অন্তু ভারি দুষ্টু ছেলে।মায়ের কথা একদম শুনে না। ঠিকমত খায় না,পড়ে না। সে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। সারাদিন তো দুষ্টুমী করেই, বাবা বিকেলে অফিস থেকে এলে বকবক করেই চলে। সেদিন বাবা অফিস থেকে আসার পর যখন চা-নাসতা খেতে বসল,অন্তু তখন বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল, জান বাবা আজ স্কুলে ফাহিম আমাকে খেলায় নেয় নি। আমি ওর সাথে আড়ি দিয়েছি। বাবা হেসে বলল, ঠিক আছে, কালকে আবার ভাব করবে না তো? বাবা জানে অন্তু কারো সাথে বেশিক্ষণ কথা না বলে থাকতে পারে না।অন্তু রেগে বলল, কখনো না।ও এটা পচা ছেলে। ওর সাথে আড়ি, আড়ি, আড়ি।
মা এসে বলল, ঠিক আছে বাবা, এবার কিছু খেয়ে নাও। অন্তু বলল, না খাব না। মা বলল, খেতেই হবে। তুমি দুপুরে ও ভাল করে খাও নি। এই ছেলেকে নিয়ে আর পারি না বাবা। বাবা বলল, অন্তু তুমি লক্ষী ছেলে, মা যা বলছে শোন। না, না, না বলে অন্তু দিল এক দৌড়। মা অন্তুর পিছন পিছন দৌড়াতে লাগল। বাবা ভাবল এই ছেলেকে নিয়ে কি যে করি। সারাক্ষণ লাফালাফি, ঝাপাঝাপি করে। কারো কথা একটু ও শোনে না। তারপর বাবা চায়ে চুমুক দিয়ে পেপারে চোখ রাখল।
সেদিন রাতে অন্তু যখন মায়ের কাছে পড়তে বসল হঠাৎ একটি চড়ুই পাখি ঘরে এসে ঢুকল। অন্তু দেখে তো অবাক। মাকে বলল, মা, মা দেখ, চড়ুইটা কি লাফালাফি করছে। মা তাড়াতড়ি ফ্যানটা অফ করে দিল। অন্তু চড়ুইটার দিকে তাকিয়ে বকবক করেই চলেছে। মা বলল,অন্তু,অনেক হয়েছে। এবার পড়তে বসো। অন্তু চোখ বড় বড় করে বলল, কি করে পড়ব মা, দেখছ না আমি চড়ুইটাকে দেখছি। মা রেগে বলল, অন্তু, চড়ুইটা কানিজে বসে আছে। আগে পড়া শেষ কর। তারপর চড়ুইর সাথে গল্প করো। অন্তু বলল, ঠিক বলছ মা? মা হেসে বলল, হ্যাঁ পড়। তারপর অন্তু পড়া শেষ করার পর চড়ুইটাকে নিয়েই আছে। কখনো বেত দিয়ে গুতো দিচ্ছে, এটা উড়ে যাওয়ার পর হাততালি দিচ্ছে। কখনো টর্চ জ্বালিয়ে চড়ুইটাকে দেখছে কোথায় বসছে। কিছুক্ষণ পর মা এসে বলল, অন্তু খাবে এসো। অন্তু বায়না ধরল আজ বেডরুমে খাবে। চড়ুইটা যদি চলে যায়। মা বলল, দেখছ তোমার ছেলের বায়না। একেক দিন একেক জিনিস নিয়ে ব্যস্ত থাকবে।দিনদিন বেশি চঞ্চল হয়ে উঠছে। বাবা হেসে বলল, চিন্তা করো না। এখনো অল্প বয়স। যখন বুঝতে শিখবে, ঠিক হয়ে যাবে
তখন। মা নিঃশ্বাস ফেলে বললো, কি জানি বাবা কখন ও সব বুঝবে, বলে হাতে ভাতের থালাটা নিয়ে বেডরুমে গেল।অন্তু মাকে দেখে বলল, আচ্ছা মা, চড়ুই রাতে খাবার খাবে না। মা ওর মুখে ভাত দিয়ে বলল, তার চিনতা তোমাকে করতে হবে না। ওদের খাবার ওদের সময়মত খায়।অন্তু ভাত খেতে খেতে বলল, মা, চড়ুই রাতে ঘুমায় না? মা বলল, কেন ঘুমাবে না। একটু পরেই দেখবে ও ঘুমাচ্ছে। অন্তু বলল, মা দেখ দেখ চড়ুইটা উড়ে কোথায় চলে যাচ্ছে। মা বলল, আরে বাবা তুমি বারবার ওর গায়ে টর্চের আলো ফেলছ। ও বিরক্ত হয়ে অন্য জায়গায় গিয়ে বসছে। আগে খাওয়াটা শেষ কর তো?অন্তু দেখল চড়ুইটা কানিজে যেখানে জিনিস পত্র রাখা আছে সেখানে চুপটি করে বসে আছে।
