অবশেষে আবেদনের পাঁচ বছর পর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ‘আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার’ বা ‘ফুড সেফটি ল্যাবে’ পদ সৃজনে সম্মতি দিয়েছে সরকারের অর্থ বিভাগ। এর ফলে সাত ক্যাটাগরিতে অস্থায়ী আটটি পদে সৃজিত হলো। অবশ্য এজন্য চসিককে আটটি শর্তও দেয়া হয়েছে।
পদগুলো হচ্ছে- পরিচালক, রসায়নবিদ, মাইক্রোবায়োলজিস্ট, ফুড সেফটি এন্ড স্যানিটেশন অফিসার, ল্যাবরেটরী সহকারী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ও অফিস সহায়ক। জনবল নিয়োগ দিতে পারলে ২৮ কোটি ব্যয়ে নগরীর বিবিরহাটে স্থাপিত ল্যবটিতে কার্যকর সুফল মিলবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শর্তগুলো হচ্ছে- অস্থায়ীভাবে পদ সৃজনের সরকারি আদেশ (জি.ও) জারির পূর্বে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির অনুমোদন গ্রহণসহ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। নবসৃষ্ট পদসমূহের যাবতীয় ব্যয়ভার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে নির্বাহ করতে হবে। এ জন্য সরকারের রাজস্ব তহবিল হতে কোনো অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হবে না; পদসমূহ সংরক্ষণ ও স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। যে সকল পদ সিটি কর্পোরেশনের নিয়ােগবিধি/প্রবিধানমালায় অন্তর্ভুক্ত নেই সে সকল পদ কর্পোরেশনের নিয়োগগবিধি/প্রবিধানমালায় অন্তর্ভুক্ত নেই সে সকল পদ নিয়োগ বিধি/প্রবিধানমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, নিয়োগের জন্য জনবল কাঠামোর একটি অর্গানোগ্রাম স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল চসিক। ২০১৬ সালে পাঠানো এ অর্গানোগ্রামে পরিচালকসহ ২৩ পদে ৩৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনুমোদন চাওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১৪ পদের বিপরীতে ২৪ জনের অনুমোদন দেয় এবং বাকি পদগুলো আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পূরণের নির্দেশনা দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, আরবান পাবলিক অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট হেলথ সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (ইউপিইএইচএসডিপি) আওতায় এ খাদ্য পরীক্ষাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করে এডিবি। একই প্রকল্পের অধীন ঢাকায়ও একটি ফুড ল্যাব নির্মাণ করা হয়েছে। ৮ হাজার বর্গফুটের অবকাঠামোগত কাজ শেষে চট্টগ্রামের খাদ্য পরীক্ষাগারটিতে স্থাপন করা হয়েছে ৬টি আধুনিক ল্যাব। এরপর খাদ্যের ভেজাল শনাক্ত ও গুণাগুণ নির্ণয়ে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ৮২টি যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়। ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ল্যাবটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল ল্যাবটিতে খাদ্যের নমুনা পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছিল চসিক।
ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর ‘মান রক্ষা করা, প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন ও তার রক্ষণাবেক্ষনের ব্যবস্থা করা’ এই তিন শর্তে পরীক্ষার অনুমোদন দেয়। এর পর থেকে ল্যাবে সিটি করপোরেশনের খাদ্য পরিদর্শকদের মাধ্যমে সংগৃহীত খাদ্যপণ্য ও খাবার পানিসহ বিভিন্ন পানীয় পরীক্ষামূলক টেস্ট করা হচ্ছে। নানা খাদ্য পরীক্ষার যে উপকরণগুলো (যন্ত্রাংশ) এখানে স্থাপিত হয়েছে তা ঢাকা ছাড়া দেশের আর কোথাও নেই। ফলে পরিপূর্ণভাবে চালু হলে ল্যাবটি এই অঞ্চলের খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। যা ২০১৩ সালে প্রণীত এবং ২০১৬ সাল থেকে কার্যকর হওয়া খাদ্য আইন বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।