উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সপ্তাহ জুড়ে চলমান সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বুধবারও দিনভর থেমে থেমে গোলাগুলি ও হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন বলে জানা গেছে। উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে গতকাল রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, এখানে আধিপত্য বিস্তারের কিছু নেই। আমাদের আইনশৃঙ্খলা যৌথ পেট্রোলিং করছে। এখানে আমাদের আধিপত্য থাকবে। অন্য কারো (রোহিঙ্গাদের) আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ নেই।
ডিআইজি বলেন, ক্যাম্পের পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে কিছুটা উত্তেজনা চলছে। আমরা ফোর্স বাড়িয়েছি। তিনি বলেন, যৌথভাবে টহল চলছে। কিছু কিছু এলাকায় ব্লকরেইডও চলছে। আমাদের যে দুইটা এপিবিএন (ইউনিট) এবং অন্যান্য যৌথ বাহিনী আছে, তারা সবাই মিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কাজ করছে। অবৈধ অস্ত্রের ব্যাপারে ডিআইজি বলেন, অবৈধ অস্ত্র যাদের কাছে আছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত সপ্তাহজুড়ে কুতুপালংয়ে দুটি ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই রোহিঙ্গা গ্রুপের মধ্যে সংঘাত চলে আসছে। এতে এক মহিলাসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে ৪ জন নিহতের ঘটনায় ক্যাম্পে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। গতকাল সকাল থেকে সারাদিন দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এসময় নতুন করে উভয় পক্ষে অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে গতকাল সকালে এপিবিএন এর এক সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গতকাল সকাল ১০টার পর থেকে কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এ ঘটনায় আতঙ্কে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ইনচার্জের অফিসে আশ্রয় নেন। এসময় পুরাতন নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
রোহিঙ্গারা বলছেন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ইয়াবা ব্যবসা, দোকান থেকে চাঁদাবাজি ও এলাকাভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী মুন্না, আনাছ ও মৌলভী হামিদ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। ক্যাম্পে গোলাগুলির ঘটনায় ক্যাম্প সংলগ্ন স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মঙ্গলবারের ঘটনায় বিভিন্ন সেবা সংস্থা ও দেশি-বিদেশী এনজিওর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াত সীমিত হয়ে পড়ে। গতকাল বুধবার দুপুরের পরে নিজ নিজ সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের ক্যাম্প ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ৪ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে বলে জানান উখিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সালাহ উদ্দিন। মঙ্গলবার নিহত ৪ জনের মধ্যে নুরুল হুদা (৩২) নামে একজনকে শনাক্ত করা গেছে। তিনি টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের বাসিন্দা। ঘটনার সময় তিনি মাইক্রোবাস নিয়ে ভাড়ায় আসছিলেন। তার মরদেহ স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করা হলেও অপর ৩ জনের মরদেহ কেউ শনাক্ত না করায় লাশগুলো আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।