কর্ণফুলী তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল চালুর পর গত ৬ মাসে চলাচল করেছে সাড়ে ৮ লাখ গাড়ি। আয় হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকার টোল। চীনের ওয়ান সিটি টু টাউন আদলে কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে শহর সম্প্রসারণ ও কক্সবাজার পর্যন্ত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনায় এই টানেল নির্মিত হয়েছে। গত বছর ২৯ অক্টোবর চালুর পর প্রথম তিন মাসে ৪ লাখ ৮৩ হাজার গাড়ি পারাপার হয়। এতে আয় হয় প্রায় ১১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি থেকে শেষ ৩ মাসে গাড়ি চলাচল করে ৩ লাখ ৭১ হাজার। টোল আদায় হয় ৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। টোল আদায়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন রোজার মাসে যান চলাচল কিছুটা কম ছিল। তাই এই হিসাব ‘নেগেটিভ’ দেখাচ্ছে। মূলত ভারী যানবাহন চলাচল ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। মোট যানবাহন ও টোল আদায়ও বেড়েছে।
বঙ্গবন্ধু টানেলের সহকারী প্রকৌশলী (টোল ও ট্রাফিক) তানভীর রিফাত বলেন, একটি বড় অর্থনৈতিক লক্ষ্যকে সামনে রেখে টানেল নির্মিত হয়েছে। টানেলের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আনোয়ারা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত কিছু বড় শিল্প কারখানা হচ্ছে। এ কারণে ভারী যানবাহন চলাচল বাড়ছে। কয়েক বছরের মধ্যেই এটি আশাব্যঞ্জক পর্যায়ে যাবে।
৬ মাসের গড় হিসাবে দেখা গেছে প্রতিদিন চলাচল করেছে ৪ হাজার ৬৭০টি গাড়ি। আদায় হয়েছে ১১ কোটি ৯১ লাখ টাকার টোল। মোট চলাচলকারী ৮ লাখ ৫৪ হাজার গাড়ি থেকে আদায় হয় ২১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার টোল।
সেতু কর্তৃপক্ষের প্রদত্ত হিসাব থেকে জানা যায়, টানেল চালুর ষষ্ঠ দিনে গত বছর ১১ নভেম্বর সবচেয়ে সবচেয়ে বেশি গাড়ি চলাচল করে। এটি ছিল টানেল চালুর পর প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার। এ কারণে বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই দিন বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী টানেল দেখার জন্য ভিড় করে। ওই একদিনে চলাচল করে ১৪ হাজার ৭৯৮টি গাড়ি। আদায় হয় ৩৩ লাখ ৫২ হাজার টাকার টোল। এরপর চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি সর্বনিম্ন মাত্র ৯০৪টি গাড়ি পারাপার হয়। দিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন হওয়াতে যান চলাচল কম ছিল বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে রমজানের এক মাসে তুলনামূলকভাবে কম ছিল যান চলাচল। যে কারণে গত তিন মাসের গড় হিসাবে এর প্রভাব পড়ে। রমজানের এক মাসে গড়ে প্রতিদিন চলাচল করে ২ হাজার ৪৫৯টি গাড়ি, আদায় হয় ৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকার টোল। রমজানের শেষে গত ১৮ দিনে প্রায় ৮২ হাজার যান চলাচল করে, গড় হিসাবে যা সাড়ে ৬ হাজারের উপরে।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে টানেল নির্মিত হয় স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল। টানেলের সামগ্রিক ব্যয়ের মধ্যে ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকার চীনা ঋণ ২ শতাংশ সুদসহ আগামী ২০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। ২০২৫ সাল থেকে টানেলের আয় দিয়ে সেই ঋণ পরিশোধ করা শুরু করবে সরকার। টানেলের আদায়কৃত টোল থেকেই নির্মাণ ব্যয় তুলে আনাসহ পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় নির্বাহ করার কথা। সংশ্লিষ্টদের মতে, টানেল হয়ে কঙবাজার পর্যন্ত সড়ক নির্মিত না হওয়ায় শিকলবাহা ক্রসিং হয়ে পুরনো পথেই চলাচল করছে সব গাড়ি। আবার শাহ আমানত সেতুর টোল টানেলের অর্ধেক। এ কারণে এখনও টানেলের চেয়ে শাহ আমানত সেতু ব্যবহারই তুলনামূলক বেশি।