ছবি কথা বলে তার নিজস্ব ভাষায়। সেটিকে নিজের মতো করে দেখার, ভাববার ক্ষমতা রাখেন একজন আলোকচিত্রী কিংবা একজন চিত্রশিল্পী। ছবির ভেতরের সত্তাকে নিজের মনের আয়নায় দাঁড় করিয়ে কাছ থেকে দেখার চেষ্টায় অথবা রঙ তুলির আঁচড়ে প্রকৃতির লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্যকে তুলে আনেন। সাধারণ চোখে যা আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়, তাই তারা ধরে ফেলেন নিজস্ব কারিশমায়। ফলে আমাদের প্রতিদিনের চেনা জগৎকে আমরা নতুন করে দেখি। মানুষের যাপনের ছবিতেও দেখি জীবনের নানা কাহিনি। এই সব কাহিনির সামনে দাঁড়িয়ে আমরা শুধু মুগ্ধ হই। শিল্পের শিল্পায়নে চলে নিরন্তর চেষ্টা, সেই চেষ্টার ফলশ্রুতি প্রদর্শিত ছবি। গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে এবং আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ চট্টগ্রামের সহযোগিতায় আয়োজিত তিনজন শিল্পীর আলোকচিত্র ও চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনকালে অতিথিবৃন্দ এসব কথা বলেন।
খ্যাতিমান ভাস্কর এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক শিল্পী অধ্যাপক অলোক রায় ‘প্রকৃতি’ শীর্ষক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, চট্টগ্রামের পরিচালক ড. সেলভাম থোরেজ, আলোকচিত্র শিল্পী মারি-কারোলিন সঁলিজ, পরিবেশ এবং বায়োফিলিক স্বস্তিকা মুখার্জি এবং আলোকচিত্র শিল্পী এবং ফটো ব্যাংক প্রতিষ্ঠাতা শোয়েব ফারুকী। সভাপতিত্ব করেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক প্রণব মিত্র চৌধুরী। বক্তব্যের পর ছিল পাহাড়ি নৃত্য।
গতকাল প্রদর্শনী ঘুরে দেখা গেছে শিল্প রসিক শিক্ষার্থীদের ভিড়। বিশেষ করে এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটির বিদেশি শিক্ষার্থীদের কৌতুহল ছিল চোখে পড়ার মতো। চারদিকে সারি সারি ছবি ঝোলানো। কোথাও প্রকৃতির রূপকথা আবার কোথাও জীবনের এক একটি প্রতিচ্ছবি। বিমুগ্ধ হয়ে এক নজরে ছবির দিকে তাকিয়েই আছেন দর্শকরা। ছবিও যে বাস্তবতার কথা বলে, জীবনের কথা বলে, প্রকৃতির কথা বলে তা দেখিয়ে দিলেন শিল্পী ত্রয়ী মারি কারোলিন সঁলিজ, স্বস্তিকা মুখার্জী এবং জেকন উদ্দিন। এ তিন শিল্পী দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃতি এবং জীব বৈচিত্রের উপর নিবিড়ভাবে কাজ করছেন। মারি কারোলিন সঁলিজের স্বামী ছিলেন বাংলাদেশে বিদেশি রাষ্ট্রদূত। স্বামীর সাথে দীর্ঘদিন বাংলাদেশে থেকেছেন। স্বস্তিকা থাকেন কলকাতায়। জেকন উদ্দিন বাস করেন প্যারিসে। প্রদর্শনীতে রয়েছে আলোকচিত্র এবং তিন শিল্পীর শিল্পকর্ম। প্রকৃতির নান্দনিকতা এবং প্রকৃতির বিরুদ্ধে হুমকি প্রতিফলিত এ প্রদর্শনীতে, সাথে এক নৈতিক বাণী, ‘প্রকৃতি থেকে মানুষ, প্রকৃতির অংশ মানুষ এবং প্রকৃতিতেই মানুষের প্রত্যাবর্তন। প্রদর্শনী আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সকাল দশটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।