‘নগরীর ফুসফুস সিআরবিতে আমরা কোনো হাসপাতাল চাই না’

| বৃহস্পতিবার , ১৫ জুলাই, ২০২১ at ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ


প্রাকৃতিক সবুজবেষ্টিত সিআরবিতে হাসপাতাল নয়
প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার দেব
চট্টগ্রামের জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে ঢাকার মতো। বাড়তি এ জনসংখ্যার চাপ সামলাতে বসতবাড়ি গড়ে তুলতে প্রকৃতির সবুজ জায়গা ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ক্ষতি হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশের। তাই চট্টগ্রাম শহরে বর্তমানে মুক্তভাবে শ্বাস নেওয়ার জায়গা হাতে গোনা। চট্টগ্রাম শহরের যে কয়েকটি জায়গা আমার খুব প্রিয় তার মধ্যে প্রকৃতিঘেরা সিআরবি অন্যতম। শহরের ভিতরেই সিআরবিতে এলেই মনটা আনন্দে ভরে উঠে কারণ এ এলাকায় প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেওয়া য়ায়। এখানে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের বহু স্মৃতিবিজড়িত রেলওয়ে প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন সবুজ পাহাড় ও শতবর্ষের সাক্ষী বিভিন্ন গাছ দ্ধারা ছায়ায় ভরা অপূর্ব মনোরম প্রকৃতি। এ মুক্ত পরিবেশে প্রতিদিন সকাল বিকাল শত শত প্রাতঃ ও সান্ধ্যভ্রমণকারীসহ অনেক পিতামাতা বাচ্চাদের এখানে নিয়ে আসেন সতেজ নিঃশ্বাস নিতে। ইদানীং এটাকে চট্টগ্রামের ফুসফুস বলা হচ্ছে কারণ শহরের প্রাণকেন্দ্রের এই জায়গাটি আমাদের সব যান্ত্রিকতা ও কৃত্রিমতা ভুলিয়ে দেয় এক নিমিষেই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় এ জায়গাটির প্রতি মানুষের এ আগ্রহ আরও বেড়েছে মুক্তমঞ্চে পহেলা বৈশাখ সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মিলনমেলায় পরিণত হওয়ায়। তাই ডিসি হিলের বাধ্যবাধকতার কারণে এ জায়গাটা চট্টগ্রামবাসীর আবেগের জায়গায় পরিণত হয়েছে। যতটুকু জেনেছি এটার গুরুত্ব অনুধাবনপূর্বক সিডিএ প্রায় দশ কোটি টাকার একটা প্রজেক্ট বাস্তবায়নে আগ্রহী ছিল।
রেলওয়ে যদি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে মিলে এ জায়গায় হাসপাতাল গড়ে তোলে, সৌন্দর্যময় মুক্ত পরিবেশের বিপর্যয়ের সাথে সাথে উক্ত স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা সামগ্রিক সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কার্যক্রম গুলোও হারিয়ে যাবে। বিভিন্ন পত্রিকায় রেলওয়ের এক প্রকৌশলীর দেওয়া একটি বিজ্ঞপ্তি থেকে জানলাম পরিবেশের ক্ষতি না করেই নাকি হাসপাতাল করা হবে। পক্ষান্তরে, মজার ব্যাপার হলো রেলওয়ের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও চান না এখানে হাসপাতালটি হোক। রেলওয়ের জায়গা কিন্তু জনগণেরই জায়গা, জনগণের ভালোটাই রেলওয়ে তথা সরকারের বোঝা উচিত। রেলওয়ের কি জায়গার অভাব? চট্টলাবাসীর আবেগের এ জায়গায় কেন স্বার্থান্বেষী মহলের সাথে হাত মিলিয়ে হাসপাতাল করতে হবে? মোট কথা আমরা চট্টলাবাসী বিধাতার দেওয়া প্রাকৃতিক অক্সিজেনের উৎস ধ্বংস করে উচ্চমূল্যে হাসপাতালের সিলিন্ডারের অক্সিজেন চাইনা।
পরিশেষে বলবো, দেশকে এগিয়ে নিতে ও ভালো মানের স্বাস্থ্যসেবা দিতে হলে, হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে প্রাকৃতিক সবুজবেষ্টিত সিআরবিতে না হয়ে শহরের অদূরে রেলওয়ের অন্য কোনো জায়গায় হলে শহরের মানুষ অন্তত এখানে এসে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারবে এবং রক্ষা করা যাবে প্রকৃতি ও সংস্কৃতি।

