লেখার অভ্যাস তেমন নেই। বলার অভ্যাস বেশি। দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ছিলাম। লেকচার দিতাম। ছাত্র ছাত্রীরা মনোযোগ দিয়ে শুনত। তৃপ্তি পেত। আমিও শিক্ষকতাকে খুব উপভোগ করতাম। অবসর নিয়েছি অনেক আগে। বর্তমানে আমার ছাত্র ছাত্রীরাও কেউ অবসরে, কেউবা স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন উচ্চ পদে আছেন। আমি একজন গর্বিত শিক্ষক! সেই বলার অভ্যাস এখনও যায়নি। কিন্তু বলতে গেলে কয়জন ধৈর্য ধরে শুনে! বলতে বলতে ভূমিকা শেষ করে যখন আসল কথায় আসি তখন অনেক সময় শ্রোতা অন্যমনস্ক হয়ে যায়! আমি আছি এক বিপদে! মনের ভিতর কত কথা, কত স্বপ্ন! এদেশ স্বাধীন করে ছিলাম চোখে কত রঙিন স্বপ্ন ছিল! স্বাধীন জাতি হিসাবে পৃথিবীর বুকে নিজেদের পরিচয় দেবো। বাঙালি জাতি। পৃথিবীর বুকে অনন্য! ৩০ লক্ষ শহীদ ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে কেনা এই স্বাধীনতা! বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা! দেখতে দেখতে ৫০ বছর কেটে গেল। অর্ধ শতাব্দী! বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বপ্ন হল, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এক উন্নত দেশ হওয়ার। কেমন উন্নত? পাশ্চাত্যের সাথে তুলনা করার মত। পাশ্চাত্যের সাথে আমাদের বর্তমান পার্থক্য কি? ইউরোপ, আমেরিকা থেকে অর্থনৈতিকভাবে আমরা পিছিয়ে, কিন্তু দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ থেকে এগিয়ে। আমাদের এগিয়ে যাওয়াটাকে আরও দ্রুত করতে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হল সঠিক পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নে সততা, নিষ্ঠা ও ধৈর্য এবং সর্বোপরি কারিগরি উৎকৃষ্টতা। যার ঘাটতি আমাদের রয়েছে। নেত্রীর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় দেশ যত দূর এগিয়েছে তার চেয়ে আরও বেশি এগুতে পারত যদি সততা ও নিষ্ঠা জাতীয় চরিত্র হত। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে দুর্নীতি ছড়িয়ে রয়েছে তা সংশ্লিষ্টরা দেখেও না দেখার ভান করে আছেন। মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশে ঘুষ, দুর্নীতি নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার যা পশ্চিমা দেশে ঢালাও ভাবে হয়না। কদাচিৎ দু’একটা ঘটনা ঘটলে তোলপাড় হয়ে যায় সারা দেশ, সারা বিশ্ব। অথচ সুদ, ঘুষ, যৌতুক, ওজনে কম দেওয়া, বেশী নেওয়া, মিথ্যাচার ইত্যাদি আমাদের ধর্মে হারাম করা হয়েছে। শুধু মুসলিম ধর্মে কেন, কোন ধর্মেই এগুলো করার অনুমতি নাই। কথায় কথায় আমরা বলি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ চাই, খুবই মুখরোচক কথা! আমার নিজেকে প্রথম জিজ্ঞেস করতে হবে আমি দুর্নীতিমুক্ত হতে পেরেছি কিনা। আমি কি অন্যের হক মেরে খাচ্ছি? অন্যের হক শুধু ধন সম্পদ বোঝায় না।
রাস্তায় যখন দুজন চলতে থাকব, আমরা প্রত্যেকে সাথী আর একজনের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকব। একজনকে মাড়িয়ে নিজে যেয়ে তার চলার জায়গা দখল করে নেয়া সেটাও আরেক জনের হক নষ্ট করা। লাইনে দাঁড়িয়ে গাড়িতে উঠতে গিয়ে একজনকে মাড়িয়ে নিজে আগে উঠে যাওয়া এটাও আরেক জনের হক নষ্ট করা। গাড়ি চালাতে গিয়ে ট্রাফিক আইন ভেঙ্গে নিজের লাইন থেকে অন্য লাইনে চলে যাওয়া এটাও আরেক জনের হক নষ্ট করা এবং দুর্ঘটনাকে ডেকে আনা। এভাবে পদে পদে আমরা একজন আর একজনের হক নষ্ট করতে অভ্যস্ত।
পরিশেষে আমাদের প্রত্যেকের নিজেকে প্রথম জিজ্ঞেসা করা উচিৎ আমি নিজে দুর্নীতিমুক্ত হতে পেরেছি কিনা। আমি কি অফিসে ঘুষ নেই বা দেই? আমি নিজে যদি ১০০% ভাল হয়ে যাই তা হলে আরেক জনের জন্য ভাল হওয়ার মডেল হতে পারি। এভাবে ব্যক্তিগতভাবে, সামাজিকভাবে, জাতিগতভাবে আমরা শুদ্ধ হতে পারি। গড়ে তুলতে পারি একটি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ। গড়ে তুলতে পারি স্বপ্নের সোনার বাংলা।
লেখক : চিকিৎসক