রাঙ্গুনিয়ায় পুকুর থেকে রিপু আক্তার (২২) নামে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুর ১টার দিকে চন্দ্রঘোনা–কদমতলী গ্রামের ৩ নম্বর ওয়ার্ড খোন্দকার পাড়া এলাকার একটি পুকুর থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রিপু আক্তার স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড জান মোহাম্মদপুর গ্রামের মৃত মোজাম্মেল হকের মেয়ে। ৬ মাস আগে চন্দ্রঘোনা–কদমতলী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড কদমতলী গ্রামের মোহাম্মদ জামালের ছেলে মোহাম্মদ ইমরানের সাথে তার বিয়ে হয়।
চন্দ্রঘোনা–কদমতলী ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক বলেন, ‘৯৯৯’ এ ফোন করার পর ফায়ার সার্ভিসের রাঙ্গুনিয়া স্টেশনের কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসে। তার আগে স্থানীয় লোকজন পুকুর থেকে ওই তরুণীর নিথর দেহ উদ্ধার করেন।
তার শ্বশুরবাড়ি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে হলেও তিনি কী কারণে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে গেলেন সে ব্যাপারে জানতে চাইলে ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হাসান সিকদার পরিবারের বরাত দিয়ে বলেন, মোহাম্মদ ইমরানের সাথে প্রেমের সম্পর্কের সূত্রে বিয়ে হয়েছিল রিপু আক্তারের। অন্তঃসত্ত্বা এই নারী ইদানিং মানসিক নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। এজন্য ডাক্তারি চিকিৎসার পাশাপাশি ধর্মীয় চিকিৎসাও করছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন। আজ (গতকাল) শ্বশুরবাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে তিনি আধুরপাড়া গ্রামের মোল্লাপাড়া সালেহ আহমদ ফকির মাজার এলাকায় চলে যান। সেখানে স্থানীয়দের কাছ থেকে তার ফুফুর বাড়ির সন্ধানও করেন। সম্ভবত সেখানে তার ফুফুর বাড়িতেই যেতে চেয়েছিলেন। হয়ত তার শরীর খারাপ হলে মাজারের পুকুরে নামলে দুর্ঘটনাবশত পানিতে পড়ে গেলে আর ওঠতে পারেননি। ঘটনার পর থানার ওসি ও এসপি এসে তার চিকিৎসাপত্র দেখে গেছেন।
এদিকে অজ্ঞাত অবস্থায় উদ্ধারের পর ফেসবুকে ছবি দেখে স্বজনরা রিপু আক্তারের লাশ শনাক্ত করেন। তার বড় ভাই নেজামুল হক টিপু বলেন, ফেসবুকে ছবিতে দেখতে পাই বোনের ছবি। দ্রুত হাসপাতালে এসে দেখি তার লাশ পড়ে আছে। চলতি বছরের ১৮ মে আমার বোনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মানসিক নির্যাতন চালাতো। যৌতুকের দাবিতেই তারা আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমরা এই ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
রিপু আক্তারের মা মোরশেদা বেগমও একই অভিযোগ জানিয়ে বলেন, শাশুড়ি ফার্নিচারের জন্য প্রায়ই নানাভাবে নির্যাতন করতো। সে অসুস্থ, চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় কিছুদিনের জন্য বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও তারা দেয়নি। পরে আমি প্রায় এক সপ্তাহ মেয়ের সাথে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে আজ (শনিবার) সকাল ৮টার দিকে ঘরে আসি। এসেই দুপুরের দিকে শুনি তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে শুনি পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আমার মেয়ে এভাবে মরতে পারে না, তারাই পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে রিপু আক্তারের শ্বশুর মোহাম্মদ জামাল বলেন, আমার মেয়ে অসুস্থ থাকায় সকালে আমি আর আমার স্ত্রী মেয়ের শ্বশুরবাড়ি যায়। ঘরে পুত্রবধূ একা ছিল। এসে শুনতে পাই তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে শুনতে পাই আধুরপাড়া পুকুরে তার লাশ পাওয়া গেছে। তাকে আমরা নির্যাতন করতাম, বিষয়টা সঠিক নয়।
রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে গিয়ে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন সংগ্রহ করেছি। লাশ ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা হচ্ছে। এখন প্রাথমিকভাবে একটি ইউডি (আনইউজুয়াল ডেথ) মামলা হবে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এলে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।