আসুন সবাই মিলে সৌন্দর্যের লীলাভূমিকে রক্ষা করি
ফারহানা ইসলাম রুহী
বন্দর নগরীতে কোলাহল মুক্ত এই নিরিবিলি খোলামেলা সিআরবি’র মুক্ত পরিবেশ ভালোবাসেনা এমন লোক খুঁজে পেতে কষ্ট হবে। জটিলতায় ভরা এই জাগতিক জীবনে একটু প্রশান্তির ছোঁয়া এনে দেয় শত বর্ষীয় গাছের ছায়া সুনিবিড় পাহাড়বেষ্টিত পাদদেশ। ছায়াতল ঘেরা ঢালু খোলা প্রান্তরের আবাস শিশু কিশোর আবাল বৃদ্ধ বনিতার হৃদয়জুড়ে। এই নগরীর সিআরবি ঐতিহাসিক স্থান, সবুজের সমারোহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভরপুর এক স্বর্গভূমি। প্রাণকেন্দ্র ও নগরীর ফুসফুস, যাকে বীর চট্টলার জনগণ আজীবন ভালোবাসে। এই এলাকায় আধুনিক হাসপাতাল গড়ার কথা শুনে, মনে হয়েছে কলিজা বের করে কে যেন পেরেক ঠুকে দিয়েছেন! জনবহুল এই দেশে শতবর্ষী বৃক্ষের সমারোহ খুঁজে পাওয়া আজকাল মুস্কিল হয়ে পড়েছে। উন্নতমানের হাসপাতাল প্রয়োজন আছে তবে সিআরবি’র এই মন ছুঁয়ে যাওয়া হৃদয়ের আকুলতা মাখা শান্ত সবুজে ঘেরা নান্দনিক ঐশ্বর্যকে নষ্ট করে নয়। গাছ কাটা,নোংরা আবর্জনা, পরিবেশ দূষণ নগরবাসীর স্বস্থির জায়গা কেড়ে নেয়া মোটেই কাম্য নয়, সাধারণ জনতার কাছে। এই পুরো এলাকা বোটানিক্যাল গার্ডেনের মত অতীব গুরুত্বপূর্ণ শহরবাসির কাছে। হাসপাতালের জন্যে শহরে জায়গার অভাব নেই। বিদেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিনষ্ট করে, পরিবেশ ধ্বংস করে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করেনা।
সিআরবির এই ক্ষতিসাধন সহজ সরল জনগণকে মানসিক প্রশান্তি হারিয়ে বিষণ্নতায় ভোগাবে, সতেজ নিঃশ্বাস ফেলার চির চেনা শত জনমের প্রেম অপরূপ ভূমি এই সি আর বি তে কোনক্রমেই হাসপাতাল নয় ।

শিরিষতলা : ফুঁসে উঠতে সবাইকে ডাকুন
কাশেম আদনান
শিরিষতলায় পড়ে থাকে সব তরুণের মন,
এই শহরে প্রাণ জুড়ানোর একটাইতো অঙ্গন ।
সে অঙ্গনে চলছে এখন দৈত্য দানোর নাচ,
তারা নাকি কেটে দেবে সিআরবির সব গাছ।
প্রতিবাদটা নাই যে কেন, সবাই নপুংসক?
বুক চিতিয়ে এগিয়ে আসুন চাটগাঁইয়া যুবক।
সবাই মিলে আসুন না বের করি মিছিল,
তাদের মুখে ছু্‌ঁড়ে মারি হাজার হাজার ঢিল।
এই শহরে আছে যত টগবগে তরুণ,
জলদি করে ফুঁসে উঠতে সবাইকে ডাকুন।
ঘরে ঘরে যত আছে দুরন্ত কিশোর,
আঁধার চিরে আনবে ওরা ঘুম ভাঙানো ভোর।
সবাই যদি ঘুমিয়ে থাকে দুয়ারে দিয়ে খিল,
ঠিকই ওরা ভেঙ্গে দেবে সব মানুষের দিল।