রাতে অন্তু যখন ঘুমাতে আসল তখন চড়ুইটাকে দেখল না। তখন বাবাকে বলল, বাবা চড়ুইটা কোথায় গেল? দেখতে পাচ্ছি না। বাবা বলল, হয়ত সে নিজের জায়গায় চলে গেছে।অন্তু বলল,কেন চলে গেল? বাবা বলল,বাঃ রে আমাদের যেমন পরিবার আছে, ওদের ও আছে। সে তার বাবা মায়ের কাছে চলে গেছে। অন্তু কাঁদ কাঁদ স্বরে বলল, তাহলে সে এল কেন? বাবা বলল,আহা পথ ভুল করে আসছে আর কি। এবার ঘুমাও। কালকে সকালে ব্যালকনিতে দেখবে সব চড়ুই একসাথে কিচিরমিচির করছে। অন্তুর ভাবনা তবুও গেল না। সে ভাবনা নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ল। মা রাতে ফ্যান অন করে নি। যদি চড়ুইটা ভিতরে কোথাও থেকে থাকে তাহলে ফ্যান চললে মারা পড়বে। সকালে অন্তু ঘুম থেকে উঠে চড়ুইটাকে অনেক খুঁজল কিন্তু দেখতে পেল না। চিন্তিত মনে বাবার সাথে স্কুলে চলে গেল।
মা ঘরদোর গোছগাছ করার সময় ভালো করে দেখল, কোথাও চড়ুইটাকে দেখতে পেল না।ভাবল হয়ত সকাল হওয়ার পর বাইরে চলে গেছে। এরপর মা যখন ঘর মুছল তখন ঘরের ফ্যানটা অন করে
দিল। ফ্যানটা অন করার সাথে সাথেই হঠাৎ চড়ুইটা ফ্যানে কাটা পড়ে ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেল। মা অবাক হয়ে গেল। সারা ঘরে খুঁজেও চড়ুইটাকে এতক্ষণ পায় নি।এখন সে কোথা থেকে আসল? তাড়াতাড়ি চড়ুইটাকে নিয়ে মা দেখল সেটা মারা গেছে। বাইরে নিয়ে সেটাকে ফেলে দিল। মায়ের মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। এটা অন্তুকে বলা যাবে না। তাহলে সে খুব কষ্ট পাবে।মা সাথে সাথে বাবাকে ফোন করলো, হ্যালো,জানো চড়ুইটা মারা গেছে। বাবা বলল, কিভাবে? মা পুরো ঘটনাটা বাবাকে বলল। বাবা বলল, আচ্ছা শোন,অন্তুকে এটা বলো না। তাহলে ওর কচি মনে আঘাত লাগবে। মা বলল,হ্যাঁ,হ্যাঁ ওকে বলা যাবে না। বাবা বলল, বরং ও স্কুল থেকে আসলে ব্যালকনিতে যে চড়ুই গুলো আসে, বলবে ঐ চড়ুইটা সেখানে আছে।মা বলল, আচ্ছা ঠিক আছে এখন রাখছি।
অন্তু স্কুল থেকে আসার পর মাকে জিজ্ঞেস করল, মা চড়ুইটা কে দেখেছ? মা বলল,হ্যাঁ। ওই যে দেখ ব্যালকনিতে অন্যদের সাথে বসে গল্প করছে। অন্তু অবাক হয়ে বললো, ওরা ও গল্প করে? আমি তো আমার বন্ধুকে কালকে চড়ুইর ঘটনাটা সব বলেছি।জান মা, আমার বন্ধু বিশ্বাসই করতে চায় নি যে চড়ুই আমাদের ঘরে সারারাত ছিল। মা বলল, আচ্ছা বাবা পরে শুনব। এখন জামা কাপড় ছেড়ে গোসল করে ভাত খেতে এস। এরপর থেকে অন্তু চড়ুইদের সাথে বন্ধুত্ব করে ফেলল। ওদেরকে খাবার দেয়। চুপ করে ওদের কিচিরমিচির শব্দ শুনে। ওর চঞ্চলতা অনেকটা কমে গেছে। মা ও একটু নিশ্চিনত হল। চড়ুই গুলোও ওর সাথে ভাব জমিয়ে ফেলল। সন্ধ্যার পর প্রতিদিন ওদের বাথরুমের জানালায় এসে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকাল হলে উড়ে ব্যালকনিতে বসে। অন্তু এখন ভালো হয়ে গেছে। মার কথা শুনে। না হলে যে চড়ুইদের সাথে সময় কাটাতে পারবে না। স্কুলে গিয়ে প্রতিদিন বন্ধুদের সাথে চড়ুইর গল্প করে। মাঝে মাঝে বন্ধুরা কৌতুহল হয়ে অন্তুর বাসায় আসে চড়ুই দেখার জন্য। ওরা এতগুলো চড়ুই দেখে অবাক
হয়ে যায়।অন্তুদের ব্যালকনিতে নানারকম ফুলের গাছে চড়ুইরা বসে কিচিরমিচির করে। চড়ুইদের এই শব্দ অন্তুর বেশ ভালো লাগে।