দিনে জাল সংস্কার, রাতে মাছ শিকার

মুহুরী প্রকল্পে মৎস্য বিপ্লব, বছরে ৭০ কোটি টাকার মাছ উৎপাদন

মীরসরাই প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৮ এপ্রিল, ২০২২ at ৪:৩২ পূর্বাহ্ণ

মৎস্য উৎপাদনের জোন হিসেবে খ্যাত মীরসরাইয়ে রয়েছে ২৯টি জেলেপাড়া। সেসব জেলেপাড়ার মানুষরা মুহুরী প্রকল্প এলাকার মৎস্য খাত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মাছ ধরার জাল। তারা প্রতি রাতে মুহুরী প্রকল্পে বিভিন্ন দীঘিতে মাছ ধরেন। আর দিনের বেলার মাছ ধরার সেই জালগুলো সংস্কার করেন। সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিকাল বেলায় মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় সড়কের ধারে মাছ ধরার জাল বিছিয়ে জেলেরা দল বেঁধে জালের ছেঁড়া অংশ জোড়াতালি দিচ্ছেন।
এ সময় তাদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, পুরো বছর জুড়ে তারা শুধু মৎস্য প্রকল্পগুলোতে মাছ ধরেন। চুক্তিভিত্তিক একেকদিন একেক দিঘীতে রাতের বেলায় মাছ ধরা হয়। আর সেই আয় দিয়ে চলে তাদের জীবনযাত্রা। তারা অন্য কোনো কাজ করেন না। আর এই মাছ ধরতে গিয়ে প্রায় সময় তাদের জালের বিভিন্ন অংশে ছিঁড়ে যায়। ফলে তারা দিনের বেলায় সেগুলো সংস্কার করেন। স্থানীয় জেলে সম্ভু জলদাস জানান, গভীর রাতে আমরা দিঘীতে জাল ফেলে মাছ ধরে ড্রামজাত ট্রাকে মাছ তুলে দিই। সেই মাছগুলো দিঘীর মালিক বাজারজাত করেন। পরে সকাল বেলায় আমরা ঘুমাই। বিকালে জালের সংস্কার করি। আবার রাতে মাছ ধরি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফেনী নদীর মীরসরাই-সোনাগাজী উপকূলীয় অংশে ১৯৮৪ সালে বঙ্গোপসাগর উপকূলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় সরকার প্রায় ৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করেন। সেই বন্যা রক্ষা বাঁধ এই এলাকার মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। বাঁধ নির্মাণের ফলে দুই পাশে হাজার হাজার একর চরাঞ্চল জেগে ওঠে। জেগে ওঠা সেই চরাঞ্চলে খনন করা হয় শত শত দীঘি। বর্তমানে মুহুরী প্রকল্পে বছরে প্রায় ৪২ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা। মুহুরী প্রকল্প থেকে চট্টগ্রামের মাছের চাহিদার অধিকাংশ পূরণ হয় বলে দাবি উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের। মাছের পাশাপাশি এখানে প্রতি মাসে মৎস্য খাদ্য বিক্রি হয় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা, বছরে ১২৬ কোটি টাকারও বেশি। ঔষধ বিক্রি হয় প্রায় ৩০ লাখ টাকা যা বছরে সাড়ে ৩ কোটিরও বেশি।
মীরসরাই উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মুহুরী প্রজেক্ট প্রকল্প এলাকায় প্রায় ৬ হাজার একর জমিতে শত শত দীঘিতে বছরে প্রায় ৪২ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব মাছের মধ্যে রয়েছে তেলাপিয়া, পাঙ্গাশ, কার্প, পাবদা, শিং, মাগুর। এছাড়া দেড় হাজার একর দিঘী জুড়ে রয়েছে দেড় শতাধিক চিংড়ি প্রকল্প। মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় উৎপাদিত মাছ নিজ উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রামের ৭০ শতাংশ মাছের চাহিদা পূরণ করে থাকে।
স্থানীয় মৎস চাষীরা জানান, প্রকল্প এলাকায় বছরে কোটি কোটি টাকার মাছ উৎপাদন হলেও খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ হয় কম। তাছাড়া সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় খাদ্য ও মাছ পরিবহনে চাষিদের অনেক অসুবিধায় পড়তে হয়।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রামের ৭০ শতাংশ মাছের চাহিদা পূরণ করে মুহুরী প্রজেক্ট মৎস্য প্রকল্প। মুহুরী প্রকল্পে চট্টগ্রামের ৭০ ভাগ মিঠাপানির মাছের চাহিদা মিটায়, এটি বাংলাদেশের একটি বৃহৎ মৎস জোন হিসেবে সুপরিচিত। এখানে চাষীদের পাশাপাশি স্থানীয় জেলেদের বড় একটা ভূমিকা রয়েছে। আমরা সব সময় মৎস প্রকল্পগুলোতে তদারকি করি। জেলেদের সুবিদা অসুবিধার বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখি এবং চাষীদের সুপরামর্শ দিয়ে থাকি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিটি কলেজের সামনে থেকে অবৈধ ২৯ দোকান উচ্ছেদ
পরবর্তী নিবন্ধপাকিস্তানের পার্লামেন্ট পুনর্বহাল