নগরীর “ফুসফুস” শিরীষ তলায় হাসপাতাল চাইনা
ইসমত আরা খানম কোহিনূর
চট্টগ্রাম শহরের বুকে প্রাণ ভরে শ্বাস নেয়ার কথা ভাবলে”সি আর বি” শিরীষ তলা পরম মমতায় হাতছানি দিয়ে ডাকে তার স্নিগ্ধ শ্যামলিমায় ভরপুর নান্দনিক বুকে। ঘন সবুজ ছায়াঘেরা মায়াভরা বিচিত্র রকমের পাখিদের কিচিরমিচিরে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর এমন উদ্যান চট্টগ্রামে আর দ্বিতীয়টি নেই।
হাসপাতাল নির্মিত হলে হাসপাতাল কেন্দ্রীক প্রচুর কমার্শিয়াল স্থাপনা হবে, যানবাহন চলাচল বাড়বে, বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থে বাতাস তার বিশুদ্ধতা হারাবে। হট্টগোল বাড়বে এবং আস্তে আস্তে চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত মনোরম স্থানটি তার জৌলুস, স্নিগ্ধতা, নান্দনিকতা হারাবে।
“সি আর বি” তে অবস্থিত বয়োবৃদ্ধ হাড় ঝিরঝিরে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের হার্ট এ্যাটাক হয়ে মৃতপ্রায় অবস্থা। তার প্রতি কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, নতুন কিছুর জন্য উঠেপড়ে লাগা… বরং বর্তমান বক্ষব্যধি হাসপাতালটি আধুনিকায়ন করা হোক। শিরিষ তলা হোক বিশুদ্ধ বাতাসের অভয়ারণ্য…চিকিৎসা মানবজীবনের একটা প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ…তাই বলে” সি আর বি তে” হাসপাতাল !
বরং প্রাকৃতিক বিশুদ্ধতা কিন্তু সুস্থ থাকার জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তাই-এধরনের হঠকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

আধুনিক হাসপাতাল চাই, তবে সিআরবিতে নয়
এডভোকেট সালাহ্‌উদ্দিন আহমদ চৌধুরী লিপু
চট্টগ্রামের সিআরবির শিরিষতলায় ইউনাইটেড কোম্পনির ছয় একর রেলওয়ের জমিতে বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ চট্টগ্রামবাসীর অত্যন্ত দুঃখজনক সংবাদ। সাগর, নদী পাহাড় পরিবেষ্টিত চট্টগ্রাম। প্রিয় চট্টগ্রাম অপরূপ প্রাকৃতির আধার হলেও, দুর্বৃত্তদের কালো থাবায় পাহাড়, বন, বৃক্ষরাজি নিধনের ফলে চট্টগ্রামের দিন দিন সে সৌন্দর্য হানি ঘটছে। আজ চট্টগ্রামের সে প্রাকৃতিক ঐতিহ্য অনেকটা জৌলুসবিহীন। তাাছাড়া ঐতিহ্যে লালিত চট্টগ্রামে তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। নগরীর সিআরবি, ডিসি হিল, জাম্বুরি পাক,প্যারেড গ্রাউন্ড চট্টগ্রামবাসীর প্রাণ বলা যায়। কংক্রিটের এই যান্ত্রিক নগরে এসব স্থানে প্রতিদিন নগরীর মানুষ প্রাণ জুড়ে প্রাকৃতিক শ্বাস গ্রহণ, প্রাত ও বৈকালিক ভ্রমণ, শারিরীক কসরত করে, তাছাড়া শিশু কিশোরদের উপযুক্ত ক্রীড়াঙ্গন ও বিনোদনের স্থান। এসব আকাশচুম্বি দালানের ভিড়ে এই নগরীর কোথাও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এসব স্থান ব্যতীত নগরীতে শ্বাস গ্রহণ করার উন্মুক্ত স্থান নেই। চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্রে দৃষ্টিনন্দন সিআরবিতে রয়েছে ছায়া নিবিড় শান্ত র্নিমল পরিবেশ, রাশি রাশি শতবর্ষী বৃক্ষ। যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। চট্টগ্রামে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত আরো বিশেষায়িত হাসপাতাল চাই। তবে পরিবেশ ধ্বংস বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হানি করে সিআরবিতা নয়, এভারকেয়ার হাসপাতালের মতো নগরীর অনতিদূরে এই হাসপাতাল করা হোক। আশাকরি সংশ্লিষ্ট মহলের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।

