‘দ্বিতীয় সুন্দরবন’ বাঁচবে?

মীরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্প জোন এলাকা

মীরসরাই প্রতিনিধি | শনিবার , ১৬ জুলাই, ২০২২ at ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ

সময়ের প্রয়োজনে মীরসরাই উপজেলার ম্যানগ্রোভ বনের বিশাল অংশসহ ৫ হাজার একর জমি জুড়ে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শিল্প জোন। উপকূলের ৬ নম্বর ইছাখালী ও ১১ নম্বর মঘাদিয়া ইউনিয়নের প্রায় পুরো উপকূলীয় বনই চলে গেছে অর্থনৈতিক জোন সৃজনে। অবশিষ্ট রয়েছে উপজেলার ১৬ নম্বর সাহেরখালী এলাকার কিছু অংশ এবং পার্শ্ববর্তী সীতাকুণ্ড উপজেলার উত্তরাংশের বগাচতর থেকে বাঁশবাড়িয়া পর্যন্ত এলাকা। সৃষ্ট অর্থনৈতিক জোনকে প্রাকৃতিক বৈরিতার প্রভাব থেকে রক্ষা করতেও এই অবশিষ্ট বন রক্ষা করা জরুরি বলে মনে করছেন পরিবেশবিদ ও সচেতন মহল। সম্প্রতি ইছাখালী এলাকার প্রায় অর্ধসহস্র গরু মহিষ নিয়ে কৃষক ও এলাকাবাসী অর্থনৈতিক জোন এলাকায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। মীরসরাই উপজেলা প্রশাসনও এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে। মীরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান এসময় কৃষকদের দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করে অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে গরু-মহিষের চারণভূমি রক্ষার পক্ষে দাবি পেশ করবেন বলে জানান।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের পর পুরো দেশের প্রাকৃতিক নিরাপত্তা, ভারসাম্য রক্ষা, গ্রিন হাউস অ্যাফেক্ট থেকে আত্মরক্ষা ও উপকূল জুড়ে প্রাণিকুলের প্রাণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিকল্পহীন ব্যবস্থা হিসেবে স্বাধীনতা পরবর্তী মীরসরাইয়ের উপকূল জুড়ে সৃজন করা হয় দ্বিতীয় সুন্দরবন। সৃজিত এই সুন্দরবন ধরে নৌকা বেয়ে সমূদ্রের দিকে কয়েক কিলোমিটার এগোলেই চোখে পড়বে সমূদ্রের আকাশ নীলে ডানা মেলে খাবার সন্ধান করছে গাঙচিল, বকের সারি, পানকৌড়ি। বনের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, বানর, নানান প্রজাতির সাপসহ বিচিত্র সব প্রাণি। বিশেষ করে চোখে পড়বে পাখিদের কল-কাকলি, বানর ও হরিণের লুকোচুরি।
ইতিমধ্যে অনেক হরিণ ও বানর লোকালয়ে চলে এসে মানুষের পাল্টা হানার শিকার হয়ে গেছে। কেউ কেউ আবার নিজেরা এসব প্রাণীকে নিরাপদে বনবিভাগের কাছে হস্তান্তরও করেছে। ঝুঁকির বিষয় হলো এক শ্রেণির বনখেকো সিন্ডিকেট বন উজাড় করে পুরো উপকূলের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন করে তুলেছে। আবার কোনো কোনো প্রভাবশালী চক্র বন এলাকায় গড়ে তুলছে অবৈধ মাছের প্রকল্প।
মীরসরাই উপজেলার অন্যতম পরিবেশবাদী পানি সম্পদ ফোরামের সভাপতি প্রফেসর ডা. জামশেদ আলম বলেন, এই উপকূলীয় সুন্দরবন শুধু আমাদের নিরাপত্তা বেষ্টনীই নয়, আগামী প্রজন্মের বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণের কারখানাও। জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে প্রাণিকুলের রক্ষাকারী উপকূলীয় সুন্দরবন দিনে দিনে বিরান ভূমি হোক তা আমাদের কারোই প্রত্যাশা হতে পারে না। জীববৈচিত্র্যের আধার সুন্দরবনে বাস করতে শুরু করেছে অনেক নবাগত প্রাণীও। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ইতিমধ্যে অনেক বিলুপ্ত পাখি, বিলুপ্ত লজ্জাবতী বানর, বাজ পাখিসহ হরেক রকম প্রাণি আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু মানুষের ক্ষুধাতুর দৃষ্টির কাছে এসব প্রাণি দিনে দিনে হয়ে উঠছে অসহায়। এই বন হারালে হারাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য, এই বন হারালে মীরসরাই উপজেলার ৫ লাখ মানুষের জীবন হয়ে উঠবে বিপন্ন।
এই বিষয়ে মীরসরাইয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেন, অবশিষ্ট বন ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় আমরাও জনগণের পক্ষে। এই বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তাবনা উচ্চ পর্যায়ে প্রেরণ করবো। আশা করছি সরকারি পর্যায়েই এর সপক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।
এই বিষয়ে অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষের উপদেষ্টা বেজা কনসালটেন্ট কাদের খান বলেন, আমরা এই অঞ্চলের প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার বিষয়ে ইতিমধ্যে নতুন কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যে ৫ লক্ষাধিক গাছ রোপনসহ নানান উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট বন এবং বন্যপ্রাণি রক্ষায়ও বিশেষ উদ্যোগের কথা ভাবছি। আশা করছি সময়ের সঙ্গে সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু শিল্পজোন হয়ে গড়ে উঠার পাশাপাশি একটি রক্ষণশীল মনোরম এলাকা হিসেবে দেখতে পাবেন সবাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে ঘরে ঘরে জ্বর সর্দি
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