এক সময় বাঁশ, ঝাড়ে ঘেরা পরিত্যক্ত জায়গাটি এখন বিভিন্ন মৌসুমী সবজি ও ফল–ফলাদির বাগানে পরিণত হয়েছে। ৮ একর জায়গা জুড়ে এসব সবজি ও ফলের চাষ করেছেন কৃষক মিনারুল হক মিন্টু (৫৩)। এছাড়াও তার বাড়ির আঙ্গিনায় রয়েছে গরু ও ছাগলের খামার। রয়েছে নিজের চারটি পুকুরও। সফল এই কৃষকের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের পূর্ব খিতাপচর গ্রামে।
তার বাগান ও খামারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাগানে ঢুকতেই চোখে পড়ে মেসার্স হক এগ্রো ফার্ম লেখা। তারপর পেয়ারা গাছ দিয়ে শুরু হয় বাগান। এরপর দেখা যায় বিভিন্ন জাতের কুল গাছ। আপেল কুলের ভারে যেন গাছ ভেঙে পড়ার উপক্রম। আম গাছের ঢালে ঢালে মুকুল। এক পাশে কলা, নারিকেল, মালটা, লেবু, মৌসুমী সবজি এবং অপর পাশে বাংলা কদু, সুপারিসহ নানা জাতের গাছ। বাড়ির আঙ্গিনায় গেলে চোখে পড়ে গরু ও ছাগলের খামার। এছাড়া তার নিজের চারটি পুকুর আছে। সে পুকুর গুলোতে তিনি মিশ্র চাষ করেন। পুকুরে রয়েছে হাইব্রিড তেলাপিয়া, রুই, কার্প, সিলভার কার্পসহ নানা জাতের মাছ। বাগান, খামার ও পুকুর দেখলেই বুঝা যায় মিনারুল হক মিন্টু একজন সফল কৃষক। মিনারুল হক বলেন, ২০২০ সালে একটি পরিকল্পনা করি, কিভাবে বাড়ির পাশে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত জমিগুলো আবাদ করা যায়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ্র সাথে পরামর্শ করি। কারণ জায়গাটির পাশে বয়ে গেছে আরগাজীর খাল। সে খাল থেকে সহজে পানি সেচ করা যাবে। এরপর সেই পরিত্যক্ত জায়গাটি পরিষ্কার করে সেখানে প্রথমে মৌসুমী সবজির চাষ শুরু করি।
মিন্টু বলেন, সবজি চাষের পাশাপাশি ২০টি ছাগল কিনে ছাগলের খামার করি বাড়ির আঙ্গিনায়। সবজি চাষ ও ছাগলের খামার করতে তার খরচ হয় প্রায় ৫ লাখ টাকা। তবে ২০২০ সালে সবজি বিক্রি করে কিছুটা লাভ হলেও ক্ষতি হয় ছাগলের খামার করে। ছাগলের খামার শুরু করার ৫ মাসের মাথায় পিপিআর রোগে আক্রান্ত হয়ে ১১টি ছাগল মারা যায়। তবে হাল ছাড়িনি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি বৃহৎ আকারে আবারো মৌসুমী সবজির চাষ করি। মৌসুমী সবজির মধ্যে ছিল টমেটো, শিম, মুলা, বরবটি, বাংলা লাউ, মিষ্টি লাউ, ধনে পাতা, চালকুমড়া ও শশা। মৌসুমী সবজি চাষের পাশাপাশি আরো জায়গা বাড়িয়ে কুল, আম ও পেয়ারা চাষ করি। এর পর আস্তে আস্তে এসব গাছের ফল বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে শুরু করি।
বর্তমানে তার খামারে ছাগলের সংখ্যা ২৫টিতে দাঁড়ায়। ফলের বাগান ও ছাগলের পাশাপাশি গরু ক্রয় করে খামার শুরু করেন। এসব করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। ২০২২ সালের জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে ফলন ধরতে শুরু করে। সে সময় বিভিন্ন ফল, গরু ও ছাগল বিক্রি হয় প্রায় ২৭ লাখ টাকা। এতে লাভ হয় প্রায় ৯ লাখ টাকা। এছাড়াও পুকুরের মাছ বিক্রি করেও লাভবান হচ্ছে। স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন, শুরুতে মিন্টুকে তেমন একটা গুরুত্ব না দিলেও তিনি দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। তাকে দেখে এলাকার অনেক যুবক এখন বাগান ও খামার করতে উৎসাহী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ্ বলেন, অনাবাদি ও পতিত জমিতে কৃষকের আন্তরিকতার ফলে এই বাগান সৃজন করা সম্ভব হয়েছে। অন্যরা যদি আগ্রহী হয় এবং ফল বাগান করার সুযোগ থাকে তবে সেক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনসহ বিভিন্ন প্রকার সহায়তা প্রদান করবে।
বোয়ালখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সেতু ভূষণ দাশ বলেন, তাঁর খামারে বর্তমানে ৩৩ টি গরু ও ২৬ টি ছাগল আছে। খামারে গিয়ে গরু, ছাগলের অবস্থা ও বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচার উপায়সহ বিভিন্ন উপদেশ দিয়ে আসি। যাতে রোগে আক্রান্ত না হয়।