চট্টগ্রামের মূল ভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন জনপদ সন্দ্বীপ। এককালের ৬০০ বর্গমাইলের বেশি সন্দ্বীপ নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ৬০ বর্গমাইলে এসে ঠেকেছে। তবে সম্প্রতি বন্ধ হয়েছে নদী ভাঙন। সন্দ্বীপের চারপাশে জেগে উঠেছে বিশাল চর। জেগে ওঠা চরকে ঘিরে আশায় বুক বাঁধছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কেউ ফিরে পেতে চান নদীগর্ভে বিলীন হওয়া বাপ-দাদার ভিটেমাটি। কেউ কেউ ভেঙে যাওয়া ভিটেমাটি সংস্কার করে গড়ে তুলেছেন জীবিকার সন্ধান।
সন্দ্বীপ রহমতপুর ইউনিয়নের দলইবাড়ির বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় তাদের বাড়ির বিরাট অংশ। প্রকৃতির কৃপায় ঘর-ভিটেসহ কয়েকটি নারকেলগাছ রক্ষা পায় ভাঙনের কবল থেকে। যদিও কয়েক বছর পূর্বে এখান থেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেন শাহাদাত। সম্প্রতি জেগে ওঠা চরের আয়তন বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং চরের মাটি শক্ত হওয়ায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের আকর্ষণ করতে নিজ ভিটায় গড়ে তুলেছেন ছোটখাট রেস্টুরেন্ট।
তিনি জানান, এখানে প্রতিদিন পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করলে পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়বে। তার দাবি, যারা নিজ উদ্যোগে পর্যটন শিল্পের বিকাশে ভূমিকা রাখছেন তাদেরকে বিদ্যুতের সুবিধা দিতে হবে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজ ও ইউএসটিসির ১৪ জন শিক্ষার্থীর একটা দল ঘুরতে আসে সন্দ্বীপে। এই দলের একজন ডা. মকছুদুর রহমান বলেন, গত কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম চট্টগ্রামের আশেপাশে দুয়েকদিনের জন্য কোথায় ঘুরে আসা যায়। এর মধ্যে ফেসবুকে সন্দ্বীপের নৌযানের ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে প্রতিবাদমূলক একটি লেখা পড়ে সন্দ্বীপ যাওয়ার ভূত চাপে মাথায়। ভাবলাম সন্দ্বীপ যাব। কিন্তু ওখানে গিয়ে থাকব কোথায়? নিরাপত্তা কেমন? সাগর পাড়ে তাঁবুতে থাকার চিন্তা মাথায় আসে। তিনি জানান, ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখ আমরা ১৪ জন শিক্ষার্থী স্পিডবোটে রওনা দিই। সন্দ্বীপ পৌঁছে সিএনজি টেঙিতে যাই কালাপানিয়ার দিঘির পাড়ে। সেখানে ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে সি-ভিউ পিকনিক স্পট। আমরা সেখানে তাঁবু টাঙিয়ে সাগর তীরবর্তী সৌন্দর্য দেখতে বেরিয়ে পড়ি। সূর্যাস্তের সময় বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকা, সাগরের দিকে বয়ে চলা ছড়ায় জেলে নৌকার বিচরণ-এসব দৃশ্য মন ভোলানিয়া।
সন্দ্বীপের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে বলতে গিয়ে ডা. রাকিব বলেন, এখানকার যে বিষয়টা অবাক করেছে, সেটা হলো মানুষের আতিথেয়তা। স্থানীয় লোকজন, জনপ্রতিনিধি সবাই অতিথিপরায়ণ ছিলেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় এই জায়গাটা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য অসাধারণ একটা গন্তব্যস্থল হবে বলে মনে হয়েছে তার।
‘এঙপ্লোর সন্দ্বীপ আইল্যান্ড ২০২২’ শীর্ষক স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ওশানোগ্রাফি ডিপার্টমেন্টের তিনটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে পড়েন সন্দ্বীপের উদ্দেশ্যে। ৬০ জনের এ বহরে নেতৃত্ব দেন ওশানোগ্রাফি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান ড. মোসলেম উদ্দীন মুন্না। তিনি আজাদীকে বলেন, সন্দ্বীপে রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। পশ্চিমের মেঘনা মোহনায় জেগে ওঠা নতুন চরের সবুজ ঘাস, দ্বীপপুঞ্জ, পূর্বে সন্দ্বীপ চ্যানেলের উত্তাল ঢেউ ও ম্যানগ্রোভ বনসহ প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য রয়েছে অপরূপ নৈসর্গিক পরিবেশ। বিশেষ করে মেঘনা নদীর তীর ঘিরে সন্দ্বীপের সাথে লাগোয়া ও বিছিন্ন দ্বীপগুলোতে যথাযথ নিরাপত্তা ও যাতায়াতের সুবিধা নিশ্চিত করে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটানো গেলে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে।
বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার কথা জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসা, যাতে সন্দ্বীপে পর্যটকদের চলাচল নির্বিঘ্ন ও স্বাচ্ছন্দ্য হয়।
নতুন জেগে ওঠা চরগুলোকে কেন্দ্র করে সন্দ্বীপে পর্যটন শিল্পের বিকাশের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে বলে জানান সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা। তিনি আজাদীকে বলেন, নতুন এ চরগুলোকে পর্যটকদের উপযোগী করে গড়ে তোলা যায় কিনা এজন্য শীঘ্রই একটা টিম সন্দ্বীপ পরিদর্শনে আসবে। এ নিয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে আলাপ হয়েছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা পর্যটন কেন্দ্রগুলোর উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।