তিনি থাকবেন চিরস্মরণীয় হয়ে

সৈয়দ আহমদ বাদল | বুধবার , ১৭ আগস্ট, ২০২২ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

১৯৬৮ সালে ডিসেম্বরে ঢাকা কলেজের বার্ষিক প্রোগ্রামে কলেজের ছাত্র রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক রচিত প্রবন্ধে প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ বলে লিখলেন একজন ছাত্রনেতার আবেগময় কথামালা। ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি একদিন জাতির কাছে বাংলা ভাষায় সবচেয়ে প্রিয় এবং সম্মানের শব্দ হিসাবে পরিগণিত হবে লেখক তা ভেবে লিখেননি, আবেগতাড়িত হয়েই লিখেছেন।
বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান তখন আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারারুদ্ধ। সারাদেশ ব্যাপী ছাত্রজনতার শেখ মুজিবসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি চেয়ে অসহযোগ আন্দোলন তুঙ্গে। পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠীর রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে কিছু দালাল ছাড়া সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে অংশ নিয়ে ‘জেলের তালা ভাঙবো শেখ মুজিবকে আনবো’, ‘আমার তোমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা’ ধরনের শ্লোগানে শ্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে অসহযোগ আন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত করলো।
আন্দোলনের মুখে শাসক গোষ্ঠী অনেক রাজবন্দীসহ শেখ মুজিবকে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। সেই অসহযোগ আন্দোলন তথা গণঅভ্যুত্থানের অগ্রনায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদে ভিপি তোফায়েল আহমদের সভাপতিত্বে ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে ১০ লক্ষাধিক জনতার সমাবেশে শেখ মুজিবকে গণসংবর্ধনা দেয়া হয়। সেই গণসংবর্ধনায় সভাপতির বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তোফায়েল আহমদ ঘোষণা করলেন, ‘নেতা তুমি শুধু শেখ মুজিবুর রহমান নও, আজ থেকে তুমি আমাদের তথা বাঙালি জাতির ‘বঙ্গবন্ধু’ হও। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর শেখ মুজিব হয়ে গেলেন ‘বঙ্গবন্ধু’; জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। সারা জাতি নয় শুধু, সারা বিশ্ব জেনে গেল বাঙালি জাতিকে দাবায়া রাখতে পারবে না, এ জাতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ইস্পাতদৃঢ় ঐক্যবদ্ধ। ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রণেতা রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক জীবদ্দশায়ও বলেছেন, ‘মুজিবের প্রতি আমার হৃদয়ের যে ভালোবাসা-শ্রদ্ধা, সেখান থেকেই বঙ্গবন্ধু শব্দটির জন্ম’। জনাব মুশতাক আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল ছিলেন, ছিলেন নির্লোভ একজন খাঁটি বাঙালি হিসেবে। জাতি এ ক্ষণজন্মা মানুষটিকে চিরদিন হৃদয়ে ধারণ করে রাখবে, থাকবেন তিনি স্মরণীয় হয়ে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসড়ক পারাপারে পথচারীদের অসচেতনতা
পরবর্তী নিবন্ধজীবনের সফলতা