ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে সরকারের প্রস্তাবিত ১০ লেইন সড়কের বিকল্প প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। উপজেলার কুমিরা থেকে ছলিমপুর পর্যন্ত বর্তমান মহাসড়কে দুই পাশে সংকুচিত জায়গা হওয়ায় কোনোভাবেই ১০ লেইনের মহাসড়ক করা সম্ভব নয় জানিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে ৩টি বিকল্প প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সীতাকুণ্ড নাগরিক সমাজ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সীতাকুণ্ডের জনগণের পক্ষ থেকে এই তিনটি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সীতাকুণ্ড নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব মাস্টার আবুল কাশেম লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০১৬ সালে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেইনে উন্নীত করার কাজ শেষ হয়। নতুন করে ১০ লেইন করা হলে অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা, হাট–বাজার, বাড়িঘর, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান, শ্মশানসহ শত শত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা চিরতরে হারিয়ে যাবে। এছাড়াও জমি অধিগ্রহণের ফলে মহাসড়কের দুই পাশে হাজার হাজার বিরল প্রজাতির বৃক্ষ এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা দেশের ইকোনমিক লাইফ লাইন খ্যাত ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক ১০ লেইন করার বিপক্ষে নই। কারণ এটির সঙ্গে দেশের অগ্রগতি ও উন্নতি জড়িত।
সংবাদ সম্মেলনের বলা হয় যে, সীতাকুণ্ডের আয়তন ৪৮৪ বর্গ কিলোমিটার। ছলিমপুর ভাটিয়ারী ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কোনো কোনো এলাকার ব্যস সন্দ্বীপ চ্যানেল থেকে পাহাড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটারেরও কম।
বিকল্প তিনটি প্রস্তাব উত্থাপন করে বলা হয় যে, পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত এবং ইকোনোমিক জোন থেকে সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর উপকূল পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। মাঝখানে সৈয়দপুর থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় মেরিন ড্রাইভ করা হলে ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচল নির্বিঘ্ন হবে। দ্বিতীয় বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে বিদ্যমান চার লেইন ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের সিটি গেইট থেকে বড় দারোগারহাট পর্যন্ত চার লেইনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ। এটি করতে ১০ লেইনের সড়ক করার চেয়ে খরচ কম হবে। এতে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ, মানুষের জমি ও বড় বড় স্থাপনা অধিগ্রহণের পেছনে ব্যয় হবে না। তাছাড়া সার্ভিস লেইন বা আন্ডারপাস ছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আট–দশ লেইনের মহাসড়ক করার কোনো নজির বিশ্বে নেই।
তৃতীয় বিকল্প প্রস্তাব হচ্ছে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বে রেললাইনের পূর্বে ফৌজদারহাট থেকে চিনকী আস্তানা পর্যন্ত পাহাড়ের পাশ দিয়ে মহাসড়ক নির্মাণ করা যেতে পারে। এতে পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে নির্মিত রাস্তাটি পর্যটন আবাসন এবং শিল্পায়নের ক্ষেত্রেও অনন্য ভূমিকা রাখবে।
সীতাকুণ্ডবাসীর এই তিনটি বিকল্প প্রস্তাবনার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সদয় বিবেচনা কামনা করা হয় সাংবাদিক সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে সীতাকুণ্ড নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. ফসিউল আলম, বিজয় স্মরণী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, নাগরিক সমাজের সমন্বয়ক লায়ন মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, সীতাকুণ্ড সমিতি–চট্টগ্রামের সভাপতি মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন মানিক, সাংবাদিক আবুল হাসনাত, সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ফোরকান আবু, সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম শিল্পী, কামরুল ইসলাম দুলু, সমাজ সেবক ননী গোপাল দেবনাথ, অ্যাড. জহির উদ্দিন মাহমুদ, আবুল খায়ের মো. ওয়াহিদী, ফারুক মোনাদিন, তুষার কান্তি চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মো. আলমগীর, শিমুল চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।