আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর ভোট প্রাপ্তিতে বা প্রচারণার পক্ষে ব্যবহৃত হতে পারে এমন উন্নয়ন স্কিম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না করতে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। উপজেলা পরিষদের নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে চট্টগ্রামসহ দেশের সকল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পৌর মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের এ নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে উন্নয়ন স্কিমের পাশাপাশি অনুদান না দিতেও তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অনুদান বা অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে না যা কোনো প্রার্থীর ভোট প্রাপ্তি বা প্রচারণার কাজে প্রভাব বিস্তার করবে। জানা গেছে, গত মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম এর স্বাক্ষরে গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত ‘নির্বাহী আদেশ’–এ জারি করা হয়। এতে উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন প্রতিষ্ঠনাগুলোর জন্য ১০ টি নির্দেশনা দেয়া হয়। যা নির্বাচনের পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ আদেশে বর্ণিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে, শৈথিল্য প্রদর্শন করলে কিংবা অবহেলা করলে উক্ত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বা জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশ, আইন বা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নির্দেশনায় যা আছে : নির্দেনা অনুযায়ী, স্ব–স্ব এলাকায় আইন–শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আইন–প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করতে হবে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সময়ে সময়ে যে সব আদেশ বা নির্দেশ জারি করেছে কিংবা করবে তা প্রতিপালন করতে হবে। নির্বাচনী মিছিল, সভা ও প্রচারণা যাতে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কোনো নির্বাচনী অফিস বা প্রতীক বা পোস্টার নষ্ট করার যে কোনো প্রচেষ্টা রোধে সামাজিক প্রতিরোধ গঠনে সহায়তা করতে হবে।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কোনো অফিস, যানবাহন এবং অন্যান্য সম্পত্তি কোনো প্রার্থীর নির্বাচনের কাজে কোনভাবেই ব্যবহার করা যাবে না উল্লেখ করে বলা হয়, মাশুল পরিশোধ করেও ব্যক্তিগত কাজে কোনো যানবাহন ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া যাবে না।
নির্দেশনা অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা–কর্মচারীগণ কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী কাজে বা প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তবে ভোটকেন্দ্র নির্মাণসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সকল কাজে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহায়তা প্রয়োজন হলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান তা প্রদান করবে। এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ তাদের পদমর্যাদা, সরকারি সুযোগ সুবিধা ইত্যাদি কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না বলেও উল্লেখ করা হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্বাহী আদেশে বলা হয়, আগামী ৮ মে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদের ১ম পর্যায়ে ১৫২টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীতে কয়েকটি পর্যায়ে অবশিষ্ট উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সরকার জাতির কাছে সাংবিধানিকভাবে দায়বদ্ধ। অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও ভয়ভীতিহীন পরিবেশে উক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। নির্বাচন কমিশনের এ দায়িত্ব সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য সরকারি অফিস ও সংস্থাসমূহ সকল প্রকার সহযোগিতা করতে আইনতঃ বাধ্য। এ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারি সাহায্য–সহযোগিতার পাশাপাশি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নিকট হতেও প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা অত্যাবশ্যক।
এতে আরো বলা হয়, নির্বাচনের সময় দেশের সর্বত্র শান্তি–শৃঙ্খলা রক্ষা করা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্বশর্ত। নির্বাচনের জন্য শান্তি–শৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব মূলতঃ সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা কর্তৃপক্ষের উপর অর্পিত থাকলেও এ ব্যাপারে স্থানীয় জনসাধারণ এবং নেতৃবৃন্দের সাহায্য ও সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। শান্তি–শৃঙ্খলা রক্ষার এ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ইউনিয়ন পরিষদসমূহের দায়িত্ব বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।