চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেব চিহ্নিত করেছে নগর পুলিশ। ইতোমধ্যে কেন্দ্রগুলো কড়া নজরদারির আওতায় এনেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন এলাকায় তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, একাধিক মামলার আসামি, কিশোর গ্যাং লিডারসহ বিভিন্ন দাগী অপরাধীদের আনাগোনা বেড়েছে। কিছু এলাকায় পুরনো শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও ফিরে এসেছে। মূলত ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তারা অংশগ্রহণ করছে। আবার বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থী হিসেবে রয়েছে বিতর্কিত ব্যক্তিও। তাতে সংঘাতের বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনাও ঘটছে। আগামীকাল চসিক নির্বাচন ঘিরে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নজরদারি রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জানতে চাইলে নগর পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের উপকমিশনার আব্দুল ওয়ারিশ গতকাল আজাদীকে বলেন, নির্বাচন ঘিরে সব ওয়ার্ড ও প্রার্থীদের ওপর নজরদারি রাখা হচ্ছে। এরমধ্যে পুলিশের তালিকায় ৪১৭টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের উপর বিশেষ নজরদারি রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে কাজ করছে। উপ কমিশনার বলেন, নির্বাচনে সংঘাতের আশঙ্কা স্বাভাবিকভাবে থাকবে। তবে সন্ত্রাসীরা যাতে সে সুযোগ না পায় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুব সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
জানা গেছে, পাঠানটুলি ওয়ার্ডে সম্প্রতি দুটি হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট আকারে রূপ নিয়েছে। যদিও গত ১২ জানুয়ারি আজগর আলী বাবুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন এক বিদ্রোহী প্রার্থী। তবে তার পক্ষে স্ত্রী নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ায় মাঠ সরগরম রয়েছে। এরমধ্যে তার কয়েকজন সমর্থক ক’দিন আগে হাইকোর্ট থেকে জামিনে বেরিয়ে এসেছে। এর আগে গত নভেম্বর আগ্রাবাদ কমার্স কলেজের সামনে মারুফ চৌধুরী মিন্টু খুনের ঘটনায় মোস্তফা কামাল টিপুসহ কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছে নিহতের পরিবার। নিহত মিন্টু সাবেক কাউন্সিলর ও বর্তমান বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিল।
চান্দগাঁও ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থনপ্রাপ্ত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এই ওয়ার্ডে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে রয়েছে সিডিএ স্কুল, ওয়াপদা কলোনি, ফরিদের পাড়া প্রাইমারি স্কুল, এনএমসি স্কুল ও শমসের পাড়া চানমিয়া প্রাইমারি স্কুলসহ কয়েকটি কেন্দ্র।
লালখান বাজার ওয়ার্ডেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও স্থানীয় প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতার সমর্থকদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘর্ষের ঘটনায় চিহ্নিত এক কিশোর গ্যাং লিডারসহ বেশ কয়েকজন আসামিকে অংশ নিতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচনী ইস্যুতে আলমগীর হোসেন নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।
পূর্ব মাদারবাড়ি ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সালাউদ্দিনের বাসা ও নির্বাচনী ক্যাম্পে গুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে দায়ী করেছেন তার সমর্থকরা। এছাড়া নগরীর জালালাবাদ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চসিক নির্বাচন ঘিরে চট্টগ্রাম কিংবা দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীদের কয়েকজনকে ক’দিন ধরে এলাকায় অবস্থান করতে দেখা যাচ্ছে। এসব সন্ত্রাসী বিভিন্ন প্রার্থীর হয়ে নির্বাচনে কাজ করছে। পুলিশের বিশেষ শাখার তথ্য মতে, নির্বাচনে সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে ৪ জন করে অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য থাকলেও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্বে থাকবে ৬ জন সশস্ত্র পুলিশ। পুলিশের সাথে কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন ১২ জন করে আনসার সদস্য। কেন্দ্রের বাইরে টহলরত পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশও নিয়োজিত থাকবে।