১৫০ মেগাওয়াট শিকলবাহা ডুয়েল ফুয়েল পিকিং পাওয়ার প্লান্টে ১২ গুণ বেশি দামে পাম্প ক্রয় করে প্রায় দুই কোটি ৬০ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এ মামলাটি দায়ের করেন সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী। আসামিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিশ্বাস ভঙ্গ, প্রতারণা ও জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়। মামলায় দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন পাম্প সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স পাওয়ার টেক ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আবদুল আলীম, ১৫০ মেগাওয়াট শিকলবাহা পিকিং পাওয়ার প্লান্টে ওই সময়ের ব্যবস্থাপক (বর্তমানে অবসরে) প্রকৌশলী ভুবন বিজয় দত্ত, নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত পরিচালক-বাজেট) মো. মিজানুর রহমান, রাজশাহী নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেডের প্রধান প্রকৌশলী (উৎপাদন) এএইচএম কামাল, পিডিবির ক্রয় পরিদপ্তরের পরিচালক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বর্তমানে পিআরএল-এ) মো. আবু ইউসুফ, নকশা ও পরিদর্শন পরিদপ্তর-১ এর পরিচালক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বর্তমানে রি-পাওয়ারিং প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক) তোফাজ্জেল হোসেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্টের ইপিসি ঠিকাদার ছিল চীনা প্রতিষ্ঠান মেসার্স সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন এবং জিটি মেইন ইক্যুপমেন্ট (টারবাইন, জেনারেটর, কম্প্রেসার) প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হলো জার্মানির সিমেন্স। মূল প্রস্তুতকারী ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দরপত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ না দিয়ে মেসার্স পাওয়ার টেক ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ডলারে (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় তিন কোটি টাকা, ডলার ৮১ টাকা দরে) তিনটি পাম্প কেনা হয়। অতি জরুরি বিবেচনায় বেশি দামে কেনা হলেও অদ্যাবধি পাম্পগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় গোডাউনে পড়ে আছে।
দুদক অনুসন্ধানে জানতে পারে, কমার্শিয়াল ইনভয়েস ও আমদানিকারকের এলসি অনুযায়ী উক্ত পাম্পগুলোর মূল্য ৩০ হাজার ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ২৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা)। কিন্তু জালজালিয়াতির ও প্রতারণার মাধ্যমে উক্ত যন্ত্রপাতি ৩ লাখ ৬৫ হাজার ডলার দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। দুদকের তথ্য মতে, প্রায় দুই কোটি ৬০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন আসামিরা। পরে অভিযোগ অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ঘটনার সত্যতা পেয়ে মামলার অনুমোদন চেয়ে প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দেন। প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন পেয়ে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী জানান, ১৫০ মেগাওয়াট শিকলবাহা পিকিং পাওয়ার প্লান্টে ১২গুণ বেশি দাম দেখিয়ে সরকারি প্রায় দুই কোটি ৬০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে এখন ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলা তদন্তে অন্য কারো যোগসাজশ ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।