বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া জরুরি

ড. মো. মোরশেদুল আলম | বুধবার , ১৯ জুলাই, ২০২৩ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

গত ৩১ মার্চ ২০২৩ তারিখে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি প্রতিবেদন আমরা সকলেই লক্ষ করি। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে কয়েকদিন ধরে অসংখ্য মরা জেলিফিশ ভেসে আসছে। সেইসাথে ডলফিন ও কাছিমের মৃতদেহও ভেসে আসছে। ডলফিন ও কাছিমগুলোর শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মৎস্য ও পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রে পুঁতে রাখা মাছ ধরার জালে কিংবা অন্য কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে প্রাণীগুলোর মৃত্যু হচ্ছে। মৎস্যবিজ্ঞানীরা বলেন, ইরাবতী ডলফিন সমুদ্র উপকূলের কাছাকাছি, নদীর সঙ্গে সংযোগস্থল স্বাদু ও লোনাপানির মিশ্রণ আছে এমন এলাকায় বসবাস করে। উপকূলের কাছাকাছি এসব জায়গায় গিল নেট ও টানা জালে ইরাবতী ডলফিন আটকে পড়ে মারা যায়। বাংলাদেশ সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের মহাপরিচালক সাইদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, সৈকতে ভেসে আসা ৩ ফুট লম্বা মৃত ডলফিনটির ওজন প্রায় ১৫ কেজি এবং এটি ইরাবতী প্রজাতির। এটির শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে এবং দেহেও পচন ধরেছে। জেলেদের জালে আটকা পড়ে বা অন্য কোনোভাবে আঘাত পেয়ে মৃত্যু হতে পারে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ডলফিন রক্ষায় গবেষণার প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডলফিনের আবাসস্থল চিহ্নিত করা, বিচরণ নিরাপদ করা এবং নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং ডলফিন রক্ষার জন্য সময়ে সময়ে অভিযান পরিচালনা করা। এর আগে ২০২২ সালের আগস্ট ও নভেম্বর মাসে তিন দফায় কয়েক হাজার মরা জেলিফিশ, ১০১৫টি মরা কাছিম ও ২টি ডলফিন ভেসে এসেছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এর কারণ অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ কিংবা পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি। ভেসে আসা জেলিফিশগুলো বক্স প্রজাতির। স্থানীয় ভাষায় জেলিফিশকে ‘নুইন্যা’ বলা হয়। এসব জেলিফিশ মূলত বিষাক্ত এবং পর্যটকদের এসব এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন সাগরে প্রায় ৫ হাজারের বেশি টলার ইলিশ ধরছে। প্রতিদিন ২০০৩০০ ট্রলার শহরের ফিসারিঘাটসহ জেলার টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া ও চকরিয়ার বিভিন্ন ঘাটে ফিরছে। যদিও কোনো ট্রলারের জালে জেলিফিশ, ডলফিন, কাছিম আটকা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে। এর আগে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরের উপকূলে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের দক্ষিণে নতুন জেগে উঠা চর বিজয়ে শত শত আওরেলিয়া আওরেটা প্রজাতির মৃত জেলিফিশ ভেসে এসেছে। এর আগেও দফায় দফায় মৃত ডলফিন, ছোট তিমি ও হাঙ্গর ভেসে আসতে দেখা গেছে। জেলিফিশ সাঁতারে তেমন পারদর্শী নয়। অনেক সময় খাদ্যান্বেষণে কিংবা বাতাসের কারণে উপরের দিকে চলে আসে জেলিফিশ। পরে বালুতে আটকা পড়ে মারা যায়।

