১২ শিল্পীর রংতুলিতে বঙ্গবন্ধু

ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে শিল্পকলায় ৩ দিনব্যাপী প্রদর্শনী

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যার হাত দিয়ে গড়ে উঠেছে, যার কণ্ঠদীপ্ত আহ্বানে অস্ত্রহীন মানুষও যুদ্ধে নেমেছে, সেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক জীবনে যেমন অর্জন করেছেন শীর্ষ সাফল্য, একইভাবে রাষ্ট্র নায়ক হিসেবেও দেশের মানুষের মনে ঠাঁই করে নিয়েছেন। ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট ১৯৭২ সালে এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আপনার শক্তি কোথায়’? বঙ্গবন্ধু উত্তরে বলেছিলেন, ‘আমি আমার জনগণকে ভালোবাসি।’ ‘আর আপনার দুর্বল দিকটা কী’? বঙ্গবন্ধুর উত্তর, ‘আমি আমার জনগণকে খুব বেশি ভালোবাসি।’ যে মানুষ এ কথা বলতে পারেন তিনি যুগে যুগে জন্মান না। আর জন্মান না বলেই ১৯৭১ সালে স্বনামধন্য বিদেশি সংবাদ মাধ্যম নিউজউইক শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজনীতির কবি’ উপাধি দেয়। বিবিসি জরিপে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি, মানুষেরই ভোটে।
বঙ্গবন্ধুকে বর্ণনা করতে গেলে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর উক্তি সবার আগে মনে পড়বে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, তার সিদ্ধান্ত, অবিচলতা নিয়ে বলতে গিয়ে ক্যাস্ট্রো বলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় তিনি হিমালয়ের মতো।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, চট্টগ্রামের সহযোগিতায় ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ভারতীয় হাই কমিশন, ঢাকা এবং ভারতীয় সহকারী হাই কমিশন, চট্টগ্রামের উদ্যোগে গতকাল শুক্রবার থেকে আগামীকাল রোববার পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, চট্টগ্রামের আর্ট গ্যালারিতে আয়োজন করা হয়েছে গ্রুপ শিল্প প্রদর্শনী- ‘বঙ্গবন্ধু-এ যুগের রাষ্ট্র নায়ক’। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টায় শিল্পকলা একাডেমির আর্ট গ্যালারিতে মঙ্গল প্রদীপ প্রঁজ্বলনের মাধ্যমে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান ও চট্টগ্রাম জেলা কালচারাল অফিসার মোসলেম উদ্দিন আহমেদ।
বিশিষ্ট কিউরেটর রিপন সাহার তত্ত্বাবধানে প্রদর্শনীতে ১২ জন শীর্ষস্থানীয় প্রতিশ্রুতিশীল চিত্রশিল্পীর বিভিন্ন মাধ্যমে তৈরি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন আবদুল মান্নান, মো. মুনিরুজ্জামান, সৈয়দা মাহবুবা করিম মিনি, কাদের ভূঁইয়া, সঞ্জীব দাস অপু, কিরীটী রঞ্জন বিশ্বাস, প্রশান্ত কর্মকার বুদ্ধ, এস এম মিজানুর রহমান, মো. জাকির হোসেন পুলক, মনজুর রশিদ, সৌরভ চৌধুরী ও মানিক বণিক। এদিকে প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া চিত্রকর্মগুলো দেখে মনে হচ্ছে এ যেন বঙ্গবন্ধুর খণ্ডিত জীবনকাব্য। নানা মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবনকর্ম উঠে এসেছে শিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায়। শিল্পী আবদুল মান্নান অ্যাক্রাইলিক কালারে বঙ্গবন্ধুর দুটো ভিন্ন আঙ্গিকের ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন ক্যানভাসে। একটি হাস্যোজ্জ্বল বঙ্গবন্ধু আর দ্বিতীয় গভীর ভাবনায় মগ্ন এক রাজনৈতিক কবি। মো. মুনিরুজ্জামানের কাছে বঙ্গবন্ধু যেন সদা উজ্জ্বল দীপ্যমান। সৈয়দা মাহবুবা করিম মিনির ক্যানভাসে বঙ্গবন্ধু ঘাতকের বুলেটে ক্ষতবিক্ষত। রক্তাক্ত হয়েও তিনি যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না, তাঁর গড়া দেশের মানুষ তাঁর উপরই গুলি চালাতে পারে! কাদের ভূঁইয়ার ক্যানভাসে বঙ্গবন্ধু জয় বাংলায় হাস্যোজ্জ্বল, আবার অন্যখানে বজ্রকন্ঠে শত্রুর প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণেও। সঞ্জীব দাস অপুর চোখে বঙ্গবন্ধু তেজোদীপ্ত, কখনো চিরচেনা পাইপ হাতে চোখ বুঁজে ভাবছেন। কিরীটি রঞ্জন বিশ্বাসের চোখে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চিত্র ভেসে উঠেছে। প্রশান্ত কর্মকার বুদ্ধের কাছে বঙ্গবন্ধুর হাত জাতিকে যেন আশ্বস্ত করছে, আবার স্নেহের কন্যা শেখ হাসিনার সাথে হাস্যোজ্জ্বল, কখনো ভাবনায় নিমগ্ন, কখনো আবার জনতার কাতারে ধ্বনিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জয়ধ্বনি। এসএম মিজানুর রহমান বঙ্গবন্ধুকে উপস্থাপন করেছেন ভিন ভিন্ন ভাবে। জাকির হোসেন পুলকের কাছে বঙ্গবন্ধু ফুটে উঠেছেন তাঁর চশমার আড়ালে। মঞ্জুর রশিদ আর সৌরভ চৌধুরীর চোখে তরুণ ও পরিণত বয়সের চিঠির ভাঁজে ফুটে উঠেছেন বঙ্গবন্ধু। মানিক বনিকের চোখে বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত দানকারী, কখনো জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে আত্মহারা। প্রদর্শনীটি বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এর আগে প্রদর্শনীটি ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট ও যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনতুন বছরে নতুন প্রত্যাশা
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