‘প্রস্রাবের মাধ্যমে’ শনাক্ত হবে কালাজ্বর

ঢাবি গবেষক দলের দাবি

| মঙ্গলবার , ৩ জানুয়ারি, ২০২৩ at ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ

রক্ত কিংবা টিস্যু পরীক্ষার জটিল প্রক্রিয়া এড়িয়ে সহজে কালাজ্বর শনাক্তের একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনের দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ; যে পদ্ধতিতে প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে দ্রুত রোগ নির্ণয় করা যাবে। একই সঙ্গে এটিকে কার্যকরী এবং নির্ভুল ও নিখুঁতভাবে পরজীবীবাহিত রোগ কালাজ্বর শনাক্তকরণের রোগীবান্ধব পদ্ধতি বলে দাবি করছে গবেষক দলটি। গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ মনজুরুল করিম। খবর বিডিনিউজের।

তিনি জানান, অস্থি মজ্জা, যকৃত, প্লীহা, লিম্ফ নোডের টিস্যু পরীক্ষার মত জটিল পদ্ধতি এড়িয়ে কিংবা রক্ত পরীক্ষার পরিবর্তে প্রস্রাব পরীক্ষা করে বেলে মাছির মাধ্যমে ছড়ানো কালাজ্বর শনাক্ত করা যাবে। এ পদ্ধতিতে মূত্রের নমুনা ব্যবহার করে আরটি-পিসিআর প্রযুক্তির সাহায্যে মাত্র আধা ঘণ্টায় কালাজ্বর শনাক্ত করে তিন ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব বলে জানান অধ্যাপক মনজুরুল।

তিনি জানান, এর আগে এ রোগ নির্ণয়ে রক্তের ইমিউনোক্রোমাটোগ্রাফিক পরীক্ষা এবং অস্থি মজ্জা, যকৃত, প্লীহা, লিম্ফ নোড এর টিস্যু অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হত, যার প্রথমটির রোগ নির্ণয়ে নির্দিষ্টতা কম এবং অন্যটিতে টিস্যু সংগ্রহের সময় মারাত্মক রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বিদ্যমান। কালাজ্বর লিশম্যানিয়া ডনোভানি নামের এককোষী পরজীবীবাহিত একটি রোগ। বাংলাদেশে এটির বাহক স্ত্রী বেলেমাছির কামড়ে কালাজ্বরের পরজীবী মানুষের দেহে প্রবেশ করে। বাংলাদেশে সংক্রামক রোগের তালিকাতেও রয়েছে এটি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশসহ গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে এটি উপেক্ষিত একটি রোগ; যার মধ্যে লিশম্যানিয়াসিস তিনটি রূপের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ও প্রাণঘাতি। কালাজ্বরের সংক্রমণ এতটাই গুরুতর ও মারাত্মক যে, যথাসময়ে চিকিৎসা করানো না হলে এ রোগে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যু হয়ে থাকে। বাংলাদেশে একমাত্র লিশম্যানিয়া ডনোভানি পরজীবীর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। অধ্যাপক মনজুরুল বলেন, ৭৮টি দেশে এ রোগের সংক্রমণ রয়েছে।

সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। বাংলাদেশের ২৬টি জেলার ৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ রোগের ওষুধ থাকলেও শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াটা জটিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০৩০ সালের মধ্যে এ রোগ নির্মূলের পরিকল্পনা নিয়েছে। রোগ নির্মূলের জন্য জরুরি সঠিক শনাক্তকরণ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগে করা কালাজ্বরের ‘মলিকিউলার ডায়াগনস্টিক’ পদ্ধতিতে ক্লিনিকাল নমুনা হিসেবে প্রস্রাব ব্যবহার করার দৃষ্টান্ত ভারতীয় উপমহাদেশে এই প্রথম। ২০১৪ সাল থেকে প্রায় ৭ বছর গবেষণা করে এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। ক্লিনিক্যালি শনাক্ত করা ২৩ জন রোগীর প্রস্রাবের নমুনা থেকে গবেষণার ফলাফল পাওয়া যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রাথমিকের শিক্ষকদের একই উপজেলায় বদলি শুরু আজ থেকে
পরবর্তী নিবন্ধগার্মেন্টস কর্মীর হারানো স্বর্ণ ও নগদ টাকা উদ্ধার