সিআরবি বাঁচাও!
সৈয়দ মো. জাহেদুল ইসলাম
বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, যার রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে উঠা এই নগরীর প্রাণচাঞ্চল্য সর্বজনবিদিত, যার নদী-পাহাড় তথা সবুজ প্রকৃতি মুগ্ধ করে এখানে আসা সকল পর্যটকদের। এই চট্টগ্রামের নানা ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ও নিদর্শনের প্রেমে পরে বিভিন্ন কবি, সাহিত্যিক রচনা করেছে অসংখ্য গল্প, কবিতা আর উপন্যাস। এই নগরীর অন্যতম একটি স্থান হলো সিআরবি, যেখানে রয়েছে সবুজ প্রকৃতি, কোমল বাতায়ন, স্নিগ্ধ সুভাষ, পাখির কলরব, প্রশান্তির ছায়া। চট্টগ্রামের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন বসন্ত বরণ উৎসব এই সিআরবি পার্কেই অনুষ্ঠিত হয়, সেইসাথে অন্যান্য দিবসেও এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় এই এলাকায়। বন্ধুদের নিয়ে বিকেলের আড্ডা কিংবা কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরের শারীরিক ব্যায়াম সবকিছুর জন্য একটি উত্তম স্থান সিআরবি।
অথচ সেই চিরসবুজ পার্কটাই নাকি এখন দখলের অপচেষ্টা চলছে! বাংলাদেশ রেলওয়ের সাথে মিলে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই অঞ্চলে তৈরি করতে যাচ্ছে একটি বেসরকারি হাসপাতাল। চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বিস্তৃত জায়গা থাকলেও তারা হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রায় ছয় একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে সিআরবি এলাকার গোয়ালিয়াপাড়ায়। এই সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। কারণ সিআরবি শিরিষ তলায় রয়েছে শতবর্ষী গাছপালা, যার ছায়ায় রোজ প্রশান্তির সন্ধান পায় এখানকার মানুষ। যদি এই এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়, তবে এই গাছপালার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্র। এই মহামারীর সময়ে যেখানে অক্সিজেনের অভাবে রোজ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে মানুষ, সেখানে অক্সিজেন উৎপাদনকারী গাছপালাকেই ধ্বংস করার মহরায় নেমেছি আমরা।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দাবী করছে শিরিষ তলার শতবর্ষী গাছগুলোর কোনো ক্ষতি না করেই নির্মাণ করা হবে হাসপাতাল। অথচ একবার এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন হলে দেখা যাবে পুরো এলাকাই তারা দখলে নিয়ে নিবে। প্রকল্প অনুযায়ী এখানে ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতাল, ১০০ আসনের একটি মেডিকেল কলেজ ও ৫০ আসন বিশিষ্ট একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এর থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, যদি এই সকল পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয় তবে এর প্রভাব হবে সর্বগ্রাসী। কারণ এই হাসপাতাল এবং কলেজকে ঘিরে গড়ে উঠবে বিভিন্ন ঔষধের দোকান, মার্কেট, খাবারের হোটেলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া রাস্তায় সারি সারি এম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস, সিএনজি, রিকশার ছড়াছড়ি থাকবে এবং এখানকার বর্জ্যগুলো গিয়ে জমা হবে পার্শ্ববর্তী এই শিরিষ তলা এলাকায়। যানবাহনের আধিক্য, এম্বুলেন্সের সাইরেন আর মানুষের শোরগোল এই পার্কের বর্তমান চিত্রটাই পাল্টে দিবে।
