আগামী ২৮ নভেম্বর ৩য় ধাপে অনুষ্ঠিত হবে পেকুয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। এগুলোর মধ্যে পেকুয়া সদর ইউপিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।
স্বাভাবিক পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে রাজাখালী, শিলখালী মগনামা, উজানটিয়া ও বারবাকিয়ায়।
নির্বাচন কমিশনের তফশীল অনুযায়ী প্রার্থীদের মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ২ নভেম্বর, বাছাই ৪ নভেম্বর, প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১১ নভেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১২ নভেম্বর।
এর আগে ২০ সেপ্টেম্বর ১ম দফার ইউপি নির্বাচনে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে একমাত্র টইটং ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বিজয়ী হন।
এদিকে, আসন্ন ৬ ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেতে অন্তত ২৫ প্রার্থী মরিয়া হয়ে জোর তদবির চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১৬ অক্টোবর ওই ৬টি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী বাছাই কল্পে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথা অনুযায়ী তৃণমূল নেতৃবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সম্ভাব্য প্রার্থীর একটি তালিকা জেলা আওয়ামী লীগের নিকট পাঠাবে এবং জেলা আওয়ামী লীগ তা যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত একটি তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেবে। কেন্দ্রীয় কমিটি যাদেরকে মনোনয়ন দেবে তারাই চূড়ান্তভাবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবেন।
পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, ১৬ অক্টোবর ইউনিয়ন থেকে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা কক্সবাজার জেলায় পাঠানো হয়েছে এবং ১৭ অক্টোবর জেলায় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও প্রার্থীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ করে আজ সোমবার (১৮ অক্টোবর) চূড়ান্ত তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ প্রতিবেদন লেখার সময় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্ভাব্য ২৫ প্রার্থীই এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের দলীয় প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করার কথা রয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, ৬টি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী বাছাই হলেও কে হচ্ছেন সদর ইউনিয়নের নৌকার মাঝি সেদিকেই নজর বেশী তৃণমূল নেতাকর্মীদের। কারণ হিসেবে তারা জানান, সদর ইউনিয়নের দলীয় মনোনয়নের জন্য লড়াই করছেন অন্তত ৫ জন হেভিওয়েট প্রার্থী যদিও তৃণমূল বর্ধিত সভা থেকে ৩ প্রার্থীর নাম পাঠানো হয়েছে কিন্তু জেলায় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে সাক্ষাতকার দিয়েছেন ৫ জন।
ফরম সংগ্রহ করা নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ২০১২ সাল থেকে পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা হেভিওয়েট নেতা আবুল কাশেম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতা একে এম মহিউদ্দিন বাবর (মুকুল), ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল উদ্দিন বিএসসি ও উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ওমর রিয়াজ চৌধুরী।
এদিকে, রাজাখালী ইউনিয়নে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছৈয়দ নূর, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার বাবুল।
শিলখালী ইউনিয়নের তালিকায় রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক কাজিউল ইনসান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল উদ্দিন, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক নুরুল আলম (সাবেক এমইউপি), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক তাজউদ্দিন ভুট্টো।
মগনামা ইউনিয়নে বহুল আলোচিত বর্তমান চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিমকে বাদ দিয়েই তালিকা পাঠিয়েছে তৃণমূল।
মগনামা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, বর্তমান চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম নৌকার মাঝি হচ্ছেন এমন কানাঘুষা থাকলেও তৃণমূল নেতা-কর্মীরা তার নাম প্রস্তাব করেনি কারণ তিনি বিএনপির দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন এবং গত সংসদ সদস্য নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা, নির্যাতনে অভিযোগ রয়েছে বলেও জানান তারা।
মগনামা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল এনাম, সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিন, সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম ও উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মোজাম্মেল হকের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান নেতৃবৃন্দ।
অপরদিকে, উজানটিয়া ইউনিয়নেও হেভিওয়েট প্রার্থীদের নাম পাঠিয়েছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। তাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শহীদুল ইসলাম চৌধুরী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল করিম, উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ও ১০২ জন ইয়াবা কারবারিকে আত্মসমর্পনে মধ্যস্থতা করিয়ে আলোচনায় আসা সাংবাদিক আকরাম হোছাইন ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ জামাল।
বারবাকিয়া ইউনিয়নের দলীয় মনোনয়ন পেতে মরিয়া ৫ হেভিওয়েট প্রার্থী। তারা হলেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বারেক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফিজুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান ওয়ারেচী, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এম কপিল উদ্দিন বাহাদুর ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জিএম আবুল কাশেম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বশির আলম বলেন, “তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে ৬টি ইউনিয়নের ২৫ জনের নাম চূড়ান্তভাবে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করছি কেন্দ্রীয় কমিটি যোগ্য প্রার্থীকে নৌকার মাঝি করলে ৬টি ইউনিয়নেই নৌকার বিজয় নিশ্চিত করা যাবে। কেননা জননেত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় পেকুয়ায় হাজার কোটি টাকার দৃশ্যমান উন্নয়ন হচ্ছে।”