খাদ্য ও বাচ্চার অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে গত মাসখানেক ধরে অস্থির ব্রয়লার মুরগির বাজার। এছাড়া মুরগির ডিমেরও রেকর্ড দাম বৃদ্ধি হয়েছে। কেবল গত ছয় মাসের ব্যবধানে প্রতি বস্তাতে ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির খাদ্যের দাম বেড়েছে ১১শ থেকে ১৫শ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে প্রতিটি মুরগির বাচ্চার দাম বেড়েছে ২৪ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া সম্প্রতি ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে পরিবহন ভাড়া। ইতোমধ্যে খামারের পরিচালন ব্যয় নির্বাহ করতে না পেরে অনেক ছোট খামারি ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে।
পোল্ট্রি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ছয় মাস ৫০ কেজি ব্রয়লার মুরগির খাদ্যের দাম ছিল ১৬শ টাকা। বর্তমানে সেই বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৭শ টাকায়। এছাড়া লেয়ার মুরগির খাদ্যের বস্তাপ্রতি দাম ছিল ১৮শ টাকা। বর্তমানে সেই বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩৩শ টাকায়। প্রতিটি একদিনের মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ১৫ থেকে ১৮ টাকা, এখন কিনতে হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৩ টাকায়। অন্যদিকে মুরগির বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ওষুধের দামও বেড়েছে দ্বিগুণ।
এদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলায় নিবন্ধিত ব্রয়লার মুরগির খামার রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। এরমধ্যে বর্তমানে ৩ হাজার ৮০০টি চালু হয়েছে। এছাড়া লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে ৪১৬টি। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে বর্তমানে প্রায় ৬৫-৭০ হাজার ছোট-বড় খামার আছে। ব্রয়লার মুরগির মাংসের বার্ষিক উৎপাদন ২০১৬ সালে ছিল ৫ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৭ সালে ৫ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০১৮ সালে ছিল ৫ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন। গত ২০১৯ সালে সেটি দাঁড়ায় ৫ লাখ ২ হাজার মেট্রিক টনে। এছাড়া গত ২০২০ ও ২০২১ সালে ছিল সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িত, যার প্রায় ৪০ শতাংশই নারী।
জানতে চাইলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রিটন প্রসাদ চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ খাদ্যের দাম বৃদ্ধি। প্রতি বস্তায় খাদ্যের যদি দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়, এক্ষেত্রে খামারিদের কি করার আছে। অনেক ছোট ছোট খামার তো বন্ধই হয়ে গেছে। যারা টিকে আছেন, তারাও মুরগির উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে একটি মাঝারি আকারের মুরগি কিনতে ভোক্তাদের খরচ করতে হচ্ছে নূন্যতম ৩শ টাকা। স্বাভাবিকভাবে ব্রয়লার মুরগির অনেকের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। খাদ্যের দামের বাইরে মুরগির বাচ্চার দাম ও ওষুধের দামও বেড়েছে। এরমধ্যে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে এখন আবার পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, একটা মুরগি এক মাস থেকে দেড় মাস পর্যন্ত গড়ে আড়াই কেজি খাবার খায়। বর্তমানে এক কেজি খাবারের দাম পড়ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা পর্যন্ত। মুরগির খাবার ভুট্টার আমদানি হতো রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে আমদানি এক প্রকার বন্ধই হয়ে যায়। এছাড়া সম্প্রতি ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন ভাড়া বেড়েছে। সব মিলিয়ে মুরগির বাজারে প্রভাব পড়েছে। অনেক ছোট খামারি তো উৎপাদনই বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ তারা ঝুঁকি নিতে চান না। একমাত্র বড় বড় খামারিরাই উৎপাদন ধরে রেখেছে। বর্তমানে উৎপাদন কমে যাওয়ার ফলে খুচরা পর্যায়ে মুরগি কেজি ২০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। একইভাবে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়।