‘জনসম্পৃক্ত’ কর্মসূচি বিএনপির পরিকল্পনা কী যা ভাবছেন নেতৃবৃন্দ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২১ আগস্ট, ২০২২ at ৪:৩১ পূর্বাহ্ণ

‘জনসম্পৃক্ত’ কর্মসূচি ঘোষণা করে নিজ দলের মধ্যে কি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিএনপি? কারণ যে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ অংশ নেয় না। অন্তত নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের পর গত ৩২ বছরে এমন দৃশ্য দেখা যায়নি। এ অবস্থায় দীর্ঘ ১৫ বছর ১০ মাস ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি জনগণকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তা দলটির জন্য চ্যালেঞ্জ কিনা সে প্রশ্ন উঠেছে। অবশ্য বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলছেন, তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে জ্বালানিসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, যা সরাসরি সাধারণ মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। তাই যারা রাজনৈতিক দলের কর্মী না তাদের কাছেও গ্রহণযোগ্য হবে বিএনপির কর্মসূচি।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ৯ দিনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। জ্বালানি তেল, পরিবহন ভাড়াসহ সকল দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং ভোলায় পুলিশ কর্তৃক গুলি করে ছাত্রনেতা নূরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুর রহিম হত্যার প্রতিবাদে আগামীকাল সোমবার থেকে শুরু হয়ে কর্মসূচি একটানা চলবে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত। মূলত এ সময়ে গণমিছিল ও মিছিলোত্তর সমাবেশ করার পরিকল্পনা আছে দলটির। এ কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে জনগণকে সম্পৃক্ত করা। ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে এ বিষয়ে তৃণমূলে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কর্মসূচি হবে ‘সুশৃঙ্খল’ ও ‘জনসম্পৃক্ত’। এছাড়া কর্মসূচি সফল করার জন্য করা হয়েছে বিভাগীয় মনিটরিং টিম।
গত শুক্রবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় মনিটরিং টিম প্রস্তুতি সভাও করেছে। এছাড়া গতকাল মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি পৃথক প্রস্তুতি সভা করেছে। কোন দিন কোন এলাকায় কর্মসূচি হবে তার শিডিউল ঠিক করেছে নগর বিএনপি। উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি আজ শিডিউল চূড়ান্ত করবে।
এদিকে বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দের কাছে এবার ঘোষিত কর্মসূচি উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। ১৬ আগস্ট বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী মহানগর ও জেলা নেতৃবৃন্দকে চিঠি দিয়ে কর্মসূচি সংক্রান্ত নির্দেশনা দেন। বিএনপি নেতারা বলছেন, ওয়ার্ড পর্যায়ে কর্মসূচি দেয়ার মূল কারণ সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা। কারণ শহরকেন্দ্রিক কর্মসূচিগুলোতে কেবল দলের নেতাকর্মীরাই অংশ নেন। তাছাড়া এবার বিক্ষোভ সমাবেশের পরিবর্তে হবে গণমিছিল। কারণ বিক্ষোভ সমাবেশগুলোতেও দলের কর্মীদের বাইরে কেউ অংশ নিতে চান না।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম বিভাগীয় মনিটরিং টিমের প্রস্ততি সভায় বলেছেন, গণমিছিল মানে জনগণের সম্পৃক্ততা। বিক্ষোভ মিছিলে বিএনপির নেতকর্মীর বাইরের লোকজন আসার সাহস করবে না। তবে গণমিছিলে যত বেশি সংখ্যক লোক রাস্তায় নামাতে পারব আন্দোলনের সাফল্য তত বেশি হবে।
ওয়ার্ড পর্যায়ে কর্মসূচির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, অনেকেই আছেন এখনো আন্দোলনে নামেনি, কিন্তু তাদের নামার ইচ্ছে আছে। যদি অবস্থা-সুযোগ সৃষ্টি করতে পারি তাহলে ওই লোকগুলো নেমে আসবে। এসব বিবেচনায় নিয়ে এবার কর্মসূচি ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে দেয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষকে অংশ নিতে দেখা যায় না। তারপরও বিএনপি কীভাবে আশা করে তাদের কর্মসূচি জনসম্পৃক্ত হবে? এমন প্রশ্নে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় মনিটরিং টিমের প্রধান মোহাম্মদ শাহাজাহান আজাদীকে বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের সরকার ভীতি কাজ করে। তাই তারা চুপ করে থাকে। কিন্তু সরকারের কর্মকাণ্ড তারা মেনে নিচ্ছে না। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। এটা তো মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না। কিন্তু মনস্তাত্ত্বিকভাবে জনগণের মনে সরকার এক ধরনের ভীতি তৈরি করে রেখেছে। যে ভয়-ভীতি আছে তা আমাদের অ্যাক্টিভিটিজ দেখে দূর হবে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল-সমাবেশ করব।
একই প্রশ্নের উত্তরে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, সাধারণ মানুষ আসবে সে ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। ২২ আগস্ট থেকে সেটা দেশবাসী নিজ চোখেই দেখতে পারবেন। আমাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ আছে। তৃণমূলের মানুষের সাথে আমাদের সবসময় কথা হয়। তারা আমাদের সমর্থন করেন।
নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করে মিছিল হবে। এটা কিন্তু জনগণের কর্মসূচি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় জনগণের কষ্ট হচ্ছে। জনগণের দল হিসেবে বিএনপি কর্মসূচি দিয়েছে। তাই জনগণ আসবে। গত ১২ আগস্ট আমাদের মিছিলে সাধারণ মানুষ যোগ দেয়। সেদিন নাসিমন ভবন দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কাজীর দেউড়ি মোড় পর্যন্ত লোকসমাগম হয়। কাজেই ৯ দিন ধরে যে মিছিল হবে সেখানেও সাধারণ মানুষ অংশ নিবে। এর আগে রাজধানীতে আমাদের যে সমাবেশ হয়েছে সেখানে লাখ লাখ লোকের সমাগম হয়েছে। সেখানে কিন্তু সাধারণ মানুষও ছিল।
কিন্তু জনগণ তো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেন না। তাহলে কি আপনাদের অন্য কোনো কৌশল আছে? এমন প্রশ্নে শাহাদাত বলেন, এখানে তো জোর করার বিষয় না। জনগণকেই তাদের অধিকারের বিষয়টা বুঝতে হবে। তারা সেটা বুঝতে পারছেনও।
এদিকে জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল ঢাকায় এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, আমাদের ক্ষমতার উৎস বাংলাদেশের জনগণ, অন্য কেউ না। বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচনটা আসুক তখন প্রমাণ পাবেন শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা অপ্রতিরোধ্য, তুঙ্গে। কত উঁচুতে তা নির্বাচনে টের পাবেন। আমাদের প্রমাণ করতে হবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের দলের কেউ নন : আব্দুর রহমান
পরবর্তী নিবন্ধচবিতে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির চেষ্টা মুচলেকা দিয়ে ছাড়