বলা হয় প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম, তাই এখনই সময় এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত এই সিআরবি’কে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে হবে সকল সচেতন মানুষকে। একবার যদি বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ যোগসাজশ করে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন করে ফেলে, তবে আর কোনো উপায় থাকবেনা সিআরবি’কে বাঁচানোর। বাংলাদেশ রেলওয়ের যে পতিত জমি চট্টগ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে ছড়িয়ে আছে সেখানে স্থানান্তরিত করা হোক এই হাসপাতাল প্রকল্পকে। যদি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আর কোনো বিকল্প জায়গা না থাকে, তবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী কিংবা বিমানবাহিনীর সাথে সমঝোতা করে তাদের কাছ থেকে পতিত জমি বরাদ্দ নেয়া হোক। তারপরও যেনো এই সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণ করা না হয়, কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ণের নেতিবাচক প্রভাব তখন সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ করবে।
নগরীর মাত্রাতিরিক্ত দূষণ ও কোলাহল থেকে মুক্ত হয়ে প্রকৃতির সাথে কিছুটা সময় অতিবাহিত করার জন্য চট্টগ্রামের মানুষ সিআরবি এলাকায় যায়, যেখানে শতবর্ষী গাছগুলোর নিচে তারা প্রশান্তি খুঁজে পায়। আজ কিনা হাসপাতাল নির্মাণ করতে গিয়ে সেই গাছগুলোই ধ্বংসের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে! বৈশ্বিক উষ্ণায়নের এই সময়ে সারাবিশ্ব যেখানে প্রকৃতি ও প্রতিবেশ রক্ষায় অবিরত কাজ করছে, সেখানে বাংলাদেশ রেলওয়ের এমন সিদ্ধান্ত হবে দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিরোধী। বিশ্ব পরিবেশ দিবসের এবারের থিম ছিলো ‘বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার’, অন্যদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে স্লোগান দেয়া হয় ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, তিনটি করে গাছ লাগান’। তাহলে বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নেয়া এমন সিদ্ধান্ত কি রাষ্ট্র বিরোধী নয়!
তাই সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের উচিৎ অস্তিত্বের স্বার্থে এই প্রকৃতিকে রক্ষার আন্দোলনে সামিল হওয়া। প্রকৃতি বাঁচলেই মানুষ টিকে থাকবে, যার চরম বাস্তবতা এই বৈশ্বিক মহামারী সকলকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তাই কেবল সিআরবি নয়, দেশের সর্বত্র প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষার আন্দোলনে আমাদের ভূমিকা যেনো থাকে অগ্রগণ্য। সর্বোপরি ‘লক্ষ্য এখন একটাই, সবাই মিলে সিআরবি বাঁচাই।’

