সিআরবি থেকে বঙ্গমাতার নামে হাসপাতাল অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে চিঠি দিচ্ছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপিরা। চিঠি দেয়ার বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে এবং চিঠি রেডি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে সিআরবিতে হাসপাতাল চায় না চট্টগ্রামবাসী; তাই হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিবাদে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ-পরিবেশবিদ-সাংবাদিক-সংস্কৃতিকর্মীসহ নানান শ্রেণি পেশার মানুষ গত বছরের জুলাই থেকে দীর্ঘ ১০ মাস ধরে আন্দোলন করে আসছে। এই ব্যাপারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেছেন, সিআরবির হাসপাতাল অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ আমরা স্বাক্ষর করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি দেবো। এখনো চিঠি রেডি হয়নি। চিঠি রেডি হওয়ার পর আমরা স্বাক্ষর করবো। সংসদ সদস্যরাও এখানে স্বাক্ষর করবেন। সিআরবি থেকে হাসপাতাল অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর সাথে এই ব্যাপারে আমার কথা হয়নি। আমরা স্বাক্ষর করে চিঠি দেয়ার পর এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা হবে।
উল্লেখ্য, সিআরবিতে রেলওয়ের নিজস্ব জমিতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ৫০০ বেডের মাল্টি স্পেশালিটি হসপিটাল অ্যান্ড ১০০ সিটের মেডিকেল কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। পরবর্তীতে এই হাসপাতাল প্রকল্পটি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি রেলওয়ের প্রথম পিপিপি প্রকল্পটির নামকরণ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের নামে করতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে আবেদন করা হয়। গত বছরের ২৭ অক্টোবর ট্রাস্টি বোর্ড সভায় রেলওয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্স’ হিসেবে নামকরণের অনুমতি দেয় ট্রাস্ট।
এ দিকে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার দাবিতে আন্দোলনরতরা বলছেন, স্থানটিতে হাসপাতাল হলে পুরো সিআরবি এলাকা বিরাণভূমিতে পরিণত হবে। পাহাড় ও গাছ কেটে হাসপাতাল নির্মাণ হলে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া হাসপাতালটিকে কেন্দ্র করে আরো যেসব অবকাঠামো তৈরি হবে, তাতে সিআরবি ও আশপাশের এলাকার সবুজ পরিবেশ, গাছপালা, পাখ-পাখালি ও জীববৈচিত্র্যের বিনাশ হবে। কোলাহলময় হয়ে উঠবে এলাকাটি।
লাগাতার আন্দোলনের মাঝেই গত ২৭ মার্চ সিআরবিতে বেসরকারি হাসপাতাল প্রকল্প বাতিলের দাবিতে নাগরিক সমাজ-চট্টগ্রাম আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। এই সমাবেশে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমার বিশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও সিআরবিতে বেসরকারি হাসপাতাল করতে দেবেন না। তিনি নিজেও পরিবেশ এবং প্রাণ প্রকৃতি সুরক্ষায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার প্রধান।’
তিনি হাসপাতাল প্রকল্প অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘চট্টগ্রামে হাসপাতাল করার মতো জায়গার অভাব নেই। সাবেক হাজী ক্যাম্পসহ অন্য যেকোনো স্থানে হাসপাতাল করলে চট্টগ্রামবাসীর আপত্তি থাকবে না। চট্টগ্রামের মানুষ প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে সিআরবি রক্ষা করবে।’












