আজ দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৫ তম জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ঘর আলোকিত করে জন্ম গ্রহণ করেছেন আজকের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি জ্যেষ্ঠ। শেখ হাসিনা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সহ সরকারি ইন্টারমিডিয়েট (বর্তমান বদরুনন্নেসা গভর্মেন্ট গার্লস কলেজ) কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য ও রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলনের কারণে তিনি কিছুদিন কারাবরণ করেন। ছাত্রজীবন থেকে পিতার মত শেখ হাসিনা আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য বার বার তিনি মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েছেন। ১৯৬৭ সালে লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভের পর খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ মিয়ার সাথে ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাথে বিয়ে হয়।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৭ জুলাই সজিব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম হয়। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্ম নেন তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর ৭ জানুয়ারী ২০১৯ সালে তিনি ৪র্থ বারের মত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৯৬-২০০১ সাল। ২০০৮ থেকে ২০১৩ দ্বিতীয় বার। ২০১৩-২০১৮ তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন শেখ হাসিনা। ২০০৯ সালে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য সফলতার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণ। ভারতের পার্লামেন্ট কর্তৃক স্থল সীমানা চুক্তির অনুমোদন এবং দু’দেশ কর্তৃক অনুসমর্থন। তিনি কয়েকটি গ্রন্থের রচয়িতা। তাঁর মধ্যে উল্লেখ্য ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ ‘ওরা টোকাই কেন” “বাংলাদেশে স্বৈরচারের জন্ম” “দারিদ্র্য বিমোচন, কিছু ভাবনা” ‘আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি” “সামরিক বনাম গণতন্ত্র” “সাদা-কালো” “সবুজ মাঠ পেরিয়ে” “মুজিব বাংলার বাংলা মুজিবের”। শেখ হাসিনা গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতিতে বিশ্বাসী এবং দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন তাঁর জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। প্রযুক্তি, রান্না, সাহিত্য এবং বই পড়ার প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। তাঁর স্বামী আন্তর্জাতিক খ্যতিমান পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম. ওয়াজেদ মিয়া ২০০৯ সালের ৯ মে ইন্তেকাল করেন। তাঁর ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশারদ। একমাত্র কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল একজন মনোবিজ্ঞানী।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা সপরিবারে হত্যা করল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেই সময় জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা জার্মানে অবস্থান করছিলেন। যার কারণে দু’জন প্রাণে বেঁচে যান। দীর্ঘ ৬ বছর ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় শেষে ১৯৮০ সালে ইংল্যান্ডে থেকে স্বৈরশাসক জিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুললেন। অবশেষে ১৯৮১ সালে ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৩২নং ধানমন্ডি লাখো মানুষের ঢল যা দেখে তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু হত্যার মাস্টার মাইন্ড জিয়া ৩২ নম্বরে নেত্রীকে পিতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে বাধা দেয়। মাত্র ১৩ দিনের মাথায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে কিছু সামরিক অফিসারের হাতে প্রাণ গেল জিয়ার। তারপর শুরু হয় গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে নেত্রীর অনুপস্থিতে সর্বসম্মতিক্রমে তাঁকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। গণতন্ত্র পুনঃউদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পর পর তিনি শাসক গোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন। বার বার তাকে কারা নির্যাতন ভোগ করতে হয়, হত্যার উদ্দেশ্যে কমপক্ষে ২১ বার সশস্ত্র হামলা করা হয়। ২০০৭ সালে ১৬ জুলাই সামরিক বাহিনী সমর্থিত ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে সংসদ ভবন চত্বরে সাব-জেলা পাঠান। প্রায় এক বছর পর ২০০৮ সালে ১১ জুন তিনি মুক্তি লাভ করেন। হত্যার উদ্দেশ্যে উল্লেখযোগ্য হামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচী পালন কালে তাকে লক্ষ্য করে পুলিশের গুলি বর্ষণ, এতে যুবলীগ নেতা নুর হোসেন, বাবুল ও ফাত্তাহ নিহত হন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নেত্রীসহ তার গাড়ী ক্রেন দিয়ে তুলে নিয়ার চেষ্টা করা হয়। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারী চট্টগ্রাম কোর্ট হিলের নীচে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে এরশাদ সরকার লেলিয়ে দেয়া পুলিশ বাহিনী তৎকালীন পুলিশ কমিশনার খুনী মীর্জা রকিবুল হুদার নির্দেশে ঝড়ের মত গুলি বর্ষণ করলে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। সেই দিন আমরাও নেত্রীর সাথে ছিলাম। ১৯৯১ সালে বিএনপি চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বার বার হামলা করে। ১১ সেপ্টেম্বর উপ নির্বাচন চলাকালে আবারো তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। ১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে তার কামরা লক্ষ্য করে অবিরাম গুলিবর্ষিত হয়। ২০০০ সালে কোটালিপাড়া হেলীপেডে এবং শেখ হাসিনা জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ও ৮৪ কেজি ওজনের দুইটি বোমা পুতে রাখে হুজির নেতা মুফতি হান্নান। নেত্রী পৌছার পূর্বে বোমা উদ্ধার হওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান তিনি। বিএনপি সরকারের আমলে সবেেচয় বড় প্রাণঘাতি হামলা হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা। ঐ দিন বঙ্গবন্ধু এভিনিওতে জনসভায় বক্তব্য শেষ হওয়ার পরপর এজেষ্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়। যে গ্রেনেডগুলো সরকারি অস্ত্রাগার ছাড়া কোথাও থাকার কথা নয়। বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মীণি আইভি রহমানসহ ২৪ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী নিহত হন। পাঁচশতরও বেশি নেতা-কর্মী আহত ও ১০০ নেতা-কর্মী পঙ্গুত্ব বরণ করেন। নেত্রী সে সময় কানে গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হন। শত বাধা বিপত্তি ও প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকেছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষের অর্জন গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতা সহ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পান। তার অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।
সমপ্রতি বিশ্বে বৈশ্বিক মহামারী করোনার করাল গ্রাসে সকল ব্যবস্থা দুমড়ে মুচড়ে যায়। সেই প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে, অথচ এমন ঘোর অমানিশার মাঝেও আশার বাতি জালিয়েছেন তিনি। দেশের রিজার্ভ ও রেমিটেন্স রেকর্ড গড়েছে, প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকার প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন ব্যবসা বাণিজ্যের স্বার্থে। এ সকল সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণতার পরিচয়। তিনি জননেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১/১১- এর পর শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য আবিষ্কার করা হয় মাইনাস-টু ফর্মুলা। ’৮১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সবসময় এদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। একথা অনস্বীকার্য যে, শেখ হাসিনাই বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে দিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে তাঁর নেতৃত্বের বিকল্প নাই। যে আশা আকাঙ্ক্ষা তিনি সৃষ্টি করেছেন তাতে পুরো জাতিকে তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শেখ হাসিনার হাতে যতদিন থাকবে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ। তিনি যেন পিতার রেখে যাওয়া স্বপ্ন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষে আমৃত্যু কাজ করে যেতে পারেন। ৭৫ তম জন্মদিনে তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
লেখক: শ্রম বিষয়ক সম্পাদক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