তিন মাসে ৫২ দুর্ঘটনা, ২৫ মৃত্যু

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশ

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | সোমবার , ১৬ মে, ২০২২ at ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে বাড়ছে দুর্ঘটনা। একই সঙ্গে উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই মহাসড়কের পাশে হওয়ায় চলাচলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধে নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিভিন্ন সময় কর্মসূচি পালন করা হলেও সড়কগুলো আরও বেশি অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
মহাসড়কের এই অংশে দুর্ঘটনার বেশকিছু কারণ চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ। এসবের মধ্যে ট্রাফিক আইন অমান্য করে মহাসড়কে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক (অধিকাংশ ক্ষেত্রে সহকারীর হাতে গাড়ি থাকা), নিয়ম ভঙ্গ করে ওভার লোডিং, ওভারটেকিংয়ের প্রবণতা, চালকদের দীর্ঘক্ষণ বিরামহীন গতিতে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, উল্টোপথে গাড়ি চালানো, সংযোগ সড়ক থেকে দ্রুতগতিতে মহাসড়কে ওঠা, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও চলাচলের অনুপযোগী সড়ক অন্যতম। এ ছাড়াও সময় বাঁচাতে পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করা ও ঝুঁকি নিয়ে দ্রুত মহাসড়ক পারাপার করতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। মহাসড়কে যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়ে যত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, তার ৬০ শতাংশ হারাচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে সড়ক পার হতে গিয়ে। পথচারী ও সাধারণ মানুষ সড়ক পারাপারে একটু সতর্ক হলেই অনেক প্রাণ বেঁচে যাবে।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্যানুসারে জানা গেছে, চলতি বছরের তিন মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে ছোট-বড় ৫২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় পথচারী, চালক ও চালকের সহকারীসহ ২৫জনের প্রাণহানি হয়েছে এবং আহত হয়েছে শতাধিক। এসব ঘটনায় ১৭টি মামলা করা হয়েছে। শুধু চলতি মাসে ১৪দিনে ৫জন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, সিএনজিচালিত লেগুনা ও সেফ লাইন নামে তিন শতাধিক গাড়ি মহাসড়কে চলাচল করে। এ ছাড়া সীতাকুণ্ড এলাকায় তিন শতাধিক
সিএনজি টেঙি ও দুই শতাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। এসব গাড়ির চালকদের বেশির ভাগই অদক্ষ। স্থানীয় রিকশাচালকেরা অভিজ্ঞতা ছাড়াই এগুলো চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। মহাসড়কেও এসব গাড়ি চলাচল করছে। যার ফলে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া মহাসড়ক চার লেন হওয়ায় সড়কে গাড়ির চাপ অনেকটা কমে গেছে। যার ফলে চালকেরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে থাকেন। আর ওভারটেক প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এসব গাড়ি। পথচারী ও সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বেপরোয়া ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাড়ি চালানো, মাত্রাতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকের প্রতিযোগিতা, মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো এ সব দুর্ঘটনার কারণ হলেও প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনা রোধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
কুমিরা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে চালকের ওভারস্পিড, ওভারটেক ও ওভারলোডের কারণে ক্রমে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। এ সবের নেপথ্যে রয়েছে অধিকাংশ চালকের দুর্বলতা। বেশি টাকা উপার্জন ও একাধিক ট্রিপ মারতে ঘুমচোখে গাড়ি চালানো এবং ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য বহন করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এ ছাড়া চালকের পরিবর্তে তার সহকারীকে দিয়ে গাড়ি চালানোর ফলেও ঘটছে দুর্ঘটনা। বারআউলিয়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক জানান, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে মাসব্যাপী হাইওয়ে পুলিশের উদ্যোগে সাঁড়াশি অভিযান চলছে।
অভিযানকালে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে লাইসেন্সবিহীন চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা, অনুমোদনবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা, পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ ও ফুটপাত দখলমুক্ত রাখাসহ নানামুখী কর্মতৎপরতা চালানো হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইছামতী তীরের ২০ কিমিতে কয়েকশ অবৈধ স্থাপনা
পরবর্তী নিবন্ধনিউ ইয়র্কে জিনাতের মৃত্যু পুলিশ বলছে আত্মহত্যা পরিবার বলছে ক্রাইম