একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ এবং সে দেশের জনগণের জন্য সুন্দর আগামী উপহার দিতে যিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তিনি হচ্ছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ পূর্ব বাংলার ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ সাবডিভিশনের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৪ সালে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমান নাম মওলানা আজাদ কলেজ) থেকে আই.এ ও ১৯৪৭ সালে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯৪৮ সালের পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম নেতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রগতিশীল উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজনীতিবিদ হিসেবে খুব দ্রুততার সঙ্গে প্রতিটি পদে উন্নতি করেন। ১৯৫৩ সালের ৯ জুলাই তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। অতঃপর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সপরিবারে হত্যা করা হয়। হত্যাকারীরা এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নাম, তাঁর নীতি-আদর্শ নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শের ভিত্তি এতই মজবুত ছিল যে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা তো দূরের কথা তাঁর মৃত্যুর পরে দেশে ও আন্তর্জাতিক মহলে তিনি আরো অনেক বেশী মর্যাদা লাভ করেছেন। বঙ্গবন্ধু একজন সফল রাষ্ট্র নায়কের পাশাপাশি শিশুদের কাছেও ছিলেন অসাধারণ প্রিয় ব্যক্তিত্ব। দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি, বিশেষত শিশুদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল অসীম ও কুণ্ঠাহীন। ভবিষ্যত বাংলাদেশ গড়ার নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। বাঙালির মহাজাগরণের পথিকৃৎ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি অন্যায়ের কাছে কখনও মাথানত করেননি। বুকে স্বীয় আদর্শকে ধারণ করে এগিয়ে গেছেন সামনে। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মাধ্যমে জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন করা। তাঁর রাজনীতির মূল দর্শন বাঙালির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি অর্জন। তিনি বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন, বাংলাদেশের জনগণের অধিকার আদায়ে দীর্ঘ ২৩ বছর আপসহীন থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। বলা যায়, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত বাঙালির সকল প্রাপ্তিই এসেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। অহিংসা দিয়ে, মানব প্রেম দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে ছোট-বড় সকলের জন্য বঙ্গবন্ধু সমাজে যে আদর্শ নির্মাণ করে গেছেন তার মৃত্যু নেই, ক্ষয় নেই। বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শ ছোটবেলা থেকেই অনুসরণ ও ধারণ করে জাতির পিতার স্বপ্ন বাংলাদেশকে একটি সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু সম্মন্ধে তাইতো কিংবদন্তি বাঙালি কবি ও প্রাবন্ধিক অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছেন-‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান…’
পরিশেষে বলা যায়, বঙ্গবন্ধুর মতো এত বড় হৃদয় ও দরদী মনের অধিকারী, নীতিতে অটল, আদর্শ দেশপ্রেমিক, জনগণের অকৃত্রিম সেবক সত্যিই সমাজে বিরল। একজন মানুষের এতগুলো গুণ একসাথে সচরাচর দেখা যায় না। তাইতো বঙ্গবন্ধু আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় বিশ্বের একজন শ্রেষ্ঠ মহান নেতা হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন। তাইতো বঙ্গবন্ধুকে সবাই নিজের প্রাণের চেয়েও বেশী ভালোবাসেন। আমি বিশ্বাস করি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে শিশু, কিশোর, যুব, আবাল বৃদ্ধ বণিতা সকলেই বঙ্গবন্ধুকে অন্তর থেকে ভালোবাসেন। দু’হাত তুলে পরম করুণাময়ের নিকট তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
লেখক : প্রাবন্ধিক