বন্দরের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে : নৌ প্রতিমন্ত্রী

চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি ফিক্সড কন্টেনার স্ক্যানার উদ্বোধন দেশ বিক্রির চুক্তি কারো সঙ্গে করিনি, করবও না

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ

নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশিবিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে এবং আরো বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা টার্মিনাল অপারেশনের জন্য ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্র সৌদি আরব বিনিয়োগ করেছে। আরো কয়েকটি দেশ বিনিয়োগের জন্য পাইপলাইনে আছে। এসব বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরো বেশি শক্তিশালী হবে। বন্দরের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম বন্দরের ৪ নং গেট সংলগ্ন বন্দর কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সংযোজিত রপ্তানিমুখী পণ্যবাহী কন্টেনার স্ক্যানার স্থাপন ও হস্তান্তরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী এনবিআর চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন সব বন্দরে স্ক্যানার বসাতে হবে। তার আন্তরিকতায় অনেক স্ক্যানার বসানো হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে রপ্তানি পণ্যের জন্য দুটি স্ক্যানার বসানোর খবর শুনে প্রধানমন্ত্রী খুশি হবেন। বন্দরের সঙ্গে কাস্টমসের বোঝাপড়ার অভাব ছিল। কয়েক বছরের অনেক সমস্যা তিনচার বছরেই সমাধান হয়েছে। এটা বড় প্রাপ্তি।

তিনি বলেন, দেশের ব্যবসায়ীরা সীমিত সময়ে মুনাফা লাভের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসছেন। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর হয়ে গেলে মেরিটাইম সেক্টরে আমরা অন্যরকম উচ্চতায় চলে যাব। বে টার্মিনালে ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ আসবে। ব্যস্ততা বেড়ে যাবে। এর জন্য অবকাঠামো দরকার। প্রধানমন্ত্রী পায়রা বন্দর করেছেন, গভীর সমুদ্রবন্দর করেছেন। মেরিটাইম সেক্টরে আমরা সি ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়েছি। ডেনমার্ক পায়রা বন্দরে বিনিয়োগ করতে চায়। সৌদি আরব আরও বিনিয়োগ করতে চায়। তারা মনে করে বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিরাপদ। দেশ বিক্রি করার চুক্তি আমরা কারো সঙ্গে করিনি, করবও না। ডিজিটাল সিস্টেমে মানুষের বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০৪১ সালে স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ব আমরা।

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (নিরাপত্তা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তফা আরিফুর রহমান খান বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে নৌবাহিনীর এরিয়া কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল খোন্দকার মিসবাহ উল আজীম, চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার ফাইজুর রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, মেট্রোপলিটন চেম্বার সভাপতি খলিলুর রহমান, বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক, ফাইভ আর অ্যাসোসিয়েটসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট রায়ান জাহিদ রহমান, বন্দর সিবিএ নেতা নায়েবুর রহমান ফটিক উপস্থিত ছিলেন।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিদেশিরা বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে। কারণ তারা জানে বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগ করলে এর ফল পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, আইএসপিএস কোড কমপ্লায়েন্স চট্টগ্রাম বন্দরের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখার জন্য আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। এ বন্দরকে আন্তর্জাতিক মহলে নিরাপদ বন্দর হিসেবে আখ্যায়িত করার নিমিত্তে আধুনিক নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি স্থাপন করাসহ যুগোপযোগী বন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। শুধু চট্টগ্রাম নয়, মংলা, পায়রা এবং অন্যান্য স্থল বন্দর ডিজিটালাইজেশন করা হচ্ছে। সেখানেও স্ক্যানার বসানো হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের গৃহীত ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সময়োপযোগী পদক্ষেপসমূহের সুফল আনয়নে বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা বহরে যুক্ত হতে যাচ্ছে রপ্তানিমুখী কন্টেনার স্ক্যানার, যা রপ্তানি পণ্যের জাহাজিকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে, বন্দরের কন্টেনার জট হ্রাস করবে, বৈধ বাণিজ্য সহজতর করবে, অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ পণ্যের রপ্তানি নিবৃত্ত করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বন্দর নিরাপত্তা সংস্থা এবং রপ্তানি সহযোগী দেশের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ও কার্যকর ব্যবস্থা বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালনে সহায়তা করবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সংরক্ষিত এলাকার অভ্যন্তরে ৪ নং ও সিপিএআর গেট সংলগ্ন এলাকায় এ স্ক্যানার দুটি স্থাপন করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ২টি রপ্তানিমুখী গেটে ২টি কন্টেনার স্ক্যানার, ২ সেট রেডিও অ্যাকটিভ পোর্টাল মনিটর এবং স্ক্যান্ড ইমেজ মনিটরিং সেন্টার ও রিয়েল টাইম সিসিটিভি ও ইমেজ মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। স্ক্যানার স্থাপনের ফলে কার্গো রপ্তানির ক্ষেত্রে কার্যকর প্রয়োগ ও স্বেচ্ছা পরিপালনের মাধ্যমে বিদ্যমান কার্গো পরীক্ষা পদ্ধতিতে প্রচলিত ব্যক্তি কর্তৃক হস্তক্ষেপ প্রতিহত করা সম্ভব হবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, বাণিজ্যিক ব্যয় হ্রাস করাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত মনিটরিং ব্যবস্থা চালু হবে।

নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতের গ্রিন পোর্ট বে টার্মিনালের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বে টার্মিনাল চালু হলে ১২ মিটার গভীরতা ও ৬ হাজার কন্টেনার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ২৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ সহজে বার্থিং করতে পারবে। ফলে সময় ও আর্থিক সাশ্রয় হবে এবং জাহাজের টার্ন এরাউন্ড টাইমও কমে আসবে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্য পরিবহনে ব্যস্ততা বেড়ে যাবে। এসব ইকুইপমেন্ট পণ্য পরিবহনে সহায়ক হবে, যা বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

এর আগে প্রতিমন্ত্রী চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটরিয়ামে বন্দরের কর্মকর্তাকর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বলেন, বন্দরের কর্মকর্তাকর্মচারীরা যে সকল দাবি দাওয়ার কথা বলছেন সেগুলো সরকারের কথা। সরকার কাউকে গৃহহীন রাখবে না। কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন, ইনসেনটিভ, হাউজ লোন, ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে সরকার কথা বলছে। আপনাদের কথা বলার প্রয়োজন নেই। পোষ্য সন্তানদের যোগ্যতা থাকলে চাকরি পাবে।

নৌ সচিব বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বন্দরে স্ক্যানার বসাতে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাই স্মার্ট গভর্ন্যান্স। এনবিআরের কাজে বন্দর সহযোগিতা করছে। ভবিষ্যতেও যদি সহযোগিতা দরকার হয় করা হবে।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর প্রথম শ্রেণির কেপিআই। বিশ্বের ১০০ শীর্ষ বন্দরে আমরা ৬৭তম। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা ও নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে বন্দর এগিয়ে চলেছে। প্রথমবারের মতো আধুনিক স্ক্যানার স্থাপন করেছি। বন্দরের পিসিটিতে সৌদিভিত্তিক রেড সি গেটওয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। বে টার্মিনালের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। স্ক্যানার দুটি কাস্টম হাউস অপারেট করবে। এর ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রপ্তানি কন্টেনার জাহাজিকরণ সম্ভব হবে। বন্দরের নিরাপত্তা ও ভাবমূর্তি বাড়বে।

প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোস্তফা আরিফুর রহমান খান জানান, বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ৮৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় সংগৃহীত এফএস৬০০০ মডেলের রেডিও অ্যাকটিভ পোর্টাল মনিটর সমৃদ্ধ এ স্ক্যানার ঘণ্টায় ১৫০টি কন্টেনার স্ক্যান করতে পারে। ইস্পাতে এঙরে অনুপ্রবেশ ক্ষমতা ৩৩০ মিলিমিটার। ডুয়েল এনার্জির এ স্ক্যানার বোথওয়ে স্ক্যানে সক্ষম। উচ্চতর স্ক্যানিংয়েও এঙরে চিত্র অবিকৃত থাকে। জৈবঅজৈব ও মধ্যবর্তী উপাদান নির্দিষ্ট রঙে চিহ্নিত করে। ফলে আইজিএম বহির্ভূত পণ্য শনাক্ত করা যাবে। ট্রেইলার চালক সরাসরি স্ক্যানিং টানেলের মধ্য দিয়ে গাড়ি চালাতে পারে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে কন্টেনার স্ক্যান হয়ে যায়। কন্টেনার নম্বরও স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত হয় স্ক্যানারে। স্থাপন করা হয়েছে ৪টি ইমেজ মনিটরিং সেন্টার ও রিয়েল টাইম সিসিটিভি সিস্টেম।

তিনি জানান, প্রকল্পটির ডিপিপি অনুমোদন হয় ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। সর্বনিম্ন দরদাতা ফাইভ আর অ্যাসোসিয়েটসের দরপত্র ওই বছরের ২৯ নভেম্বর মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়। ১২ ডিসেম্বর কার্যাদেশ, ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি চুক্তি সম্পাদন এবং ২৭ ডিসেম্বর প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। আইএসপিএস কোডের আলোকে বন্দরের সব রপ্তানি গেটে কন্টেনার স্ক্যানার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁকখালী সেতু থেকে ৫০ লক্ষ টাকার ইলেকট্রিক ক্যাবল চুরি
পরবর্তী নিবন্ধদোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বললেন শিক্ষামন্ত্রী