আমরা দেশের কোনো ঐতিহ্য ধ্বংসের পক্ষে নই
সজল দাশ
আমাদের যে ক’টি ঐতিহ্য এখনো জীবিত আছে, তারমধ্যে সিআরবি’র এই অংশ চট্টগ্রামের ফুসফুস নামে পরিচিত। আমরা আমাদের ঐতিহ্য একে একে সব নষ্ট করে ফেলছি। শতবর্ষী গাছ কেটে কেন হাসপাতাল করতে হবে? যদি করতে হয়, ঐতিহ্য নষ্ট করে কেন? শুধু চট্টগ্রাম নয় আমরা দেশের কোনো ঐতিহ্য ধ্বংসের পক্ষে না। যারা ঐতিহ্য নষ্ট করে মহৎ কাজ করতে উৎসাহী তারা যেন তাদের নিজ বাড়িকে হাসপাতাল করে দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

সি আর বি এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণে বিরোধিতা
লায়লা আক্তার রুনা
চট্টগ্রামের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি কখনও চাই না নগরীর ‘ফুসফুস’ সি আর বি তে বেসরকারী অথবা সরকারি, কোন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হক। একটুকরো সবুজ ঘেরা মাঠ, গাছের নিচে ক্লান্ত পথিকদের বিশ্রামের স্বর্গীয় স্থান, বাচ্চাদের ক্রিকেট খেলা সবকিছু মিলে সি আর বি একটি বিনোদনমূলক জায়গা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। সুন্দর একটি জায়গাকে যারা ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণ করতে চাইছে তারা কখনই মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দানের মত উন্নত মানসিকতায় পড়ে না। তারা স্বাস্থ্য সেবার নামে ব্যবসা করতে চায়। ইউনাইটেড যদি একটি হাসপাতাল করতে চায় তাহলে অন্য জায়গায় করতে পারে। আমরাও চাই বেশি বেশি মানসম্পন্ন হাসপাতাল হউক তবে সি আর বিতে নয়।

সিআরবিতে কেন হসপিটাল চাই না
মাসুদুল আমিন খান
গতকাল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানালো তারা কোনো শতবর্ষী গাছ কাটবে না। সিআরবির পূর্বপাশে ৬ একর খালি জায়গায় প্রাইভেট হসপিটাল বানানো হবে। কিন্তু চট্টলার মানুষ এখানে হসপিটাল চাইনা নিম্নোক্ত কারণে :

১) ঢাকায় যেমন বিশাল রমনা পার্ক আছে, কিন্তু পাহাড় নদী বেষ্টিত চট্টগ্রাম শহরে এ ধরনের একটি পার্ক দেখান তো। শ্বাস নেয়ার জায়গাটুকু কই? তাই শহরের প্রাণকেন্দ্র সিআরবিতে কোন জঞ্জাল চাইনা।
২) শতবর্ষী গাছ কাটুক না কাটুক সেটা বড় কথা নয়, হসপিটাল করার খালি জায়গাতে কেন সবুজ গাছগাছালি পরিবেষ্টিত পার্ক করা হচ্ছে না?
৩) একবার যদি হসপিটাল হয়, পুরো সিআরবি এলাকা দোকানপাট, গাড়িঘোড়ার দখলে চলে যাবে, মেডিকেল এলাকার মতো এম্বুলেন্স, রোগী, টং ঘর, ভ্যান-গাড়ি গিজগিজ করবে। নিঃশ্বাস ফেলার নির্মল জায়গা আর থাকবে না।
৪) সরকারি জায়গায় তথাকথিত পিপিপি নামে কেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে হসপিটাল করতে হবে, যেখানে প্রাইভেট হসপিটাল মানেই গলাকাটা ব্যবসা। রেল কর্তৃপক্ষ বলল, ৫০ বছর পর সেটা নাকি তাদের হবে? কি হাস্যকর, ৫০ বছর!
৫) চট্টগ্রামে কি হসপিটাল করার আর জায়গা নেই? বায়েজিদ, অক্সিজেন, অনন্যা, কল্পলোক, পাহাড়তলী, পতেঙ্গা কত জায়গা রয়েছে? তবে শহরের প্রাণকেন্দ্রে কেন? মাদ্রাজের বিখ্যাত ভেলোর হাসপাতাল শহর থেকে কত দূরে? এখনতো যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটছে, কক্সবাজারে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল জোন করা যায়, এতে পর্যটন ও হবে স্বাস্থ্য খাতে মানুষ সেবাও পাবে।
৬) রেলের জায়গা দোকানপাট, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে তথাকথিত লীজের নামে কখন লুটপাট বন্ধ হবে?
আসুন, নির্মল চট্টলা নির্মাণের আন্দোলনে শরিক হই

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে করোনায় প্রাণ গেল আরও ১০ জনের
পরবর্তী নিবন্ধরোগীদের জন্য বিনামূল্যে টেক্সি