পাম অয়েলের স্বপ্ন ও একজন নাজের হোসাইন

নাইক্ষ্যংছড়িতে আছে বাগান প্রক্রিয়াজাতের ব্যবস্থা হয়নি ১১ বছরেও

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি | সোমবার , ৭ নভেম্বর, ২০২২ at ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ

পাম অয়েল গাছের সম্ভাবনাময় এলাকা পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা। এখানে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অনাবাদি জমি। এসব জমিতে পাম গাছের চাষ করে তেল উৎপাদনের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল। তখন পাম বাগান করতে এগিয়ে এসেছিলেন অনেকে। কেউ কেউ শুরুও করেছিলেন। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পাম তেল প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাবে পাম চাষ শিল্পে রূপ পায়নি আজও। উদ্যোক্তারা এখন হতাশ। এমনই একজন উদ্যোক্তা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড পূর্ব হেডম্যান পাড়ার নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, ২০১১ সালে ৮ একর পাহাড়ি জমিতে ৩২০টি পাম গাছের চারা রোপণ করি। প্রতিটি চারা কিনেছিলাম ৩০০ টাকা করে। আজ এগারো বছর হলো। এর মধ্যে পরিচর্যায় অনেক টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এক টাকাও আয় হয়নি। বাগানের খরচ বহন করতে গিয়ে ঘরের গরু থেকে শুরু করে স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে।

তিনি জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পাম গাছ চাষে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিল কৃষি বিভাগ ও কয়েকটি কোম্পানি। তাদের কথায় তিনিসহ নাইক্ষ্যংছড়ির অনেকে পাম চাষে পা বাড়িয়েছিলেন। তিনি এক কোম্পানির কাছ থেকে চারা কিনেছিলেন। রোপণের ১৬ মাসের মাথায় প্রতিটি গাছে ফুল-ফল ধরেছিল। কিন্তুতেল প্রক্রিয়াজাত মেশিন না থাকায় সে ফল থেকে পাম অয়েল প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব হয়নি। বাকি সব চাষিরও একই অবস্থা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, প্রতি বছর তার পাম গাছে পাম ফল ধরে আর সে ফল পচে নষ্ট হয়। এ বছরও একই অবস্থা।

চাষি নাজের হোসাইন বলেন, সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব ও সহযোগিতা না পাওয়ায় সম্ভাবনাময় পাম চাষ শিল্পে রূপ নেয়নি। তার প্রত্যাশা, সরকারের সহযোগিতা পেলে তার মতো মানুষের স্বপ্ন পূরণ হবে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জাফর আলম বাঙালি বলেন, তেল উৎপাদনে যেতে হলে প্রক্রিয়াকরণ মেশিন দরকার। পাম চাষের সম্ভাবনা, প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন। বিনিয়োগের আগে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন নাকি ক্ষতির মুখে পড়বেন তা যাচাই বাছাই করে সব করতে হয়। এখন সব হারিয়ে নাজির হোসাইন বিপদে।

গত ৩ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা ফেরদৌসের সভাপতিত্বে জরুরি সভা হয়। সভায় উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার সামশুদ্দিন মো. রেজা, মৌজা হেডম্যান, চেয়ারম্যান ও উপজেলা সার্ভেয়ার মো. ওয়াহিদ উল্লাহ পারভেজ উপস্থিত ছিলেন। সভায় ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে প্রতিটি মৌজায় ৫ একর ভূমিতে সরিষা ও আখ চাষের ওপর পর্যালোচনাসহ নাজের হোসাইনের পাম বাগান নিয়ে আলোচনা হয়।

সভায় বক্তারা বলেন, পাম অয়েল গাছ একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। রোপণের ৩-৪ বছরের মধ্যেই ফলন দিতে শুরু করে। ফলন শুরুর পর থেকে প্রতি মাসে একটি করে কাঁদি দেয় এবং সেই কাঁদি থেকে তেল সংগ্রহ করা যায়। এই গাছ একটানা ২৫-৩০ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। অন্য যেকোনো ভোজ্যতেলের ফসল থেকে পাওয়া তেল অপেক্ষা এই তেল ১৫ গুণ বেশি হয়। ফুলটির মাংসল অংশকে বলা হয় মেসোকার্প, যা থেকে পাম তেল আহরণ করা হয়। আর বীজ বা শাঁস থেকে পাওয়া যায় পাম কারনেল তেল। প্রতিটি পাম ফল থেকে ৯ ভাগ পাম তেল ও ১ ভাগ পাম কারনেল তেল পাওয়া যায়।

সভার পরদিন ৪ নভেম্বর নাজের হোসাইনের পাম বাগান পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রতিনিধি সার্ভেয়ার ওয়াহিদ উল্লাহ পারভেজ।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. ওয়াহিদ উল্লাহ পারভেজ বলেন, বিষয়টি ইউএনওকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা ফেরদৌস বলেন, পাম অয়েল নিয়ে এ মুহূর্তে কোনো এজেন্ডা নেই। তবু নাজের হোসাইনসহ সব পাম চাষির কষ্টের কথা বিবেচনায় এনে পাম ফল প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে পাম অয়েল তৈরিতে কোনো উদ্যোগ নেয়া যায় কিনা সেই বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের অবহিত করব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্তঃবদলী কার্যক্রমে কোনো বাধা নেই
পরবর্তী নিবন্ধতিন দিনের মধ্যে মতামত জানাবে প্রশাসন