কর্ণফুলী নদীর তলদেশ থেকে প্রতিদিন গড়ে ২৫ টন পলিথিন উত্তোলন করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের শেষ দিকে এসে চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মুখ থেকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ পলিথিন ওঠানো হচ্ছে। নদীর তলদেশ থেকে যে পরিমাণ ময়লা-আবর্জনা ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে তার ৮০ শতাংশই পলিথিন বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এদিকে নদীকে বর্তমান অবস্থায় রাখার জন্য আগামী তিন বছর রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে প্রতিদিন নদীর তলদেশ থেকে পলিথিন উত্তোলনের কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, শহর থেকে হাজার হাজার টন ময়লা-আবর্জনার পাশাপাশি উজান থেকে নেমে আসা পলিসহ নানা ধরনের বর্জ্যে কর্ণফুলী নদী ভরাট হচ্ছে। জোয়ার-ভাটা নির্ভর যে কোনো নদীর চরিত্রই হচ্ছে ভরাট হওয়া। কর্ণফুলীতেও পলি জমে। নদীর এই চরিত্রের কারণে অল্প সময়ে কর্ণফুলীর নানা স্থানে চর জাগে। একটি খুঁটি পুঁতে রাখলেও তা ঘিরে তৈরি হতে থাকে বালুচর। এই অবস্থায় নদীর নাব্যতা ঠিক রাখতে প্রতি দশ বছর অন্তর ক্যাপিটাল ড্রেজিং করার পরামর্শ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু নানা জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়া এবং ড্রেজিংয়ের নামে নদীর বিভিন্ন অংশ ভরাট এবং বালি বিক্রি করার কারণে হুমকির মুখে পড়ে কর্ণফুলী। একটি প্রকল্প বাতিল হওয়ার পর ‘সদরঘাট টু বাকলিয়ার চর ড্রেজিং’ নামে পৃথক একটি প্রকল্প গ্রহণ করে নদী থেকে ৪২ লাখ ঘনমিটার বালি ও মাটি উত্তোলনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্পটির আওতায় সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৫০ মিটার চওড়া এলাকায় ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়। ডিপিএম পদ্ধতিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মাধ্যমে চীনা কোম্পানি ই-ইঞ্জিনিয়ারিং নামের কোম্পানিকে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়। শুরুতে ৪২ লাখ ঘনমিটার মাটি তোলার কথা থাকলেও পরে এই প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বুয়েটের বিটিআরসির বিশেষজ্ঞ টিম ৫১ লাখ ঘনমিটার মাটি ও বালি উত্তোলনের মতামত দেয়। এতে ব্যয় ৬৩ কোটি টাকা বেড়ে ৩০২ কোটি টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। বর্তমানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী নদী থেকে ৫১ লাখ ঘনমিটার মাটি ও বালি উত্তোলনের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের কাজ ৯৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের মূল কাজের সময়সীমা গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। তবে আগামী তিন বছর এই প্রকল্পের আওতায় নদী রক্ষণাবেক্ষণের কার্যক্রম চলবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় নদী থেকে মাটি ও বালি উত্তোলন কার্যক্রম পরিচালিত হলেও সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে চাক্তাই ও রাজখালী খালের মুখে। এখানে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর উত্তর পাশে বড় চর জেগেছে। এই চর থেকে অন্তত ৫ লাখ ঘনমিটার মাটি ও বালি উত্তোলন করার কার্যক্রম চলছে। চাক্তাই খাল ও রাজাখালী খালের মুখসহ সন্নিহিত এলাকা থেকে মাটি ও আবর্জনা উত্তোলন সম্পন্ন হলে কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প পুরোপুরি শেষ হবে। বেশ কিছুদিন ধরে নদীর এই অংশ থেকে মাটি ও আবর্জনা উত্তোলন করা হচ্ছে। আবর্জনা উত্তোলন করতে গিয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে পলিথিন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, পলিথিনের জঞ্জাল কর্ণফুলী ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পে পদে পদে বাধা তৈরি করেছে। চীন থেকে সর্বাধুনিক কাটার এনেও নদীর তলদেশ থেকে মাটি উত্তোলন করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। নদীর তলদেশে জমে ওঠা পলিথিন পরিষ্কার করতে প্রকল্পের বেশিরভাগ সময় গেছে। গত ক’দিন ধরে চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মুখ থেকে প্রতিদিন গড়ে ২৫ টনের মতো পলিথিন উত্তোলন করা হচ্ছে।
কর্ণফুলী ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ বলেন, আমাদের মূল কার্যক্রম শেষ হতে চলেছে। তবে ড্রেজিং কার্যক্রম বন্ধ হবে না। নদীকে বর্তমান অবস্থায় রাখার জন্য আগামী তিন বছর নিয়মিত কার্যক্রম চলবে। নদীর বুকে আর কোনো চর দেখা যাবে না। আমরা সব চর কেটে মাটি তুলে ফেলেছি।
তিনি বলেন, চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মুখ থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পলিথিন উত্তোলন করছি। নদীর তলদেশ থেকে যা তোলা হচ্ছে তার ৮০ শতাংশই পলিথিন। পলিথিনের জঞ্জাল নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে চড়া মূল্য দিতে হবে বলে জানান তিনি।