ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা এবং উৎসবমুখর আয়োজনে চট্টগ্রামে গতকাল মৈত্রী দিবস উদযাপন করা হয়েছে। চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে সহকারী হাই কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক একেবারে নিখাদ, অকৃত্রিম। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হতে চলছে। তিনি দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় চলছে বলে মন্তব্য করে এই বন্ধুত্ব আগামীতেও অটুট থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর রেডিসন ব্লু চিটাগাং বে ভিউর মোহনা হলে মৈত্রী দিবস (ফ্রেন্ডশিপ ডে) উদযাপিত হয়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির দিনটি (৬ ডিসেম্বর) মৈত্রী দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়।
শুরুতে প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী, অতিথি ছিলেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ডা. রাজিব রঞ্জন ও মিসেস রাজিব রঞ্জন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত যে সমর্থন দিয়েছিল তা গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।
তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আত্মত্যাগকারী ৩০ লাখ শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্য এবং ভারতীয় জনগণের সর্বোচ্চ ত্যাগের কথাও গভীরভাবে স্মরণ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের মতো ভারতের জওয়ানরা রক্ত দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। ভারত আমাদের দুর্দিনের বন্ধু। এ সম্পর্ক ছেদ হওয়ার নয়। ভারত সরকার এক কোটি বাঙালিকে আশ্রয় দিয়েছিল। খাদ্য, ওষুধ, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়েছিল। আমাদের স্বাধীনতার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনমত সৃষ্টি করেছিল।
সহকারী ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার রাজীব রঞ্জন ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সাহসী সৈনিকদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথাও স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ওই সময় তারা তাদের বাংলাদেশি ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়িয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ভারত ও বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব এই অংশীদারিত্বকে একটি নতুন মাত্রা ও দিকনির্দেশনা দিয়েছে। এর ফলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনেক পরিপক্কতা এবং স্বাচ্ছন্দ্য অর্জন করেছে।
এর ফলে বহু সমস্যা বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে সমাধান করা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যে বন্ধুত্ব, বোঝাপড়া ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার চেতনা জন্মেছিল তা ভবিষ্যতেও এই অনন্য ও বিশেষ অংশীদারিত্বের পথ দেখাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি জোরালো সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিবেশি দেশ ভারতের অকৃত্রিম সহযোগিতাসহ দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। পরিবেশন করা হয় দুই দেশের জাতীয় সংগীত। সঞ্চালনায় ছিলেন আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, বাংলাদেশের বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের কনসাল জেনারেল এবং চট্টগ্রামে বসবাসকারী ভারতীয় প্রবাসীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে চেন্নাই থেকে আসা ভারতীয় ফিউশন মিউজিক ব্যান্ড ‘অঙিজেন’ এবং বাংলাদেশের কয়েকজন স্বনামধন্য শিল্পীর আয়োজনে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয়।