পেশা যখন শিক্ষকতা

সুলতানা কাজী | সোমবার , ১৫ মার্চ, ২০২১ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

ছোটবেলায় আইসক্রিম ওয়ালার পেটি থেকে আইসক্রিম বের হওয়া দেখে, মনে মনে ভাবতাম..বড় হয়ে আইসক্রিম ওয়ালাই হবো! এরপর পাইলট, রেলগাড়ির চালক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কেই’বা হতে চাইনি! আমি হতে চেয়েছিলাম- কোদাল হাতে সারাদিনময় ঘাস তুলে গরু, ছাগলের মুখে তুলে দেওয়া ‘রাখাল’! আমার বড় বেলায় এসে ইচ্ছেগুলো ডানা ঝাপটাতে শুরু করলো! কখনো বিমানবালা আবার কখনো সখনো শুধুই রাঁধুনি! ছোটবেলা থেকেই রান্নার হাত ভালো ছিলো বলেই হয়তো! এরও পর, হঠাৎ মাথায় চাপলো উপস্থাপনাকে পেশা হিসেবে নিবো! একদিন চট্টগ্রাম টেলিভিশনে অডিশনে গিয়ে দেখি…সময়ই শেষ হচ্ছেনা! আসতে বলা হলো দশটায়! কিন্তু চারটার সময়ও কারো কোনো সাড়া নাই দেখে ক্ষোভ নিয়ে বাসায় চলে আসলাম! সাঙ্গ হলো আমার উপস্থাপনার শখ! অবশেষে পেশা হিসেবে আমার কপালে ঠাঁই হলো এক মহান পেশার। হয়ে গেলাম আমি ‘শিক্ষক’। ভাইভা বোর্ডে তিন বছরের ভিতর চাকরি ছাড়বোনা বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমি এখনও বহাল তবিয়তে একই প্রতিষ্ঠানেই আছি! হুম, অংকুরেরই বাংলা শিক্ষক আমি। পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মাননীয়, দায়িত্বশীল এবং অনুপ্রেরণা সৃষ্টিকারী পেশা শিক্ষকতা। বর্তমানে এটা আমার নেশাও। কাউকে কিছু বুঝাতে পারা, নতুন কিছু শেখানোর মাধ্যমে তাদের মনের জানালাকে খুলে দিতে পারা–এ সবের মাঝে যে অসাধারণ তৃপ্তি আছে, তা আমি অন্য পেশায় পেতামনা। আমি একা নই, প্রায় সকল শিক্ষকই শিক্ষকতা করেন এ কারণেই। মনের আলো জ্বালানো, জ্ঞানের আলো বিলানোটা পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দময় অভিজ্ঞতার মাঝে পড়ে। আর শিক্ষার্থী যখন দেশ বিদেশের সেরা সব জায়গায় নিজের যোগ্যতায় স্থান করে নেয়, তখন তাদের জীবনে কিছুটা হলেও আমার অর্জন আছে বলেই, শিক্ষকতা পেশায় আসার জন্য আমার খুব বড় অনুপ্রেরণা। আমরা শিক্ষকরা সত্যিকারের মানুষ নিয়ে কাজ করি। আমরা প্রতিদিন ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলি। তাদের পড়াই। পড়তে না চাইলে ভয় ভীতি দেখাই। তারা ভালো কিছু করলে খুশিতে আটকানা হয়ে যাই। তারা ভুল করলে লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলি। কেউ পাস করে চলে যায় আবার কেউ নতুন করে প্রবেশ করে। প্রাচীন গ্রীস সক্রেটিসের সময় থেকে আজকের এই শতাব্দীতে এসে অনেক পেশা হারিয়ে গেছে, অনেক পেশার উত্থান ঘটেছে, কিন্তু শিক্ষকতা টিকে আছে তার সম্মানের জায়গায়। আত্মিক একটা সম্পর্ক জিইয়ে তার শান সৃষ্টি করাই আমার মতে, ‘শিক্ষকতা’।
আমরা কাজ করি রক্ত মাংসের মানুষ নিয়ে। যাদের চোখে রঙিন চশমা এবং যারা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে। আমার এলেবেলে লেখায় আমি কতটুকু বুঝাতে পেরেছি জানিনা, তবে আমার পেশা নিয়ে আমি গর্বিত। এ আমার খোলা জানালায় লম্বা শ্বাস নেয়ার মতোই। আমার অঙিজেন, যাকে ছাড়া আমার দম ফেলবার নয়! আমার পেশাও…পৃথিবীর সকল শিক্ষকের প্রতি শুভেচ্ছা। জ্ঞানের আলো জ্বালানোর এ কারিগরদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সুস্থ পৃথিবীতে আবারো আলো জ্বালবো! যেমনটা জ্বালিয়েছি পশ্চাতে!

পূর্ববর্তী নিবন্ধসৃজনশীল এর নামে গদ বাঁধা গাইডের পড়া বন্ধ করুন
পরবর্তী নিবন্ধএকটি শোভন, সুন্দর ও আনন্দের খবর