দক্ষিণ চট্টগ্রামে বিদ্যুৎবিহীন আড়াই লাখ গ্রাহক

পল্লী বিদ্যুৎ সেবা লণ্ডভণ্ড

পটিয়া প্রতিনিধি | বুধবার , ৯ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

ভারী বর্ষণ ও টানা বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে ও গাছপালা উপড়ে পড়ে সঞ্চালন লাইন ছিড়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামে বিপর্যস্ত ও লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যবস্থা। দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, চন্দনাইশ, বোয়ালখালী, কর্ণফুলী, বাঁশখালী, আনোয়ারা, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় বর্তমানে আড়াই লাখ পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহক বিদ্যুৎ সেবার বাইরে রয়েছে।

জানা যায়, এ আটটি উপজেলায় পটিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি১ এর ৬ লাখ ৩৪ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। এসব জায়গায় অন্তত ২ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহক গত পাঁচদিন ধরে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে।

সাতকানিয়া চন্দনাইশ ও লোহাগাড়া নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দোহাজারীতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির যে সাব স্টেশন রয়েছে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তা তলিয়ে গেছে। এতে তিন উপজেলার ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। একদিকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বিপর্যয় অন্যদিকে পানিতে ঘরবাড়ি ও গৃহপালিত পশু নিয়ে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষ।

জানা গেছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে এ তিন উপজেলার জন্য দোহাজারীতে যে ‘গ্রিড সাব স্টেশন’ করা হয়েছে, সে সাব স্টেশনটি বর্তমানে সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় ওই তিন উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষ বিদ্যুতের অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চন নগর এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম জানান, আমরা গত পাঁচদিন ধরে বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকারে রয়েছি। আমাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফ্রিজে রাখা বিভিন্ন খাদ্যপণ্য নষ্ট হয়ে পড়েছে। তাছাড়া বিদ্যুতের অভাবে মোবাইলে চার্জ দিতে না পারায় বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে এসেছে। তিনি আরো বলেন, ভারী বর্ষণের কারণে বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ায় এবং আরো কয়েকটি মাটির ঘর ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় এখানে বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ রয়েছে।

এদিকে পটিয়ায় বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইনের উপর গাছ ভেঙে পড়ে পুরো পটিয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। পটিয়া পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৭৭ হাজার গ্রাহকের মধ্যে বর্তমানে প্রায় অর্ধলাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় রয়েছে। শুধুমাত্র পৌরসদরের সুচক্রদন্ডী ও উপজেলার মুজাফ্‌ফরাবাদের আংশিক এলাকায় বিদ্যুৎ সচল রাখা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন বেশিরভাগ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত থাকায় গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। একদিকে পানিবন্দী অন্যদিকে বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ ব্যবস্থার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকিসহ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

পল্লী বিদ্যুৎ জানায়, দক্ষ লেবার, লাইন ক্রু, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার, এজিএম ও ডিজিএমসহ কর্মরত বিভিন্ন জনশক্তি লাইন চালু করার জন্য ‘দুর্যোগে আলোর গেরিলা’ টিম নিয়ে ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছে। অধিকাংশ এলাকায় এবং রাস্তাঘাটে বেশি পানি থাকায় স্পটে যাওয়া দুরূহ হচ্ছে। সাঙ্গু নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় লাইনের ক্লিয়ারেন্স কমে যাওয়ায় দোহাজারী গ্রিড উপকেন্দ্রের পটিয়া ৩৩ কেভি ফিডার বন্ধ আছে। বিকল্পভাবে শিকলবাহা গ্রিড উপকেন্দ্রের বোয়ালখালী ৩৩ কেভি থেকে পটিয়াতে বিদ্যুৎ চালু করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি১ এর এজিএম তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, পুনরুদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে। এ সমস্যা সাময়িক, আশা করছি পানি কমে গেলে এবং আমাদের পুনরুদ্ধার কাজ শেষ হলে যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। তবে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকায় ভেঙে পড়া বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তারসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ মেরামত বা প্রতিস্থাপন করা যাচ্ছে না। তবে এভাবে বৃষ্টি চলমান থাকলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যেও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করা যাবে না বলে তিনি জানান।

চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি১ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী দীলিপ চন্দ্র চৌধুরী বলেন, টানা বর্ষণের মাঝেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পুনরুদ্ধার কাজ চলছে। অধিকাংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত থাকায় পুনরুদ্ধার কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। কোথাও ছেঁড়া তার দেখলে নিরাপদে থেকে সংস্পর্শে না এসে বিদ্যুৎ অফিসে খবর দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসরকারি ব্যাংকে সহজ সরল লোককে টার্গেট করে ওরা
পরবর্তী নিবন্ধঢল ও বৃষ্টিতে চট্টগ্রামে ক্ষতি ১৩৫ কোটি টাকা