জয় দিয়ে ফিরল বাংলাদেশ

ম্যাচ সেরা সেই সাকিব

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ২১ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

করোনাকালে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। নতুন অধিনায়কের নেতৃত্বে নতুন যাত্রা টাইগারদের। এক বছর পর ফিরেছেন সাকিব। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে নেই অধিকাংশ নিয়মিত ক্রিকেটার। একটি স্বস্তিদায়ক সূচনা দরকার ছিল বাংলাদেশ দলের। যেখানে শঙ্কাও কাজ করছিল। দুর্বল প্রতিপক্ষ বলে যদি পঁচা শামুকে পা কাটে? এক বছর পর ফেরা সাকিব যদি নিজেকে ফিরে না পায়? অথবা প্রথমবারের মত অধিনায়কত্ব করতে নামা তামিম যদি চাপে ভেঙে পড়ে? এরকম হাজারো প্রশ্ন। তবে বলতে গেলে এক ফুৎকারে উড়ে গেল সব শঙ্কা। পাওয়া গেল সব প্রশ্নের জবাব। দুর্দান্ত এক জয় দিয়ে প্রায় দশ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরল বাংলাদেশ।
বলা যায়, ব্যাটে-বলে অন্য এক বাংলাদেশকে দেখল ভক্তরা। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। প্রথম ম্যাচে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬ উইকেটে হারালো টাইগাররা। সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণি জাদু আর অভিষিক্ত হাসান মাহমুদের গতির কাছে হার মানল ক্যারিবীয়রা। অন্যদিকে তামিমের ঝড়ের কাছেও বাধা হতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা। সব মিলিয়ে দারুণ এক সূচনা টাইগারদের। সাকিবের ফেরাটা যেমন দরকার ছিল, তেমনি তামিমের নেতৃত্বের প্রথম পরীক্ষাটাও ছিল দেখার। বলতে গেলে, পুরো পাস মার্ক নিয়ে প্রথম ম্যাচ উতরে গেছে বাংলাদেশ। এখন নিজেদের আরো শাণিত করার অপেক্ষা টাইগারদের। টসে জিতে ব্যাট করতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শুরুতে ধাক্কাটা দেন মোস্তাফিজুর রহমান। প্রথম ওভারেই ফেরান সুনীল এমব্রিসকে। আরেক ওপেনার জসোয়া ডি সিলভাকে যখন ফেরান তখন ক্যারিবীয়দের সংগ্রহ ২৪ রান। যদিও তৃতীয় ওভারে শুরু হওয়া বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ থাকে ঘণ্টাখানেক। এরপর আক্রমণে যান সাকিব আল হাসান। আর দিশেহারা হয়ে পড়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং। এক বছর নিষেধাজ্ঞার পর মাঠে ফিরে নিজের জাতটা চেনালেন সাকিব। আন্দ্রে ম্যাককার্থিকে দিয়ে শুরু তার ধংসযজ্ঞ। সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন ম্যাককার্থি। অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ স্টাম্পড হন ডিফেন্স করতে গিয়ে। সোজা বলে এলবিডব্লিউ এনক্রমা বনার।
বলা যায়, সাকিবের ঘূর্ণির সামনে কেউ দাঁড়াতে পারেনি। ৫ ওভার শেষে সাকিবের বোলিং ফিগার দাঁড়ায় (৫-১-৫-৩)। মোস্তাফিজের শুরুর ধাক্কা আর সাকিবের ঘূর্ণির পর ৫৬ রানে ৫ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন কাইল মেয়ার্স ও রভম্যান পাওয়েল। এই জুটি ৫১ বলে যোগ করেন ৫৯ রান। তবে অভিষিক্ত হাসান প্রথম স্পেলে কিছুটা অগোছালো থাকলেও দ্বিতীয় স্পেলে এক ওভারেই তুলে নেন দুই উইকেট। ২৮ রান করা পাওয়েলকে ফিরিয়ে তিনি ভাঙেন ৫৯ রানের জুটি। পরের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন রেমন রিফার। পরের ওভারে আরেকটি ধাক্কা খায় ক্যারিবিয়ানরা। ৪০ রান করা মেয়ার্সকে থামান মেহেদী হাসান মিরাজ। ক্যারিবীয়দের লোয়ার অর্ডারও পারেনি কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।
আকিল হোসেনকে ফিরিয়ে হাসান মাহমুদ তুলে নেন তৃতীয় উইকেট। এরপর আলজারি জোসেফকে বোল্ড করে ১২২ রানেই শেষ করে দেন ক্যারিবীয়দের ইনিংস। দুর্দান্ত কামব্যাক করা সাকিব নিয়েছেন মাত্র ৮ রানে ৪ উইকেট। বল করেছেন ৭.২ ওভার। যেখানে মেডেন ছিল ২ ওভার। আর অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ ৩ উইকেট নিয়েছেন ২৮ রানে। ২টি উইকেট গেছে মোস্তাফিজের ঝুলিতে।
মাত্র ১২৩ রানের লক্ষ্য। তাড়া করতে নেমে ৪৭ রান যোগ করেন দুই ওপেনার তামিম এবং লিটন। ইনফর্ম লিটন পারেননি নিজের ইনিংসটা বড় করতে। ১৪ রান করতে খেলেছেন ৩৮ বল। বোল্ড হয়েছেন আখিল হোসেনের বলে। অন্যদিকে একাধিক ব্যাটসম্যানকে পেছনে ফেলে তিন নম্বর পজিশনে ব্যাট করার সুযোগ পাওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত এ ম্যাচেও পারেননি নিজেকে প্রমাণ করতে। ১ রান করে আখিল হোসেনের বলে অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শান্ত।
সাকিবকে নিয়েও বেশিদূর এগুতে পারেননি তামিম। ৪৪ রান করে টাইগার অধিনায়ক ফিরেছেন জেসন মোহাম্মদের বলে। সাকিব-মুশফিকের জুটিটা মনে হচ্ছিল জমে উঠছে। কিন্তু বল হাতে দুর্দান্ত সাকিব পারেননি ব্যাট হাতে ম্যাচ শেষ করে আসতে। সেই আখিল হোসেনের ইনকাটারে বোল্ড হন সাকিব। ফিরেছেন ১৯ রান করে। তবে মাহমুদ উল্লাহকে নিয়ে ম্যাচ শেষ করে আসেন মুশফিক।
১৬.১ ওভার হাতে রেখে ৬ উইকেটের জয় নিয়ে যখন ফিরেন মুশফিক, তখন তার নামের পাশে ছিল ১৯ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আখিল হোসেন নিয়েছেন ৩ উইকেট। ম্যাচ সেরার পুরস্কার যথারীতি সাকিবের হাতেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅধ্যাপক শাহেনা আকতার চমেকের নতুন অধ্যক্ষ
পরবর্তী নিবন্ধপাঁচ শতাংশ সুদে গৃহঋণ পাবেন বন্দরে কর্মরতরা