বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব ও আজকের প্রধানমন্ত্রী

আবু তাহের মুহাম্মদ | বৃহস্পতিবার , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর দ্বিতীয় বিপ্লব তথা অর্থনৈতিক মুক্তির আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। তিনি তা সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। আমাদের এক দল পথ ভ্রষ্ট নির্দয় নিষ্ঠুর বর্বর পাকহানাদারদের দোসর তার প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল সপরিবারে । তার অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূ থেকে শুরু করে শিশুপুত্র রাসেলকেও তারা বাঁচতে দেয় নি। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে তারা নিশ্চিত হয়েছিল মুজিব নির্বংশ হয়ে গেছে। একই সাথে নিঃশেষ হয়ে গেছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ। আমাদের স্বাধীনতার মহান অর্জন। বাংলাদেশ বেতার রাতারাতি হয়ে গেল রেডিও বাংলাদেশ। আমরা হঠাৎ করে আমাদের লেবাস পরিবর্তন করে ফেললাম। এমনই দুর্ভাগ্য সেদিন পেছনের দরজা দিয়ে আসা দুষ্কৃতকারীরা ক্ষমতা দখলের জন্য এমন এক মহা অরাজকতা ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করেছিল ঢাকা বেতার কেন্দ্রে আত্মস্বীকৃত খুনি ডালিম রেডিওতে ঘোষণা দিচ্ছে আর বাইরে লম্বা বেঞ্চিতে বসে অপেক্ষা করছে মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক এমএজি ওসমানী, মেজর জিয়া, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, খন্দকার মোশতাক, কর্নেল তাহেররা। তারা কী কারণে ,কী উদ্দেশ্যে সেদিন বেতার ভবনে গিয়েছিল সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নিঃশেষ করে দেওয়ার পেছনে তারাই যে ইন্ধন যুগিয়েছিল তাতে কোন সন্দেহ ছিল না।
কিন্তু পরম করুণাময় সহায় হলে সবকিছুই সম্ভব। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা যারা পনেরই আগস্টে ইউরোপ ভ্রমণ করছিলেন সেসময় পশ্চিমা ঐ দেশের রাষ্ট্রদূত বঙ্গবন্ধু হত্যার সংবাদ পেয়ে দুই বোনকে নৈশভোজের টেবিল থেকে তুলে দিয়েছিলেন। তারপর তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। পরবর্তীতে ভারতে মহাত্মা ইন্দিরা গান্ধী আততায়ীরা যাতে সুযোগ নিয়ে হত্যা করতে না পারে তাই দুই বোনের নাম পরিবর্তন করে একটি গৃহে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এভাবেই বঙ্গবন্ধু উত্তর শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার দুঃসহ জীবন কেটেছে। দেশে ফিরে এসে শেখ হাসিনা তাদের ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি খুলে দেওয়ার জন্য জিয়ার কাছে বারবার অনুরোধ করে কিন্তু জিয়া তাতে কর্ণপাত করেনি। শেখ হাসিনা বলেছিলেন আমি আমার পরিবারের জন্য একটি দোয়া মাহফিলের আয়োজন করতে চাই, আমাকে আমার বাড়ির চাবি দেয়া হোক কিন্তু সেদিন তা দেয়া হয়নি। পরে তিনি ৩২ নম্বর সড়কে এসে সামিয়ানা টানিয়ে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন।
কিন্তু আজকের প্রেক্ষাপট কী? শেখ হাসিনা এখন সারাবিশ্বের মানবতার নেত্রী। বঙ্গবন্ধুর সমস্ত অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করেছেন তিনি, বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছেন তিনি। বাংলাদেশ কিছুদিনের মধ্যেই উন্নয়নশীল দেশের কাতারে গিয়ে পৌঁছবে এবং এটি সম্ভব হবে জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে।
শেখ হাসিনাই আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, বাংলাদেশ আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়।
আজকে মহাশূন্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, বঙ্গোপসাগরে সাবমেরিন, পদ্মায় দাঁড়িয়ে গেছে সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল এগুলো আর স্বপ্ন নয়। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শিল্পজোন। এখান থেকে কয়েক মাসের মধ্যেই বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি উৎপাদিত হয়ে বাজারে আসবে। বাংলাদেশ যুদ্ধ তরী এবং জঙ্গীবিমান নিজেদের উদ্যোগে উৎপাদনে যাবে।
মুজিব তনয়ার ৭৫তম জন্মদিন পালিত হল সারা বিশ্বব্যাপী। তাই তার জন্য সমগ্র দেশবাসীর প্রতি পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা করার আহ্বান জানাই। তিনি যেন এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আরও সময় পান এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আরো কঠিন পথ পাড়ি দিতে পারেন। এই টুকুই প্রত্যাশা থাকলো আওয়ামী লীগ তথা সমগ্র দেশবাসীর কাছে।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা

পূর্ববর্তী নিবন্ধইতিহাসের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করছে শেখ হাসিনার গ্রন্থমালা
পরবর্তী নিবন্ধএকটি অশান্ত- অস্থির- চঞ্চল কবিপ্রতিভার প্রস্থান