‘আওয়ার লেডি অফ দ্য হোলি রোজারি ক্যাথেড্রাল চার্চ’। চট্টগ্রামের পাথরঘাটার বান্ডেল সড়কে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রাচীনতম গির্জা। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৬০০ সালে।
পর্তুগিজরা ১৫১৮ সালে সমুদ্র পথে চট্টগ্রামে আসে। ৫০০ বছরেরও বেশি আগে পর্তুগিজরা চট্টগ্রামে আসার সাথে সাথে প্রথম খ্রিস্ট ধর্মের প্রচলন হয়। ১৫৩৭ সাল থেকে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। তখন তারা খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারে বিভিন্ন জায়গায় তৈরি করে চার্চ।
পূর্ববঙ্গের প্রথম খ্রিস্ট শহীদের সমাধির ওপরেই চট্টগ্রামের ক্যাথেড্রাল গির্জা। বর্তমানে এ গির্জার নাম ‘পবিত্র জপ মালার রানি’। স্থানীয়ভাবে এটি বান্ডেল ক্যাথলিক চার্চ এবং ‘পাথরঘাটা গির্জা‘ জন নামেও পরিচিত। একসময় চট্টগ্রামকে প্রাচ্যের রানি অভিধা দিয়েছিলেন পর্তুগিজ ইতিহাসবিদ ক্যাম্পোজ। সেন্ট জন দ্য ব্যাপ্টিস্ট নামে প্রথম গির্জা স্থাপিত হয় ১৬০০ সালের সালের ২৪ জুন। ১৬০২ খ্রিস্টাব্দের ৮ নভেম্বর মগ দস্যুদের হাতে ধ্বংস হওয়ার পর ১৮৩৪ সালে পুনঃনির্মাণ করে ‘পবিত্র জপমালা রানি গির্জা‘ নামে।এবং ১৮৪৩ সালে বিশপভবনের দালানটি নির্মাণ করা হয়। এই গির্জার শেষ সংস্কার হয়েছিল ১৯৩৩ সালে। এক একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত গির্জার উপাসনালয়ে ৫০০ লোকের বসার জায়গা আছে। গির্জার দেয়ালে শোভা পাচ্ছে যীশুর ম্যূরাল ও তেল রঙে আঁকা ছবি।
এই গির্জার পূর্ব দিকে রয়েছে বাংলায় প্রথম খ্রিস্ট শহীদ ফাদার ফ্রান্সেসকো ফার্নান্দেজ এস জে এর স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। তিনি ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের টলেডোতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আরাকানীদের হাতে দাস হিসেবে আটক কিছু শিশুকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাকে বন্দী করা হয়। কারাগারে বন্দি অবস্থায় তিনি নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করে ১৬০২ খ্রিস্টাব্দের ১৪ নভেম্বর। এই গির্জার অভ্যন্তরে কবরস্থানে সাধারণ খ্রিস্টানদের পাশাপাশি এই গির্জায় দায়িত্ব পালনকারী ফাদারদের কবরও আছে। গির্জার কবরস্থানে সাদা মার্বেল পাথরে মোড়ানো স্যার হেনরি লিল্যান্ড হ্যারিসনের সমাধিটি ব্যতিক্রমধর্মী। কারণ এই সমাধিতে ভেতরে প্রবেশের জন্য সিঁড়ি রয়েছে। তিনি একজন লেখক ছিলেন। তার সমাধির এপিটাফ থেকে জানা যায় তিনি ১৮৩৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮৯২ সালের ৫ মে মাত্র ৫৫ বছর বয়সে কলেরায় ভোগে মৃত্যুবরণ করেন। কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িতদের আপনজনরা এপিটাফে তাদের হৃদয়ের অনুভূতি লিখে রাখে যা সকলের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বড়দিন উপলক্ষে পাথরঘাটায় চট্টগ্রাম ক্যাথলিক আর্চ ডায়োসিসের আর্চ বিশপের বাসভবনে আর্চ বিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার, ক্যাথেড্রাল গির্জার পাল পুরোহিত ফাদার লেনার্ড সি. রিবেরু এবং আর্চ ডাইয়োসিসান কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবগের্র সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যীশু খ্রীস্ট এই দিনে বেতলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন বলে তার অনুসারী খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটিকে ‘শুভ বড়দিন‘ হিসেবে উদযাপন করেন। তারা বিশ্বাস করেন সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচারের মাধ্যমে মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে প্রভু যিশুর পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল।