ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের উপর অবস্থিত হাজারো স্মৃতিগাঁথা নিয়ে থাকা সেই প্রাচীন শুভপুর ব্রিজটির স্মৃতি আর ধরে রাখা হয়তো সম্ভব হবে না। কারণ বারবার নানাভাবে এর গুরুত্ব তুলে ধরার পরও সংস্কার বা পুনঃনির্মাণ হয়নি। অথচ শুভপুর ব্রিজটি মীরসরাই উপজেলার সাথে ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, উত্তর ফটিকছড়ি, খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলায় যোগাযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ব্রিজটির সংস্কার ও পুনঃনির্মাণের জন্য কয়েক বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন এই তিন জেলার জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষ।
ধসে পড়ার আশঙ্কায় ব্রিজের মুখে লোহার পিলার দিয়ে পথ বন্ধ করে দেওয়ার পরও ঝুঁকি নিয়ে হালকা যান চলাচল করছে। দীর্ঘ সময় ধরে জরাজীর্ণ এই ব্রিজ দিয়ে ভারী যানবাহন বন্ধ থাকায় মীরসরাই-ছাগলনাইয়া উপজেলার হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতিদিন অর্ধশত কিলোমিটার পথ ঘুরে বিকল্প পথে অর্থ ও সময় নষ্ট করে বেশিরভাগ যানবাহনকে গন্তব্যে যেতে হয়।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের কথা বিবেচনায় নিয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ফেনী নদীতে শুভপুর ব্রিজটি স্থাপন প্রস্তাবনা দেয়। এরপর ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ৩৭৪ মিটার দীর্ঘ ফেনী নদীতে শুভপুর ব্রিজ নির্মাণ করে। দীর্ঘ ৬৯ বছর ধরে এ ব্রিজে যানবাহন চলাচল করেছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শুভপুর ব্রিজ এলাকায় কয়েক দফায় মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে সম্মুখযুদ্ধ হয়। ওই সময় গোলার আঘাতে সেতুটি বিধ্বস্ত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে কয়েক দফায় ব্রিজটি মেরামত করলেও পুনঃনির্মাণ করা হয়নি।
ফেনী নদীতে ব্রিজের পিলারের নিকটবর্তী স্থান থেকে বালু উত্তোলনের ফলে কয়েকটি পিলারের গোড়া থেকে মাটি সরে গেছে। ইস্পাতের পাতের ওপর নির্মিত ব্রিজটি ধসে পড়লে বড় ধরনের প্রাণহানি হওয়ার পাশাপাশি এ অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।
উপজেলার ১ নম্বর করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন জানান, শুভপুর ব্রিজে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চলছে। ব্রিজটি পুনরায় নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি। এটি পুনঃর্র্নিমিত হলে এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে একটি বড় স্বপ্ন পূরণ হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ফেনী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী ডক্টর মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ বলেন, শুভপুর ব্রিজটি পুনঃনির্মাণের জন্য ডিজাইন তৈরি ও সয়েল টেস্ট করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যে ব্রিজটি চার লেইন বিশিষ্ট হবে। ব্রিজটি নির্মিত হলে ফেনী, চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি জেলায় সড়ক যোগাযোগ উন্নত হওয়ার পাশাপাশি রামগড়ে নির্মিতব্য স্থলবন্দরের পণ্য পরিবহনেও গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কিন্তু জনমনে প্রশ্ন এমন আশ্বাস গত অর্ধযুগ ধরেই শুনে আসছে জনগণ। বাস্তবে এই ব্রিজটি নির্মাণ না হলে জনভোগান্তি বাড়বে অনেকভাবে।