শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, একটি চক্র বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের এই ফাঁদে পা দিয়ে বাংলাদেশকে আফগানিস্তান-পাকিস্তানের মতো হতে দেওয়া হবে না। তরুণদের মারমুখী না হয়ে আলোচনার মাধ্যমে, যুক্তির মাধ্যমে পরাজিত শক্তির উত্থান ঠেকানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতান্ত্রিক যে সমাজের স্বপ্নের ভিত্তিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছিল, তা ভুলুণ্ঠিত হলে কোনো বিনিয়োগের সুফলই মিলবে না বলেও সতর্ক করেছেন।
চান্দগাঁও-বোয়ালখালী সংসদীয় আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করা এম মোরশেদ খানকে ইঙ্গিত করে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, এখানে একসময় দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর সংসদ সদস্য ছিলেন। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে এখন বিদেশে অবস্থান করছেন।
গতকাল সকালে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড ইনকিবিউশন সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও মোরশেদ খানকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য রাখেন।
বিএনপি সরকারের আমলে চট্টগ্রাম থেকে যারা মন্ত্রী হয়েছিলেন তাদের সমালোচনা করে নওফেল বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ১২, ১৩, ১৪, ১৫টা করে মন্ত্রী দিয়েছে। এসব মন্ত্রীর জ্বালায় আমাদের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল। এত মন্ত্রী, আর আমরা সবাই প্রজা, কাজ-কর্ম কিছু নাই। মন্ত্রীরা শুধু নিচ্ছে আর প্রজারা দিচ্ছে। এমন একটা অবস্থা ছিল। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেওয়ার পর শুধু এ অঞ্চল নয়, ফেনী থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম-কঙবাজার পর্যন্ত বিশাল কর্মযজ্ঞ হচ্ছে। শুধু এখানে এবং পাশের সংসদীয় আসনে যে উন্নয়ন হচ্ছে তা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থান এবং এলাকার অবকাঠামোগত আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমাদের সকলকে সর্বত্র, সর্ব পর্যায়ে সংবিধানের নির্দেশিত মূলনীতিগুলোর চর্চা ও প্রচারণা করতে হবে। জাতির পিতা সহনশীল, ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের স্বপ্ন দেখিয়ে এই দেশকে স্বাধীন করেছিলেন।
তিনি বলেন, দ্বীন-ইসলামের নামে কেন রাজনীতি করা যাবে না-এমন প্রশ্ন যদি কেউ করেন তাহলে আমরা অবশ্যই বলব, ঈমানের প্রশ্নে তো কোনো দ্বিমত করা যায় না। ঈমান ঈমান। কিন্তু রাজনীতি করলে মত থাকবে, দ্বিমত থাকবে, আমার কথা থাকবে, প্রতিবাদ থাকবে এবং অপব্যাখ্যা হবে বলেই আমরা ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করতে চাই না।
নওফেল বলেন, রাসুলের (সা.) কোনো হাদিসে আপনারা দেখবেন না, তিনি বলেছেন যে, দ্বীন কায়েম করার জন্য রাজনৈতিক দল করো। কিন্তু আজকে অনেকে এটা করছে। এটা করে আমাদের যুব সমাজকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের নারী সমাজকেও এই বিষয়টা নানানভাবে মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের পিছিয়ে দিতে চায়।
তিনি বলেন, সকল পর্যায়ে আমাদের বলতে হবে আমার দ্বীন, আমার ঈমান অত্যন্ত পবিত্র। ব্যক্তিগতভাবে মহান আল্লাহর সাথে সেটা রুহানী সম্পর্ক। এটা নিয়ে রাজনীতি না। মাইক একটা পেয়ে যেমন ইচ্ছে বলা গণতন্ত্র নয়।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সবখানে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে। অস্থিতিশীল হলে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের লাভ হবে, এখানে তারা অস্ত্র ব্যবসা করবে। আফগানিস্তানের মতো বানাতে চায় তারা। আমরা বাংলাদেশকে আফগানিস্তান-পাকিস্তান হতে দেব না। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ করব। যেখানে সহনশীলতা থাকবে।
তিনি বলেন, শান্তির বাংলাদেশ গড়ব। শুধু পয়সা ইনকাম করলে শান্তি আসে না। পৃথিবীর অনেক দেশে অনেক অর্থ আছে, কিন্তু শান্তি নেই। স্থিতিশীলতা না থাকলে, মানুষে মানুষে সদ্ভাব না থাকলে, বৈষম্য বেশি থাকলে শান্তি আসে না।
এর আগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এখানে এসে শুনলাম এ আসনে (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) বহুবার অর্থ ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সাবেক যিনি এমপি ছিলেন তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ১৯৯১ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন। নিশ্চয়ই আপনারা তার নাম জানেন। তিনি যখন মন্ত্রী ছিলেন তখন বাংলাদেশে একটি মোবাইল কোম্পানি ছাড়া আর কেউ অনুমতি পায়নি। টাকা লুটপাট করে আজ তারা বিদেশে পালিয়ে আরাম-আয়েশে দিনযাপন করছেন। তখন একটি মোবাইল কিনতে এক লাখ টাকা খরচ করতে হতো। এক মিনিট কথা বলার জন্য ১০ টাকা চার্জ দিতে হতো। ফোন করলেও ১০ টাকা এবং রিসিভ করলেও ১০ টাকা। যেন শাখের করাত আসার সময় এবং যাওয়ার সময়ও কাটে। অথচ আজ মিনিটে ২৫ পয়সা দিয়ে কথা বলা যায়। বিভিন্ন অ্যাপস থাকলে ১০০ টাকা দিয়ে পুরো মাস কথা বলা যায়। এটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ।