মেয়াদোর্ত্তীণ হওয়ায় বিএনপি’র চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি পুনর্গঠনে নেতাকর্মীদের আভাস দিয়েছেন লন্ডনে অবস্থানরত দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিষয়টি নিশ্চিত করে নগর বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, পুনর্গঠিত কমিটিতে নেতৃত্ব চাপিয়ে না দিয়ে তৃণমূলের মতামতকে প্রাধান্য দেয়ার বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করা হয়। গতকাল ‘স্কাইপ’ এর মাধ্যমে নগর বিএনপি’র ৫৫ জন নেতার সাথে কথা বলেন দুর্নীতি ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান। বিএনপি নেতারা ছিলেন নয়াপল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ে। নগর বিএনপি’র এক সহ-সভাপতি দৈনিক আজাদীকে জানান, বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে তারেক রহমান সবার উদ্দেশে দলের সাংগঠনিক বিষয়ে সূচনা বক্তব্য রাখেন। আনুমানিক পাঁচ-ছয় মিনিট বক্তব্য রাখার পর তিনি উপস্থিত প্রতিটি সদস্যের সঙ্গে আলাদা-আলাদা কথা বলবেন বলে জানিয়ে দেন। এরপর আলাদা একটি কক্ষ থেকে সরাসরি তার সঙ্গে দলের কর্মীদের কথা হয়। অর্থাৎ একজনের সাথে কথা বলার সময়ে অন্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। প্রতিজনের সাথে তিনি প্রায় ৫ থেকে ১০ মিনিট করে কথা বলেন।
এদিকে সর্বশেষ গত রাত ১২ টা ২০ মিনিটে তারেক রহমান নগর কমিটি’র সহ-সভাপতি পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলছিলেন বলে জানা গেছে। এর আগে নগরের ১৫ টি থানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, নগর কমিটির তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদক, নগর কমিটির ১৩ জন যুগ্ম সম্পাদকের সাথে কথা বলেন।
‘স্কাইপ’ সংলাপে অংশ নেয়া বিএনপি’র একাধিক নেতাকর্মীর সাথে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, তারেক রহমান তাদের কাছে নগর বিএনপি’র বর্তমান নেতৃত্ব তথা সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চান। এক্ষেত্রে দায়িত্বপালনকালে এ দুই নেতা সংগঠন এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করেন তা জানতে চান। তাদের ব্যর্থতার বিষয়েও খবর নেন। পাশাপাশি বিদ্যমান কমিটি মেয়াদোর্ত্তীণ হওয়ায় ভেঙে দেয়া উচিত হবে কী না জানতে চান। যারা ভেঙে দেয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন তাদের কাছে এর কারণ জানতে চান এবং নতুন নেতৃত্বের জন্য যোগ্য ব্যক্তির নাম জানতে চান। এছাড়া দীর্ঘদিনেও নগরীর প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না হওয়ার কারণ জানতে চান তারেক রহমান। একইসঙ্গে দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের কার কি ভূমিকা সে বিষয়েও খোঁজ-খবর নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আলোচনায় অংশ নেয়া এক যুগ্ম সম্পাদক দৈনিক আজাদীকে বলেন, কমিটি ভেঙে দেয়ার বিষয়ে স্পষ্ট আভাস দিয়েছেন আমাদের। তবে ডা. শাহাদাত হোসেন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী থাকায় কমিটি ভেঙে দিলে নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে কী না সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর দৈনিক আজাদীকে বলেন, সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক গাজী সিরাজ উল্লাহ দৈনিক আজাদীকে বলেন, নগর কমিটিকে কিভাবে নতুন করে ঢেলে সাজানো যায় সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ১৫ টি থানা ও ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে দলকে সু-সংগঠিত করে কিভাবে আন্দোলনমুখী করা যায় সে বিষয়েও জানতে চেয়েছেন। তাছাড়া দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর সংগঠনকে কিভাবে পরিচালিত করেছেন সেটাও জানতে চেয়েছেন। এক্ষেত্রে বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে যে গতি ছিল সেটাই আমি বলেছি।
নগর বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে সবার মতামত নিয়েছেন। এক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কমিটি চাপিয়ে দিবেন না বলেছেন এবং সবার মতামতের ভিত্তিতেই কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন।
নগর বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট ডা. শাহাদাতকে সভাপতি, আবুল হাশেম বক্করকে সাধারণ সম্পাদক এবং আবু সুফিয়ানকে সহ-সভাপতি করে নগর বিএনপি’র তিন সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এর প্রায় ১১ মাস পর ২০১৭ সালের ১০ জুলাই ২৭৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। অবশ্য এর ছয়দিন পর ১৬ জুলাই কমিটিতে আরো একজন সহ-সভাপতি অর্ন্তভুক্ত করে কমিটির আকার করা হয় ২৭৬ জনে।
এদিকে নগর বিএনপি’র আওতায় রয়েছে ১৫ থানা ও ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ড। ২০১৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে ৩৯টি ওয়ার্ডের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছিলেন নগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। ৯নং উত্তর পাহাড়তলী এবং ১০ নম্বর কাট্টলী ওয়ার্ড কমিটি সেদিন বিলুপ্ত করা হয়নি। ওইদিন কমিটি গঠনে সম্মেলন করার জন্য ৩১টি ওয়ার্ডে নতুন করে আহ্বায়কদের নামও ঘোষণা করা হয়েছিল। এছাড়া ওই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সম্মেলন করে কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। সর্বশেষ গত বছরের আগস্ট মাসের শুরুতে থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার প্রক্রিয়া শুরু করেন শাহাদাত-বক্কর। তবে ২৮ আগস্ট কেন্দ্রের নির্দেশে তা স্থগিত হয়। তার আগে পাঁচটি থানা ও ২৮টি ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ জানুয়ারিও চট্টগ্রামের শীর্ষ পাঁচ নেতার সাথেও ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন তারেক রহমান। সেবারও নগর কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ দেন তিনি। তখন বিএনপি নেতারা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পর্যন্ত বর্তমান কমিটির কার্যক্রম বহাল রাখার অনুরোধ করলে তাতে সায় দেন তিনি। তখন নির্বাচনের পর সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তবে বর্তমানে স্থগিত হওয়া সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন কবে হবে সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে। তাই সংগঠন পুনর্বহালে মনোযোগ দিচ্ছে দলের সর্বোচ্চ হাইকমান্ড।