মার্চের শুরুর দিকে বাংলাদেশে যখন প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়, তখনো এই শহরের সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ২৫ মার্চ থেকে বদলে যায় সবকিছু। দেশজুড়ে শুরু হয় লকডাউন। আর সে লকডাউনে পড়ে স্তব্দ হয়ে যায় চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন। পুরো শহরের ন্যায় সর্বদা কোলাহল মুখর থাকা স্টেডিয়াম এলাকা পরিণত হয় নির্জন জনপদে। বন্ধ হয়ে যায় সব খেলাধুলা। স্টেডিয়ামগুলোর প্রধান ফটকে ঝুলে যায় তালা। মাঠগুলো পরিণত হয় ঘাসের খামারে। প্রায় ছয় মাসেরও বেশি সময় স্টেডিয়াম ছিল নির্জন এলাকা। তবে ধীরে ধীরে ক্রীড়াঙ্গন সংশ্লিষ্টদের আনাগোনা বাড়তে থাকে স্টেডিয়ামে। কিন্তু খেলাধুলার কপাল খুলেনি। মাঠে গড়ায়নি কোন খেলাধুলা। মার্চ থেকে করোনা শুরু হলেও এখনো করোনামুক্ত হয়নি দেশ। তবে এরই মধ্যে মাঠে গড়াতে শুরু করেছে খেলাধুলা। কিন্তু চট্টগ্রামে সেভাবে মাঠে গড়ায়নি কোন খেলাধুলা। মুজিববর্ষ ফুটবল আর বিচ্ছিন্ন কিছু খেলাধুলা বাদ দিলে এখনো বন্ধ চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন। চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা কিংবা চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন পারেনি তাদের নির্ধারিত ফুটবল কিংবা ক্রিকেট লিগ মাঠে নামাতে। এ বছরের ১৭ মার্চ বন্ধ হয়ে যায় ফুটবল লিগ। যা আর মাঠে গড়ায়নি। কবে আবার মাঠে গড়াবে এই ফুটবল লিগ তাও নিশ্চিত নয় এখনো।
চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম শহীদুল ইসলাম জানান ১৭ মার্চ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে প্রিমিয়ার লিগের একটি করে রাউন্ড আর প্রথম বিভাগ লিগের প্রায় অর্ধেকের মতো শেষ হয়েছিল। এরপর আর মাঠে নামানো গেলনা ফুটবল লিগ। এছাড়া দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লিগও মাঠে নামানো সম্ভব হয়নি। কবে যে আবার মাঠে নামবে ফুটবল তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। যদিও ঢাকায় এরই মধ্যে ফেডারেশন কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হয়ে গেছে। বিদেশি দলও সফর করে গেছে বাংলাদেশে। কিন্তু চট্টগ্রামে এখনো ফুটবল লিগ মাঠে নামানোর কোন সুখবর নেই।
অপরদিকে গত আগস্ট থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল ক্রিকেট মৌসুম। কিন্তু করোনার কারণে তাও শুরু করা সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট সম্পাদক আবদুল হান্নান আকবর জানান, আগস্ট থেকে ক্রিকেট মৌসুম শুরু করার নির্ধারিত সময় ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা আর করা হয়নি। এখনো ক্রিকেট শুরুর করার কোন সম্ভাবনার কথা জানাতে পারেননি তিনি। জানাবেনওবা কি করে। এখনো গঠিত হয়নি চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার নতুন সাব কমিটি। তাই আপাতত মাঠে খেলাধুলা শুরুর কোন সবুজ সংকেত নেই জেলা ক্রীড়া সংস্থায়। ফুটবল কিংবা ক্রিকেটের পাশাপাশি হকি, ব্যাডমিন্টন, হ্যান্ডবল, ভলিবলসহ অন্য সব ইভেন্টও মাঠে গড়াতে পারেনি। করোনার আগে থেকেই এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম বন্ধ রয়েছে সিটি কর্পোরশেনের নির্বাচনের জন্য। কারণ জিমনেসিয়ামে রয়েছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। যা গত প্রায় এক বছর ধরে রয়েছে সেখানে। ফলে করোনার সংকট কিছুটা কমলেও জিমনেসিয়াম না থাকায় আয়োজন করা যাচ্ছেনা ইনডোর গেমস গুলোও। করোনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তবে এরই মধ্যে দেশ বিদেশে সব ধরনের খেলাধুলা শুরু হয়ে গেছে। ঢাকায় দুটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট সম্পন্ন করেছে বিসিবি। ফুটবলও শুরু হয়ে গেছে। আগামী মাসে বাংলাদেশ সফরে আসবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল। সব মিলিয়ে বলতে গেলে খেলাধুলা এক রকম শুরু হয়ে গেছে।
এ অবস্থায় কি ভাবছে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা। সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী জানান, যেহেতু করোনার কারণে বলতে গেলে বছরের বেশিরভাগ সময় চলে গেছে তাই এখন নতুন করে শুরু করতে চান তারা। আগামী জানুয়ারির শেষ দিকে মুজিববর্ষ কর্পোরেট কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট শুরুর করতে চায় সিজেকেএস। তার পরপরই ক্রিকেট লিগ শুরুর করতে চায় সিজেকেএস। না হয় তখন যদি ফুটবল লিগ শুরু করতে হয় তাহলে মাঠের উইকেট নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে ক্রিকেট লিগ আর করা যাবেনা। ক্রিকেট লিগ শেষে ফুটবলটা মাঠে নামাতে চায় সিজেকেএস। যদিও গত বছরের অসমাপ্ত লিগের কি হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলতে পারেননি তিনি। ক্লাব গুলোকে নিয়ে সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানালেন মশিউর রহমান চৌধুরী।
তিনি জানান বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এপ্রিলে ফুটবল লিগ শুরু করতে জেলা সমূহের কাছে একটি নির্দেশনা পাঠিয়েছে। সে বিষয় নিয়েও আলোচনার কথা জানালেন তিনি। এদিকে আগামী ২৭ জানুয়ারি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে জিমনেসিয়ামের ইনডোর গেমস গুলো চালু করারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মশিউর। যদিও তার আগে সাব কমিটি গুলো গঠন করে ফেলতে চায় জেলা ক্রীড়া সংস্থা। তাহলে নিজস্ব পরিকল্পনার মাধ্যমে সবগুলো ইভেন্ট শুরু করতে পারবে। করোনার পেটে চলে যাওয়া পুরানো বছরের দুঃসহ স্মৃতি পেছনে ফেলে নতুন বছরে নতুন যাত্রার প্রত্যাশায় এখন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা।