বাকল তুলে বৃক্ষ নিধন!

কাটা হয়েছে সৌন্দর্যবর্ধনের জাকারান্ডা খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | বুধবার , ১ মার্চ, ২০২৩ at ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়িতে গাছের বাকল বা ছাল তুলে বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে। বাকল তুলে ফেলায় বৃক্ষগুলো ধীরে ধীরে মরে যায়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন এর সাথে জড়িত।

সরেজমিনে খাগড়াছড়িপানছড়ি সড়কে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের গিরিফুল এলাকা থেকে গাছবান শিবমন্দির এলাকা পর্যন্ত অন্তত ৩০টি রেইনট্রির বাকল ৩ থেকে ৪ ঈঞ্চি পুরু করে তুলে ফেলা হয়েছে। এতে গাছগুলো ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি গাছ মরে গেছে। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে গাছবান এলাকার শিবমন্দিরের দূরত্ব ৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে সড়কের গিরিফুল এলাকায় ৮টি গাছের বাকল তুলে ফেলায় গাছগুলো মরে গেছে। এছাড়া কুকিছড়া ব্রিজ এলাকায় ১৩টি গাছের বাকল তুলে ফেলা হয়েছে। বাকল তুলে ফেলায় গাছগুলো শুকিয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, কয়েক মাসের মধ্যে এসব গাছ মরে যাবে। এছাড়া গাছবান এলাকায় ৬টি, ছোটনালা ব্রিজ এলাকায় ১টি, ১২ নম্বর এলাকায় ২টি গাছের বাকল তুলে ফেলা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের গাছ কাটার শ্রমিকেরা গাছের ডালপালা ছাঁটার পরিবর্তে বাকল তুলে ফেলেছে। গিরিফুল এলাকায় সড়কের পাশে স্থানীয় বাসিন্দা সাচিং মারমার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, গত বছর বর্ষাকালের আগে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন এসে গাছের ডালপালা ছেঁটেছে। এর মধ্যে কয়েকটি গাছ বিদ্যুতের তারের সাথে লাগায় তারা বাকল তুলে ফেলেছে। এতে গাছগুলো ধীরে ধীরে মরে যায়।

খাগড়াছড়িপানছড়ি সড়কের পাশে কুসমতি ত্রিপুরা বাড়ি। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নতুন ঘর পেয়ে সেখানে বসবাস করছেন তিনি। তিনি জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন যারা গাছের ডালপালা কাটে তারা গাছের ছাল তুলে ফেলেছে। গাছগুলো মরে গেছে। এসব গাছ তার ঘরের উপর ভেঙে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

গিরিফুল এলাকার বাসিন্দা বাধবী চাকমা বলেন, গাছের ছাল তুলে ফেলায় গাছগুলো মরে গেছে। এখন এসব গাছ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা আছে।

এদিকে ২১ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি আলুটিলা সড়কের ৯টি সৌন্দর্যবর্ধনকারী জাকারান্ডা গাছ বিদ্যুৎ বিভাগ কেটে ফেলেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। হিল অর্কিড সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সাথোয়াই মারমা জানান, সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য জাকারান্ডা গাছ লাগানো হয়েছে। ২১ জানুয়ারি আলুটিলা এলাকায় জাকারান্ডা গাছ কেটে ফেলেছে বিদ্যুৎ বিভাগের শ্রমিকেরা। এই ঘটনায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

গাছের বাকল তুলে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী। তিনি বলেন, এভাবে গাছের বাকল তুলে বৃক্ষ নিধন অপরাধ। এ ঘটনায় বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হাওয়া উচিত। গাছের ডালপালা যাতে বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শে না যায় সেজন্য ডালপালা কাটার বিধান রয়েছে। এজন্য তাদের অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। ডালপালা না কেটে এভাবে গাছের বাকল তুলে বৃক্ষ নিধন গর্হিত অপরাধ।

সড়কের দুই পাশে রেইনট্রির মালিক খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগ। তবে এসব গাছের ডালপালা কাটার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ সড়ক বিভাগের সাথে সমন্বয় করে না বলে জানিয়েছে সওজ।

খাগড়াছড়ি সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, খাগড়াছড়িপানছড়ি সড়কের গাছের ছাল তুলে ফেলায় অনেকগুলো গাছ মরে গেছে। আমরা অজ্ঞাত ব্যক্তিকে দায়ী করে গত বছর খাগড়াছড়ি সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। সড়কের দুই পাশে গাছের মালিকানা আমাদের। এখানে গাছের ডালপালা কাটতে হলে আমাদের অনুমতি নিতে হবে। কিন্ত বিদ্যুৎ বিভাগ গাছ কাটার সময় কখনো আমাদের সাথে যোগাযোগ করে না এবং সড়ক বিভাগকে অফিসিয়ালি কোনো চিঠিও দেয় না।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাগত সরকার বলেন, গাছের ছাল তুলে গাছ কাটার কোনো নিয়ম নেই। এ ঘটনায় আমাদের গাছ কাটার কোনো শ্রমিক জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। জারাকান্ডা কাটার সাথে জড়িত শ্রমিককে চিহ্নিত করা গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গাছের ডালপালা কাটার সময় সড়ক বিভাগের সাথে সমন্বয় না করার অভিযোগ স্বীকার করেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইংল্যান্ডের বিপক্ষে আজ মাঠে নামছে তামিমরা
পরবর্তী নিবন্ধহালিশহর ও ইপিজেডে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের গণসংযোগ