মৃত জেলিফিশ, ডলফিন ও কাছিমের পাশাপাশি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্লাস্টিকের বিভিন্ন সামগ্রী, কাঁচের বোতল, ছেঁড়া জাল, স্যান্ডেল, রশি, গাছের গুঁড়ি, প্লাস্টিকের বোতলসহ মানুষের ব্যবহার্য বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী ভেসে এসেছে। ৩০ ও ৩১ মার্চ, ২০২৩ তারিখে ভোরে জোয়ারের সময় সৈকতের কলাতলী থেকে কবিতা চত্বর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক বর্জ্যের ঢল ভেসে আসে। বর্জ্যের কারণে সমুদ্রসৈকত সৌন্দর্যহীন হয়ে পড়ছে। সেই সাথে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে, এতে করে পর্যটকরা বিব্রত হচ্ছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে ভেসে আসা প্লাস্টিক বর্জ্য কক্সবাজার সৈকতের দরিয়ানগর হতে মহেশখালির বিভিন্নস্থানসহ সোনাদিয়া দ্বীপে এসে জমা হয়েছে। সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার এ প্রসঙ্গে বলেন, বিভিন্ন সময়ে ভেসে আসা প্লাস্টিক বর্জ্য কক্সবাজার সৈকতের দরিয়ানগর থেকে মহেশখালীর বিভিন্ন দ্বীপসহ সোনাদিয়া দ্বীপে এসে জমা হয়। সমুদ্রে নিম্নচাপ, বায়ুপ্রবাহ, পানির ঘূর্ণন, সমুদ্রের পানির গতি প্রবাহসহ সমুদ্র পৃষ্ঠের ধরনের ওপর ভিত্তি করে সমুদ্র উপকূলের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ভাসমান প্লাস্টিকসহ অন্যান্য বর্জ্য জমা হয়। এসব বর্জ্য কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত বিভিন্ন গুল্ম, লতা ও গাছের সঙ্গে আটকা পড়ে। সমুদ্রের যেসব জায়গায় ভেজিটেশন লাইন ও ওয়াটার লাইনের দূরত্ব বেশি সে জায়গার লম্বা দূরত্ব অতিক্রম করে জোয়ারের পানি আসতে না পারায় প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো প্রায়শই দরিয়ানগর থেকে শুরু করে সোনাদিয়ামহেশখালী সমুদ্রকূলে আটকা পড়ছে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এসব প্লাস্টিককে ভেঙে টেরেসস্ট্রিয়াল মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত করে। অনতিবিলম্বে এইসব বর্জ্য অপসারণ করা না হলে সৃষ্ট মাইক্রোপ্লাস্টিকের কারণে সমুদ্রের যে জীববৈচিত্র্য তা হুমকির সম্মুখীন হবে। সেইসাথে এটি অদূর ভবিষ্যতে জনমানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বর্জ্য ভেসে আসার কারণ বিশদভাবে জানার জন্য বঙ্গোপসাগরের সিজনাল এডি ফরমেশন বা পানির ঘূর্ণন, বায়ুপ্রবাহের গতি ও দিক এবং কক্সবাজার কোস্টাল এরিয়ার বটম ট্রপগ্রাফির ওপর ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন।

বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে জীববৈচিত্র্য বিষয়ে ধারণা ও সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণে ১৯৯৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর জীববৈচিত্র্য দিবস পালনের জন্য নির্ধারণ করা হয়। তবে ২২ মে কেনিয়ার নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত জীববৈচিত্র্যবিষয়ক কনভেনশনে এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। জীববৈচিত্র্যের বাস্তুতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এটি মানবজীবন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর ৮ জুন বিশ্ব সমুদ্র দিবস পালিত হয়। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরিওতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ধরিত্রী সম্মেলনে কানাডা দিবসটি পালনের প্রস্তাব করে। ২০০৪ সাল থেকে জাতিসংঘের উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। টেকসই সমুদ্রের জন্য উদ্ভাবন অর্থাৎ উদ্ভাবনী কর্ম উদ্যোগের মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদে সমুদ্র সম্পদ সংরক্ষণ করতে হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা সেভ আওয়ার সি’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুজ্জামান খান বলেন, সাগরের সঙ্গে সহাবস্থান করেই আমাদের টিকে থাকতে হবে। এই সহাবস্থানের জন্য প্রয়োজন উদ্ভাবন। উপকূলে বিভিন্ন দ্বীপ সুরক্ষায় বাঁধ দেওয়া কোনও কার্যকর সমাধান হবে না। বরং ওইসব অঞ্চলে লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধান, মাছ থেকে শুরু করে জীবন ধারণের অন্যান্য উপকরণ উদ্ভাবন করতে হবে। সমুদ্রকে ঠেকাতে বাঁধ তৈরিতে যত না অর্থ ব্যয় হয়, তার চেয়ে কম অর্থ ব্যয় হবে এসব উদ্ভাবনে। এসডিজি’র ১৪ নম্বর লক্ষ্যতে সাগরের কথা, সমুদ্র অর্থনীতির বিষয়ে বলা আছে। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল ও সমুদ্রজুড়ে বহু সম্পদ আছে। তবে পরিবেশের তোয়াক্কা না করেই এলএনজি টার্মিনাল, গভীর সমুদ্রবন্দর, বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, চট্টগ্রামে শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের অপরিকল্পিত হোটেলমোটেল নির্মাণ করায় সমুদ্রের অভ্যন্তরে ও সমুদ্র সংলগ্ন এলাকার জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির সম্মুখীন। সামুদ্রিক সম্পদ বলতে শুধু মাছ নয়, এর বাইরেও আরও অনেক সম্পদ আছে। সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ও টেকসই ব্যবহারের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ ও এর বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। সেন্টমার্টিনসহ কক্সবাজারের উন্নয়নে ৬৯০ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সাগরের কাছিম, লাল কাঁকড়া, সাগর লতা সংরক্ষণে চারটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। মেরিন ড্রাইভের পূর্বপাশ বরাবর এক লাখ বৃক্ষ রোপণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিবেশ অধিদফতর সেন্টমার্টিনের ছেড়া দ্বীপের পরিবেশ সুরক্ষায় একটি জোন চিহ্নিত করে কাজ শুরু করেছে। পাহাড় কাটা বন্ধ ও চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চলের দূষণ রোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া, জাহাজগুলো থেকে দূষণ বন্ধে অর্থদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। এসডিজিতে লাইফ বিলো ওয়াটারের কথা বলা হলেও সমুদ্রের নিচের পরিস্থিতি কী আমরা জানি না। সমুদ্রের তলদেশের পরিবেশ দেখার জন্য দক্ষ ডুবুরি, প্রয়োজনীয় জাহাজ ও সরঞ্জাম প্রয়োজন। এছাড়াও দক্ষ লোকবল ও যুগোপযোগী গবেষণারও প্রয়োজন রয়েছে। সামুদ্রিক প্রবাল সমুদ্রের তলদেশের পরিবেশ কতটা ভালো তা নিশ্চিত করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেন্টমার্টন ও তৎসংলগ্ন এলাকার প্রবাল এখন ভালো নেই। অতিরিক্ত পর্যটকের চাপ, প্রতিদিন বড় বড় জাহাজ নোঙর করায় এখানকার পরিবেশ ও প্রতিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বঙ্গোপসাগরে দূষণের মাত্রা এবং আগ্রাসী মৎস্য শিকারের ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত তথ্য ও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন সমুদ্র উপকূলে ৬টি তিমি এবং ৬০টি ডলফিন মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। মারা যাওয়া তিমিগুলোর মধ্যে একটি তিমির পেটে বড় ধরনের ফুটো ছিল এবং একটির দেহে ট্রলারের সঙ্গে আঘাত পাওয়ার চিহ্ন ছিল। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, বঙ্গেপসাগরে দূষণের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। উপকূলরক্ষী বাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশসহ অন্যান্যদের নজরদারি সত্ত্বেও বঙ্গোপসাগরে চলাচলকারী জাহাজ থেকে বর্জ্য তেল ফেলে দেওয়া হয়। আবার প্লাস্টিকদূষণও সামুদ্রিক বা জলজ প্রাণীদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৃত প্রাণীদের পাকস্থলীতে অনেক সময় প্লাস্টিক জমে থাকতে দেখা গেছে। গভীর সাগরে মাছ আহরণের পরিমাণও ক্রমেই বেড়ে চলেছে। জেলেদের জালেও অনেক সময় ডলফিন, তিমি আটকে যায়। আবার অনেক সময় ট্রলার বা জাহাজের ধাক্কায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আঘাত পাওয়া তিমি, ডলফিন ভাসতে ভাসতে উপকূলের নিকট চলে আসে। একসময় খাদ্যাভাব এবং আঘাতের কারণে দুর্বল হয়ে মৃত্যুবরণ করে। এসব তিমি, ডলফিন ও সামুদ্রিক প্রাণী রক্ষায় আন্তের্জাতিক উদ্যোগ ও কনভেনশন রয়েছে। বাংলাদেশও এসব সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত।

পরিবেশ সুরক্ষা, জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করে দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার যাবতীয় পরিকল্পনা ডেল্টা প্ল্যান২১০০ এ তিনি নিয়েছেন। সামুদ্রিক প্রাণী এবং সমুদ্রকে দূষণ হতে রক্ষায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বিত উদ্যোগ আরও বাড়াতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেরা মাঝে মধ্যে বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মৎস্য শিকার করতে আসে। তাদের গতিবিধি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্লাস্টিক ও তেলের দূষণ রোধে দেশীয় উদ্যোগের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগ জোরদার করতে হবে। বঙ্গোপসাগরসহ সমুদ্র ও নদীর মহামূল্যবান সম্পদকে রক্ষা করার কোনো বিকল্প নেই। মেরিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণার সুবিধার্থে সমুদ্রতীরবর্তী নির্মাণ করা উচিত। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন, সামুদ্রিক পরিবহন ও পর্যটন এবং সমুদ্রসম্পদ আইনের কঠোর বাস্তবায়ন করা জরুরি। বর্তমান সরকার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধানে আর্টিকেল ১৮() সংযোজন করেছে। এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন।’ বঙ্গোপসাগরসহ সমুদ্র ও নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার দায়িত্ব শুধু রাষ্ট্র কিংবা সরকারের নয়, আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরি করে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

লেখক: শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে
পরবর্তী নিবন্ধওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় রাঙ্গুনিয়ার প্রবাসীর মৃত্যু