প্রশ্নের উত্তর কে দিবে?

সুলতানা কাজী | বুধবার , ১৭ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

কবি জীবনানন্দের মাতা কুসুমকুমারী দাশ (১৮৮২-১৯৪৮) ছিলেন অসাধারণ কবি। তাঁর কাব্যচর্চার সময়কালীন নারীরা ছিলো অনেকটা পিছিয়ে! নিজেদের অন্দরমহলের ভিতর গৃহকর্মে সুনিপুণা করে তোলারই প্রতিযোগিতা চলতো তখন। কয়েকজন ব্যতিক্রমীর মাঝে কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন অনন্যা।
আমার মেজো মেয়ে ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী। ওর বাংলা বইয়ের ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতার লেখক হলেন কবি কুসুমকুমারী দাশ। শ্রদ্ধা অবিরত, ওনার প্রতি। শিশুতোষ কবিতা ‘আদর্শ ছেলে’। ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?/ মুখে হাসি, বুকে বল তেজে ভরা মন/ মানুষ হইতে হবে’- এই তার পণ,/ বিপদ আসিলে কাছে হও আগুয়ান,/ নাই কি শরীরে তব রক্ত মাংস প্রাণ?” সমস্ত আবেগ, অনুপ্রেরণা, উৎসাহ, শক্তিসঞ্চারণমূলক শব্দের সমাহার কবিতাটাতে। এ বয়সে এসেও যেনো একটা মানসিক শক্তির উদ্ভব হলো কবিতাটা পড়ে! মনোযোগ দিয়ে মেয়েকে পড়াতে বসালাম। হঠাৎ ওর প্রশ্নে, আমি অবাক চোখে মুহূর্তেই চুপসে গেলাম যেনো। ওর জিজ্ঞাসা, মেয়েরা কি দুর্বল? মেয়েদের মানুষ হতে হবেনা? শুধু কি ছেলেরাই দেশের কল্যাণ করে?কতক্ষণ চুপ থেকে উত্তর কি দিবো ভেবে না পেয়ে বললাম, তুমি এখন বিশ্রাম নাও, মা! আমারও প্রশ্ন, শিশুদের মনস্তত্ত্বের লিঙ্গ বৈষম্যের এমন বিষ ঢুকিয়ে দেয়া পাঠ কি একুশ শতকে এসেও দিতে হবে? নারীরা যে লৈঙ্গিকগত দুর্বল, তা এ বয়সেই জানাতে হবে তাদের? আচ্ছা, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারী, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীও তো নারী! তাহলে, এমন পাঠ পাঠ্যপুস্তকে সংযোজন করার আগে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের শোভন মনে হয়েছিলো? এ ধরনের পাঠকে যাঁরা পছন্দ করেছেন তাঁদের মস্তিষ্কের উর্বরতা বা ঘনত্ব নিয়ে আমার কোনো প্রশ্ন নেই! কিন্তু, প্রশ্ন কি আসেনা মনে?
জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশানের ওপর আমি একটা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। সেখানে বলা হয়েছিলো, শিশুদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যেনো তারা নিজেদের মানুষ ভাবতে শিখে। শিশুদের মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত করে তোলার অধিকার কারো আছে কি? প্রশ্নের উত্তর, কে দিবে?

পূর্ববর্তী নিবন্ধসমাজকে সুন্দর রাখতে শুধু আবেগ নয় বিবেক থাকাও প্রয়োজন
পরবর্তী নিবন্ধহাসান আজিজুল হক ও তাঁর ‘আগুনপাখি’