প্রতিনিধি নাট্য উৎসব শুরু

পকেটের টাকা খরচ করে বাঙালি সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রেখেছেন নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মীরা : আজাদী সম্পাদক

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

জীবনে শুদ্ধতম বোধের চর্চা ও নিরন্তর সৃজনশীল চিন্তনের হিরন্ময় উত্তরাধিকার আমাদের মঞ্চনাটক। সকল প্রকার গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এই দেশের নাট্য ও সংস্কৃতি কর্মীদের ভূমিকাকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নাটক তথা সংস্কৃতি চর্চাকে বিকশিত করতে আমাদের নীতিনির্ধারকগণ মনোযোগী নন। দেশের বাজেটে সর্বশেষে সংস্কৃতির অবস্থান।

 

এ ধরনের মানসিকতা বদলাতে হবে। তবেই নাটকসহ সংস্কৃতির প্রতিটি শাখায় সুদিন ফিরে আসবে। নাটক এমন এক শক্তিশালী পারফরমিং আর্ট, যা সমাজ পরিবর্তনে প্রেরণা যোগায়। নাটকের মধ্য দিয়ে সুন্দর মানুষ গড়তে চাই, যারা সুন্দর পৃথিবীটাকে গড়বে। গতকাল শুক্রবার প্রতিনিধি নাট্য সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠার ৪৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী আয়োজিত নাট্যোৎসবের উদ্বোধনী অধিবেশনে অতিথিবৃন্দ এ অভিমত ব্যক্ত করেন। ‘দ্রোহে প্রেমে সংগ্রামে, এসো নাটকের প্রাঙ্গণে’ এ স্লোগানে বর্ণাঢ্য র‌্যালির মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রতিনিধি নাট্য উৎসব ২০২৩।

ঢোলের বাদ্যের তালে বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী সম্পাদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সংবাদ ব্যক্তিত্ব এম এ মালেক। নাট্যোৎসব উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক হাসান জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে ও দিলরুবা খানমের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব ম হামিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যজন আকতারুজ্জামান, খালেদ হেলাল, মোসলেম উদ্দিন শিকদার, সাইফুল আলম বাবু ও খোরশেদুল আলম।

উদ্বোধক সংবাদব্যক্তিত্ব এম এ মালেক বলেন, নাটক আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি। আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া আনন্দ, বেদনা, হতাশা, দুঃখ, কান্না, ভাঙন আর মিলনের খণ্ড খণ্ড চিত্রগুলি এক সুতোয় গেঁথে নাটকের মধ্য দিয়ে উঠে আসে। নাট্যশিল্প এমন এক দীপ্যমান বাস্তবতা, যা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনকেও আলোকিত করে। তিনি বলেন, জীবনটাই একটা নাট্যমঞ্চ। আমরা যে যার মতো অভিনয় করে চলেছি।

সবসময়ই দেখেছি, নাট্যকর্মীদের কঠিন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে, নানা সংকট মোকাবেলা করে তারা নাটক করে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে শুধু নাট্যকর্মীরাই নন, সংস্কৃতির প্রতিটি শাখার কর্মীরা পকেটের টাকা খরচ করে বাঙালি সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

নাট্য ব্যক্তিত্ব ম হামিদ বলেন, প্রতিনিধি নাট্যসম্প্রদায় দীর্ঘ ৪৩ বছর পার করেছে। প্রতিনিধির নাট্যকর্মীরা দীর্ঘপথ অতিক্রম করে তাদের নাট্যদলকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। তবে খেদের সঙ্গে বলতে চাই, আমাদের বাজেটে পরিমাণের দিক থেকে সবশেষে সংস্কৃতির অবস্থান।

বরাদ্দ মাত্র ০.১২ শতাংশ। তিনি বলেন, ক্ষমতায় যারা থাকেন তারা চান, সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে, মৌলবাদের বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সংস্কৃতিকর্মীরা রাজপথে থাকুক, প্রতিবাদে অংশ নিক। কিন্তু তাদের চর্চার ক্ষেত্রে আর্থিক বিষয়টি যখন সামনে চলে আসে, তখন সরকারের সুদৃষ্টি দেখি না। প্রত্যেকটা উন্নত দেশে নাটকের স্পন্সর করে সিটি কর্পোরেশন।

আমাদের দেশের সিটি কর্পোরেশন নাটকের ধারে কাছে থাকে না। গত ৫০ বছর ধরেই এ বৈষম্য চলে আসছে। তিনি আরো বলেন, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বাজেট বাড়ানোর জন্য সারা দেশে আন্দোলন হয়েছে, কিন্তু এক টাকাও বাড়ে নি। তাই নীতিনির্ধারকদের নাটকের গুরুত্ব বুঝতে হবে। কিন্তু তারা বুঝেন শুধু অর্থ। আমরা দাবি করেছিলাম প্রতিটি স্কুল কলেজে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা চালু করতে; হয়নি তা। সংস্কৃতি চর্চার বিকাশ চাইলে এ খাতে বিনিয়োগ করতে হবে।

নাট্যজন আকতারুজ্জামান বলেন, প্রতিনিধি নাট্য সমপ্রদায়কে সাধুবাদ জানাই এমন উৎসবের মধ্য দিয়ে মঞ্চ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ার জন্য।

নাট্য উৎসব উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক হাসান জাহাঙ্গীর বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ফসল আমাদের গ্রুপ থিয়েটার। ১৯৮০ সালে যাত্রা শুরু করে, অগণিত ভালো নাটক প্রযোজনার মাধ্যমে প্রতিনিধি নাট্য সম্প্রদায় গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনকে বেগবান করেছে।

অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে চারুতা নৃত্যকলা একাডেমি এবং সঙ্গীত পরিবেশন করেন আবদুর রহিম ও মধুলিকা মন্ডল।

চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে উদ্বোধনী সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় এপার ওপার বাংলায় বহুল প্রশংসিত নাটক ‘ভাগের মানুষ’। সা’দত হাসান মান্টোর ছোটগল্প ‘টোবাটেক সিং’ অবলম্বনে ‘ভাগের মানুষ’ নাটকটির নাট্যরূপ দিয়েছেন মান্নান হীরা এবং নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যজন আলী যাকের। নাটকটি ‘সময়’ নাট্যদলের ২৬তম প্রযোজনা।

আগামী ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উৎসবে প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে মুক্তমঞ্চে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মিলনায়তনে নাটক মঞ্চস্থ হবে সন্ধ্যা ৭টায়। সপ্তাহব্যাপী এ নাট্যোৎসবে মঞ্চস্থ হবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের আমন্ত্রিত দলের নাটক। নাটকগুলো হচ্ছে ২৮ জানুয়ারি পারাপার (দেশ নাটক, ঢাকা), ২৯ জানুয়ারি অপেক্ষা (প্রতিনিধি নাট্য সমপ্রদায়), ৩০ জানুয়ারি উজানে মৃত্যু (পালাকার, ঢাকা), ৩১ জানুয়ারি আরশোলা, নানা রঙের দিন ও শরতের মেঘ (চারুনীড়ম থিয়েটার, ঢাকা), ১ ফেব্রুয়ারি বীরাঙ্গনার বয়ান (শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র) ও সীতার অগ্নিপরীক্ষা (সাধনা, ঢাকা) এবং ২ ফেব্রুয়ারি পুণ্যাহ (নাট্যকেন্দ্র, ঢাকা)

পূর্ববর্তী নিবন্ধবর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় বাঁশখালীতে আন্তর্জাতিক কুম্ভমেলা শুরু
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপির আন্দোলন চলে অদৃশ্য নির্দেশে : কাদের