জোর

সত্যব্রত বড়ুয়া | শুক্রবার , ১৬ এপ্রিল, ২০২১ at ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ

ছেলেবেলা হতেই শুনে আসছি ‘মামার জোর’ কথাটি। মামার জোর থাকলে নাকি অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। শুনি টাকার জোরের কথাও। আমরাতো অহরহই বলি টাকার জোরে সব কিছুই করা যায়। পাওয়া যায় বাঘের দুধও। মেয়েদের জোর চোখের জল। তারা অনেক সময় কান্নার জোরে ছেলেদের কাছ হতে অনেক কিছু আদায় করে নেয়। আসল কথা কোমরের জোর। ছেলে হোক মেয়ে হোক থাকতে হবে কোমরের জোর। পন্ডিত ব্যক্তিদের রয়েছে জ্ঞানের জোর। অনেকের আবার জ্ঞানের জোর না থাকলেও কথার জোর রয়েছে। তারা কথার জোরে মানুষের মন জয় করে নেয়। তোষামোদকারী, চাটুকারদের জোর তো কথাই। কিন্তু শুধু কথার জোরে সব কিছু করা যায়না। প্রবাদ বাক্যই তো রয়েছে, ‘শুধু কথায় চিড়ে ভেজেনা’। ঘুষখোরদের যদি আপনি ঘুষ না দেন তবে কখনো চিড়ে ভিজবেনা। মনোবিদরা বলে থাকেন মনের জোর থাকলে অনেক কিছুই করা যায়। তবে সব কিছু করা যায়না। থাকতে হবে দেহের জোরও। লিফট ছাড়া আপনি মনের জোরে সিঁড়ি ভেঙ্গে সাততলা উঠতে পারলেও দেহে জোর না থাকলে আপনি কখনো দশতলা উঠতে পারবেন না। এক সময় ছাত্ররা পরীক্ষায় খুব নকল করতো। তারা পরীক্ষায় পাশ করতো নকলের জোরে। ভাগ্যও আমাদের কাছে একটি জোর। এ জন্যেই বলে থাকি, ‘ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেছি’ কথাটি। বলে থাকি কপালের জোরের কথাও। সেদিন টেলিফোনে কুশল বিনিময়ের সময় আমার এক বন্ধু বললেন, ভাই ওষুধের জোরে আমি এখন বেঁেচ আছি। কোনো কোনো সময় জেলখানার কয়েদিরা বুদ্ধির জোরে জেলখানা হতে পালিয়ে যায়। জ্ঞানীজন বলে থাকেন, ভক্তিতে ভগবান তর্কে বহুদূর। ভক্তরা ভগবানকে পেয়ে থাকেন ভক্তির জোরেই। আমরা অনেক সময়ই জোর খাটাই। এটা আবদারের জোরও হতে পারে। আবার হতে পার ভালোবাসার জোরও। গাধার জোর গাধামিতে। বাঁদরের জোর বাঁদরামিতে। মানুষের জোর মনুষ্যত্বে। পাখির জোর পাখায়। ফুলের জোর সুগন্ধিতে। কেও আমরা জোরহীন হতে চাইনা। সেকালে অনেক স্বামী বউ পিটিয়ে জোরের পরখ করতো। এটা একালে একেবারে হয়না তা বলা যাবেনা। বরং হচ্ছে বিচিত্রভাবে। জোরটা এখন নির্যাতনে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতার জোরে অনেক কিছুই করা যায়। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ কথাটা এখনো মিথ্যে হয়ে যায়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাউজানে ৩৫০ কৃষককে বীজ ও সার বিতরণ
পরবর্তী নিবন্ধলোকসংস্কৃতির বটবৃক্ষ