্টায় ছিল নতুন মাদক বাজারে আনার। এ তালিকায় সদ্য যোগ হয়েছে ম্যাজিক মাশরুম, ডায়মিথাইলট্রিপ্টামাইন (ডিএমটি), লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড (এলএসডি), ক্রিস্টাল মেথ বা আইস বা মেথামফেটামিন ও স্কুফ সিরাপ।
২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আইস পিলসহ প্রথমবারের মতো এক মাদক ব্যবসায়িকে গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। বিভিন্ন কেমিক্যালের বিক্রিয়া ঘটিয়ে তৈরি করা এই মাদক ব্যয়বহুল। এক গ্রামের দাম ৭-১০ হাজার টাকা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটোয়ারী জানিয়েছেন, ইয়াবা তৈরিতে ব্যবহৃত মেথামফেটামিনের সবচেয়ে বিশুদ্ধ অবস্থা আইস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইয়াবা আসক্তদের শরীরে একসময় অনেকগুলো ইয়াবা সেবনের পরেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। তখন তারা সরাসরি মেথামফেটামিন গ্রহণ করে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আইস উদ্ধার হয়েছে।
এলএসডি (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড) এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে পাওয়া যায়নি। অত্যন্ত দামি এ মাদক ঢাকায় অনলাইনে বিক্রি করত ১৫টি গ্রুপ। এছাড়া গত জুনে দেশে উদ্ধার হয় ডায়মিথাইলট্রিপ্টামাইন বা ডিএমটি। এলএসডির চেয়েও ভয়ংকর এই মাদক। ম্যাজিক মাশরুমের প্রতিটি বারে ২৪টি স্লাইস থাকে। এটি কেক ও চকলেট মিঙ অবস্থায় সেবন করা হয়। এছাড়া পাউডার ও ক্যাপসুল হিসেবেও পাওয়া যায়।
জানা গেছে, দেশে এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ২৭ ধরনের মাদক। নিয়মিত সেবনের তালিকায় ১৮ ধরনের মাদক বেশি। সবচেয়ে বেশি সেবন হচ্ছে ইয়াবা ও গাঁজা।
২০২০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন র্যাবের মহাপরিচালক ও বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ বলেছিলেন, দেশে ৮০ লাখ মাদকসেবী রয়েছে। তারা প্রতিদিন প্রায় ২৫০ কোটি টাকা মাদকের পেছনে খরচ করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোতে মাদকের প্রসার না কমলে বাংলাদেশেও এর ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। এ নিয়ে নীতিনির্ধারকদের একযোগে পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।